ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বন্দিদশা থেকে ফিরে অভ্যর্থনায় ভাসলেন সাংবাদিক লাউ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
বন্দিদশা থেকে ফিরে অভ্যর্থনায় ভাসলেন সাংবাদিক লাউ দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে বন্ধু ও প্রিয়জনের সান্নিধ্যে লাউ

ঢাকা: ফটো সাংবাদিক লাউ হন মেং সব লাইমলাইট টেনে নিলেন নিজের দিকে। মিয়ানমারের কারাগারে টানা দুটি মাস বন্দিদশা কাটিয়ে মুক্ত লাউ শুক্রবার নিজ দেশ সিঙ্গাপুরের মাটিতে পা-রাখতেই পেলেন বীরোচিত অভ্যর্থনা। চাঙ্গি বিমানবন্দরে নেমে টার্মিনাল ধরে এগিয়ে যাওয়ার সময় বন্ধু, পরিবার পরিজন আর ভক্তরা তুমুল জয়ধ্বনি আর  করতালি দিয়ে অভিনন্দিত করলেন ৪৩ বছর বয়সী  সাহসী এই সাংবাদিককে।

অ্যাডাম রোডের প্রেসবাইটেরিয়ান চার্চ থেকে প্রায় জনচল্লিশেক বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ী তাকে বরণ করে নিতে বিমানবন্দরে গিয়ে হাজির হন। এসময় তাদের হাতে শোভা পাচ্ছিল "প্রশংসা ঈশ্বরের, জন্মভূমিতে সুস্বাগতম লাউ" লেখা ব্যানার শোভা পাচ্ছিল।

স্ট্রেইট টাইমসসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, লাউয়ের সবচে কাছের মানুষ স্ত্রী ও ১ বছর বয়সী ছেলেও উপস্থিত হয়েছিল সেখানে।

স্ত্রী পুত্রের সঙ্গে আবেগঘন আলিঙ্গন শেষে দ্য স্ট্রেইট টাইমসকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় লাউ বলেন, ‘দেশে ফিরতে পেরে খুব খুশি আমি। সবকিছুর জন্য আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনিই সবকিছু সম্ভব করেছেন। ’

আর লাউয়ের খৃষ্টীয় দীক্ষাগুরু ক্রিস চিয়া (৫৮) বলেন, ‘ওকে ফিরে পাওয়াটা বড়ই আনন্দের... ওর ওপর দিয়ে খারাপ সময়ের ধকল গেছে। "

মিয়ানমারের পুরনো রাজধানী ইয়াঙ্গুন থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বদেশে পা রাখেন লাউ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কারাগারে তার সহবন্দি মালয়েশীয় (বর্তমানে সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা) প্রামাণ্য চিত্রনির্মাতা মক চই লিন (৪৭)। তুরস্কের একটি রেডিও টিভির জন্য প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের জন্য জন্য এরা দুজন মিয়ানমারে গিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তারা দু’জন ড্রোন উড়িয়ে সচিত্র তথ্য সংগ্রহে নামেন। এ কারণে তাদের আটক করে জেলে পোরা হয়।

লাউ সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও মক চই লিন কোনো মন্তব্য না করেই তড়িঘড়ি করে বিমানবন্দর এলাকা ত্যাগ করেন।

গত ২৭ অক্টোবর তারিখে মিয়ানমারের নতুন রাজধানী নেইপিতোর অদূরে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে পুলিশ তাদের আটক করে। পরে সংক্ষিপ্ত এক বিচারের মাধ্যমে দু’মাসের আটকাদেশ দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। তাদের দোভাষী ও গাড়িচালক হিসেবে কাজ করায় মিয়ানমারের স্থানীয় সাংবাদিক অং নাইং সোয়ে এবং হ্লা তিনকেও কারাগারে পোরা হয়।

এই চারজনের সাজার মেয়াদ ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর কথা ছিল। এছাড়া কাস্টম ও ইমিগ্রেশন-সংশ্লিষ্ট অভিযোগও দায়ের করার কথা ছিল। কিন্তু মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সে পথে না গিয়ে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই বৃহস্পতিবার হঠাৎই তাদের মুক্তিদানের ঘোষণা দেয়। নতুন দুটি অভিযোগ আনা হলে তাদেরকে অন্তত ৩ থেকে ৫ বছর কারাগারে পচে মরতে হতো—এমন আশংকা করা হচ্ছিল।  

চারজনকেই শুক্রবার সকাল ৭টায় কারাগার থেকে ছাড়া হয় বলে তাদের পক্ষের আইনজীবী খিন মাউং জ স্ট্রেইট টাইমসকে জানান। অভিবাসন কর্মকর্তারা দুই বিদেশিকে সেখান থেকে সোজা বিমানবন্দরে নিয়ে যান।

আর আটক দুই মিয়ানমার নাগরিককে জেলগেটে তাদের পরিবার পরিজনের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এই চারজনের সাজা ও অভিযোগের মাত্রা না বাড়িয়ে হঠাৎই মুক্তি দেবার কারণ ব্যাখ্যা করে সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে মিয়ানমার পুলিশের তরফে বলা হয়,  মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলার ইচ্ছা এই চারজনের ছিল না। তাছাড়া মিয়ানমার সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে চায়।

চারজনের এই দলটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ করছিল তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বেতার টার্কিস রেডিও ও টিভিসংস্থা টিআরটির হয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।