ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

ফিরে দেখা ২০১৫ (পর্ব ১)

ঘটন-অঘটনে আরও উত্তপ্ত বিশ্ব

রাজিউল হাসান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
ঘটন-অঘটনে আরও উত্তপ্ত বিশ্ব ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: নতুন বছর কড়া নাড়ছে বিশ্ববাসীর দরজায়। নানা ঘটন-অঘটন নিয়ে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিতে চলেছে ২০১৫ সাল।

ভবিষ্যতের নাগরিকরা যখন ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখবেন, এ বছরের পাঠে তারা অঘটনটাই বেশি খুঁজে পাবেন। ভালো কিছু ঘটলেও যেন তার সঙ্গে হাতছানি দিচ্ছে অমঙ্গলের ছায়াও।   ইরানের সঙ্গে বিশ্ব শক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তি বা প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ-২১ সম্মেলন এ বছরের অন্যতম ইতিবাচক ঘটনা হলেও এগুলোর যথার্থ বাস্তবায়ন নিয়ে এখনও রয়েছে সংশয়।

বাংলানিউজ পাঠকদের জন্য ২০১৫ সালে ঘটে যাওয়া এমনই কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার চুম্বক অংশ নিয়ে এই আয়োজন।


শরণার্থী সংকট
বিশ্বের যেকোনো বছরের ইতিহাসকে হার মানাবে ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকট। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এ বছর সারা বিশ্বে যুদ্ধ, সহিংসতা ও নিপীড়নে ছয় কোটির বেশি মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এর অর্থ বিশ্বে প্রতিদিন প্রতি ১২২ জনে একজন ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, বিশ্বে প্রতিদিন ৪ হাজার ৬০০ জন মানুষ নতুন করে শরণার্থী জীবন বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এরই মধ্যে প্রায় দশ লাখ মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন। তুরস্কে অপেক্ষমাণ আছেন আরও অন্তত বিশ লাখ মানুষ। প্রায় প্রতিদিনই ঝুঁকিপূর্ণভাবে সাগরপাড়ি দিতে গিয়ে নৌকা ডুবে মারা পড়ছেন কেউ না কেউ। এর মধ্যে গত ২ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে শিশু আয়লান কুর্দি। প্রাণ দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিশ্ব মানবতাকে। গত ১ সেপ্টেম্বর বাবা-মা, ভাইসহ বেশ কয়েকজন সিরীয় শরণার্থীর সঙ্গে এজিয়ান সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় সাগরগর্ভে প্রাণ হারায় আয়লান, তার ভাই ও মা।

এদিকে, এখন পর্যন্ত শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় শীর্ষে রয়েছে তুরস্ক। দেশটিতে এ মুহূর্তে কমপক্ষে ২০ লাখ শরণার্থী অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হয়। এরপরই রয়েছে জার্মানি। ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১ লাখ ৫৯ হাজার মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে দেশটি, যা ২০১৪ সালের পুরো বছরের প্রায় সমান। কিন্তু এরপরই সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জার্মানি চলতি বছরের শেষ নাগাদ দশ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এক্ষেত্রে দেশটির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের ভূমিকা অগ্রগণ্য বলে স্বীকার করেন সবাই।


ইসলামিক স্টেট
চলতি দশকে বিশ্বে আতঙ্করূপে আবির্ভূত হওয়া জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ২০১৫ সালে যেমন প্রচণ্ড মার খেয়েছে, একইভাবে সফলতাও অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তথ্য ও বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান আইএইচএস’র মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক একটি পর্যবেক্ষক দল যদিও বলছে, সংগঠনটি এ বছর ব্যাপক হারে সঙ্কুচিত হয়েছে, তারপরও তাদের সিরিয়ার ঐতিহাসিক পালমিরা শহর ও ইরাকের সর্ববৃহৎ প্রদেশ আনবারের রাজধানী রামাদি দখল করে নেওয়াটা কম কিছু নয়। (যদিও কয়েকদিন আগে রামাদি ফের দখল করে নেয়ার ‍দাবি করেছে বাগদাদ। তবে তাদের দাবি এখনও প্রতিষ্ঠিত নয়)।

হত্যা-গণহত্যার বিচারে আইএস যেন সর্বকালের বর্বরতাকেও অতিক্রম করে গেছে। খাঁচায় বন্দি করে জর্দানের পাইলটকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা বা ২১ মিশরীয় খ্রিষ্টানকে শিরশ্ছেদ এ বর্বরতার উদাহরণমাত্র।


তেলের দরপতন
২০১৫ সালের শুরু থেকেই অপরিশোধিত তেলের দরে ভাটা দেখা দেয়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ব্যারেল প্রতি প্রায় ৩৭ ডলারে (২ হাজার ৯০০ টাকা) বিক্রি হচ্ছে এ পণ্য। অপরিশোধিত তেলের দরপতনে ২০১৫ সাল এক যুগেরও বেশি সময়ের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আর এর জন্য বিশ্বের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেককেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাজার ধরে রাখতে সংগঠনটির নিয়ন্ত্রক দেশ সৌদি আরবের স্বেচ্ছাচারিতা এ দরপতনের কারণ বলে মনে করছেন তারা।


এশিয়ার স্টক মার্কেটে ধস
‘ব্লাক মানডে’র প্রভাবে গত ২৪ আগস্ট (সোমবার) মাথায় হাত পড়ে চীনা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। এদিন সূচক সাড়ে ৮ শতাংশ নেমে ৩,২০৯ দশমিক ৯১ পয়েন্টে গিয়ে দাঁড়ায়। ২০০৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির পর এটাই একদিনে সূচক পতনের সবচেয়ে বড় রেকর্ড। ওইদিন সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জে একদিনে সূচকের পতন ঘটে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।

চীনের পাশাপাশি ধস দেখা দেয় ভারতের শেয়ারবাজারেও। ভারতে বিএসই সেনসেক্স-এ সূচকের পতন ঘটে ১,৬২৫ পয়েন্ট। দিনের শেষে ২৫,৭৪২ পয়েন্টে দাঁড়ায় মূল্যসূচক। নিফটিতেও ৪৯১ পয়েন্টের পতন ঘটে। এক দিনে ভারতের বিনিয়োগকারীদের লোকসান দিতে হয় সাত লাখ কোটি রুপি। ভারত ছাড়াও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের সবগুলো বড় বাজারেই সেদিন এশিয়ার এ ধসের ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

পরমাণু চুক্তি
তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় দফায় দফায় আলোচনা শেষে গত ১৪ জুলাই চুক্তিতে পৌঁছায় ইরান এবং জাতিসংঘের পাঁচ স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি (ছয় বিশ্বশক্তি)। ইরানের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রসহ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতেও এ চুক্তির প্রভাব ব্যাপক।

গত ২০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র সময় সকালে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদে চুক্তির পক্ষে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবটি পাসে সম্মতি দেয় নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য রাষ্ট্রই।

এ চুক্তির ফলে অন্তত ১০ বছরের জন্য স্পর্শকাতর পারমাণবিক কর্মসূচি স্থগিত রাখতে হবে ইরানকে। সেই সঙ্গে সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা ১৯ হাজার থেকে কমিয়ে ৬ হাজারে নামিয়ে আনতে হবে, আর ইউরেনিয়ামের মজুদ কমিয়ে আনতে হবে। এর বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে তুলে নেওয়া হবে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা। যদিও এই চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়ন কবে নাগাদ হবে সে ব্যাপারে কোনো আলো দেখাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষই।


নেপাল ভূমিকম্প
গত ২৫ এপ্রিল তীব্রভাবে কেঁপে ওঠে হিমালয়কন্যা নেপাল। রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এ কম্পনের পর আরও বেশ কয়েকটি শক্তিশালী পরাঘাত আঘাত হানে দেশটিতে। শুধু তাই নয়, পার্শ্ববর্তী ভারত ও বাংলাদেশেও এ কম্পন অনুভূত হয়। এই অঞ্চলে স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে নেপালে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। আহত হন ২৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নেপালের আশি লাখ বাসিন্দা। শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের পর পরবর্তী এক মাসেরও বেশি সময় দফায় দফায় চার শতাধিক পরাঘাত অনুভূত হয়।


মক্কায় ক্রেন দুর্ঘটনা ও মিনায় হজ ট্রাজেডি
গত ২৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিনার বড় জামারাতে পদদলিত হয়ে ২ হাজার ৪১১ হাজির মৃত্যু হয়। এছাড়া নিখোঁজ আহত হন আরও অনেকে। এ ঘটনায় সর্বশেষ ৬৭ জন বাংলাদেশি হাজির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।



এদিকে, গত ১১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে সৌদি আরবের মক্কায় পবিত্র মসজিদ আল হারামের (গ্র্যান্ড মসজিদ) বর্ধিতাংশের নির্মাণ কাজের সময় ছাদ থেকে ক্রেন ভেঙে পড়ে ১০৭ জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও ২ শতাধিক। আহতদের মধ্যে ৪০ জন বাংলাদেশি।

(চলবে: পরবর্তী দুই পবে সমাপ্য)

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।