ইসরায়েল-ইরান সংঘাত ঘিরে যখন মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা চরমে, তখন একের পর এক পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কখনো তিনি শান্তিপূর্ণ সমাধানের ইঙ্গিত দিচ্ছেন, আবার কখনো দিচ্ছেন সামরিক শক্তি প্রয়োগের হুমকি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই দোদুল্যমান অবস্থান আসলে ইরানের ওপর একধরনের মানসিক চাপ তৈরির কৌশল। তাদের ভাষায়, এটি ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের’ই অংশ, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে চায়—অর্থনৈতিক স্থিতি বজায় রাখা এবং সরাসরি যুদ্ধে জড়ানো এড়ানো।
অথচ এই সুযোগেই ইসরায়েল এগিয়ে নিচ্ছে নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা, যার কেন্দ্রে রয়েছে নেতানিয়াহুর টিকে থাকার লড়াই এবং গাজা সংকট থেকে বিশ্বমানসিকতার দৃষ্টি ঘোরানোর প্রয়াস।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরস্পরবিরোধী মন্তব্যগুলো আসলে ইরানের বিরুদ্ধে ‘মানসিক যুদ্ধের’ অংশ। এমনটি মনে করেন বিশ্লেষক আদেল আবদেল গাফার।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক এই গবেষক বলেন, ‘পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে, কিন্তু আমি মনে করি শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান এই সংঘাত যেন থেমে যায়। কারণ যদি মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা হয় কিংবা হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তা মার্কিন অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক বাজারের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ’
গাফার বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ধরনের যুদ্ধ ট্রাম্পের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের পক্ষে সহায়ক নয়। তবে ইসরায়েলের নিজস্ব রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এর মধ্যে আছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক টিকে থাকার লড়াই এবং নিরবচ্ছিন্ন যুদ্ধ পরিস্থিতি ধরে রাখার অভিপ্রায়।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের অন্য উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে ইরানে ‘শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন’ এবং বিশ্বের দৃষ্টি গাজা সংকট থেকে সরিয়ে নেওয়া।
‘আমরা দেখছি দুর্ভিক্ষকে এখন যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে—যা অবশ্যই যুদ্ধাপরাধ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন বিশ্বের দৃষ্টি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের দিকে, গাজার মানবিক সংকট থেকে সরে গেছে,’—বলেন গাফার।
সবশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক সমস্যার একটি বাস্তব ও চূড়ান্ত সমাধান চান। চলমান সংকটের মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ইরানের সঙ্গে আলোচনায় পাঠাতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
টানা পঞ্চম দিনের মতো ইসরায়েল-ইরান আকাশযুদ্ধ চলতে থাকা অবস্থায় কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলন শেষে সোমবার মধ্যরাতে দেশ ছাড়ার সময় ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। তার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ প্রকাশ করেন সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদক।
সম্মেলন চলাকালেও তিনি তেহরানের বাসিন্দাদের শহর ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এর আগে, ইসরায়েল কি যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়াই ইরানের পারমাণবিক হুমকি দমন করতে পারবে কিনা—এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, সেটা কোনো বিষয় নয়। কিছু একটা ঘটবে।
আরও আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরান আলোচনায় আগ্রহী, তবে তাদের উচিত ছিল ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা শুরু করা।
জি-৭ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে রোববার হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি মনে করি একটি সমঝোতার ভালো সম্ভাবনা আছে। তিনি আরও বলেন, কখনো কখনো তাদের নিজেদের মধ্যেই লড়াই করে বিষয় মীমাংসা করতে হয়।
এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের “জড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে”। তার ভাষায়, এটা সম্ভব যে আমরা এতে জড়াতে পারি। যদিও তিনি পরিষ্কার করে বলেন, আমরা এখনো সরাসরি এই সংঘাতে জড়িত নই।
এর আগে ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, আজ (শনিবার) রাতে ইরানে যে হামলা হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে যদি ইরান আমাদের ওপর সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আক্রমণ চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী এমন শক্তি প্রয়োগ করবে, যা ইতিহাসে আগে কখনও দেখা যায়নি।
আরএইচ