ভারতের দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের মালখানা (প্রমাণ সামগ্রী সংরক্ষণের ঘর) থেকে প্রায় ৮০ লাখ রুপি নগদ এবং দুটি স্বর্ণের বাক্স চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন এক হেড কনস্টেবল। এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় পুলিশের ভেতরের সবচেয়ে গুরুতর নিরাপত্তার লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার কনস্টেবলের নাম খুরশিদ। তিনি স্পেশাল সেলের লোধি রোডে অবস্থিত অ্যান্টি–টেরর ইউনিটের মালখানায় দ্বিতীয় দায়িত্বে ছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৪৫ দিনের মধ্যে অন্তত দুবার মালখানায় ঢুকে চুরির ঘটনা ঘটান তিনি।
হিন্দুস্তান টাইমনের খবরে বলা হয়েছে, পুলিশ সদস্য খুরশিদ প্রথমবার সহজেই চুরির ঘটনাটি ঘটান। দ্বিতীয়বার আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে তিনি চুরির ঘটনাটি ঘটান গত শনিবার।
পুলিশ জানিয়েছে, খুরশিদ নিজের দায়িত্ব ও জ্যেষ্ঠতার ব্যবহার করে মালখানার নকল চাবি তৈরি করেন। মালখানার পুরো কার্যক্রম সম্পর্কে জানায় তিনি সুযোগ বুঝে চুরি করেন।
ধারণা করা হচ্ছে, ১৮ মাসের দায়িত্বকালীন তিনি একাধিকবার চুরি করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে মালখানার পূর্ণাঙ্গ অডিট শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ বলছে, গত শনিবার ভোরে চুরির পর অসাবধানতাবশত মালখানার দরজা খোলা রাখেন খুরশিদ। সকালে কর্মীরা এসে খোলা দরজা দেখে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন এবং তদন্ত শুরু হয়।
লোধি রোডে অবস্থিত বিশেষ সেলের ঘাঁটিটি তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রয়েছে। প্রবেশপথে নাগাল্যান্ড পুলিশ, অভ্যন্তরে বিশেষ সেলের সশস্ত্র প্রহরা ও সার্বক্ষণিক সিসিটিভি নজরদারির মধ্যেও কীভাবে খুরশিদ মালখানায় ঢুকলে, সেটি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
স্পেশাল সেলের এক কর্মকর্তা জানান, চুরির ঘটনাটি ঘটে শনিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে ৩টার মধ্যে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ২৪ মে খুরশিদকে উত্তর–পূর্ব জেলার থানায় বদলি করা হলেও বাহ্যিক নিরাপত্তাকর্মীদের তা জানানো হয়নি। ফলে তিনি নকল চাবি নিয়ে সহজেই মালখানায় ঢোকেন। ওই সময় সেখানকার ইনচার্জ ঘুমিয়ে ছিলেন অথবা অনুপস্থিত ছিলেন। এ সুযোগে খুরশিদ কয়েক বান্ডিল টাকা এবং স্বর্ণালঙ্কারে ভর্তি দুইটি বাক্স নিয়ে যান। কিন্তু তাড়াহুড়ায় তিনি মালখানার দরজা বন্ধ করতে ভুলে যান। শনিবার সকালে দরজা খোলা পাওয়া গেলে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কর্তৃপক্ষ।
এত বড় চুরির ঘটনা সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল দক্ষিণ জেলার থানায় বিষয়টি জানায়নি কিংবা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে রিপোর্ট করেনি। বরং নিজেদের থানায় একটি এফআইআর রেজিস্টার করে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, খুরশিদ ২০২৪ সাল থেকে স্পেশাল সেলের নর্দার্ন রেঞ্জ ইউনিটে কর্মরত ছিলেন এবং সেখানে মালখানা ইনচার্জের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ধারণা করা হচ্ছে, প্রথম চুরিটি ঘটান এক মাস আগে, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এবং অপ্রয়োজনে ব্যবহৃত প্রমাণাদি নিয়ে যান। এরপর বদলির আবেদন করেন এবং বদলি হওয়ার কয়েক দিনের মাথায় দ্বিতীয়বার চুরির জন্য ফেরত আসেন।
সিসিটিভি ফুটেজ, স্টাফ বদলির তালিকা ও অন্যান্য রেকর্ড বিশ্লেষণ করে তাকে শনাক্ত করা হয় এবং উত্তর–পূর্ব জেলায় তার নতুন কর্মস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করেন। বর্তমানে তাকে রিমান্ডে রাখা হয়েছে।
এদিকে, যারা সম্প্রতি মালখানায় থেকে বদলি নিয়েছেন, তাদেরও তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে। তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, খুরশিদের সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারেন বা অন্তত চুরির বিষয়টি জানতেন।
দিল্লি পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা স্পেশাল সেলকে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে যারা নিরাপত্তা গাফিলতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এমজে