গত এপ্রিলে কাশ্মীরের পহেলগাঁয়ে বন্দুক হামলার পর অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় ভারত সরকার। বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান পরিচালনা করে বহু অবৈধ অবস্থানকারীদের আটকও করা হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস দাবি করছে, দিল্লি পুলিশের হাতে আটক ৫২০ বিদেশির মধ্যে ৪৭০ জন বাংলাদেশি। বাকিদের পুলিশ বিদেশি হিসেবে সনাক্ত করেছে। পরবর্তীতে তাদের হিন্দন বিমানঘাঁটি থেকে বিমানে চড়িয়ে ত্রিপুরার আগরতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার স্থল সীমান্ত দিয়ে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত মোট ৭৭০ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে ভারত।
সংবাদমাধ্যমটি এমন দাবি করলেও ‘ফেরত পাঠানো’ এ সংখ্যার সবাই যে বাংলাদেশি, এমন কোনো তথ্য বা প্রমাণ প্রতিবেদনে উপস্থাপন করতে পারেনি।
এদিকে দিল্লি পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালের শেষ দিকে ভারতে অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী ও রোহিঙ্গাদের সনাক্ত এবং আটক করার জন্য একটি যাচাইকরণ অভিযান চালাতে নির্দেশ দেয়। সে বছর ১৫ নভেম্বর থেকে চলতি বছর ২০ এপ্রিলের মধ্যে অন্তত ২২০ অবৈধ অভিবাসী ও ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও অবস্থানকারী ৩০ জন বিদেশিকে দিল্লি পুলিশ আটক করে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
আটক হওয়ারা সবাই-ই যে বাংলাদেশি এমন কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। তবে তাদের আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিসে হস্তান্তর করে পুলিশ। সেখান থেকে রেল ও সড়কপথে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর স্থল সীমান্ত দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পরে কিছু জরুরি পরিস্থিতি দেখা দেয়। ভারতের একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে গত এক মাসে গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটি থেকে প্রায় ৩-৪টি বিশেষ বিমান আগরতলায় যায়। গত ছয় মাসে প্রায় ৭০০ অবৈধ অবস্থানকারীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
প্রাথমিকভাবে, ১৫টি জেলার পুলিশের ডেপুটি কমিশনারদেরকে যাচাই অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী ও রোহিঙ্গাদের আটক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। অভিযান সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানায়, দিল্লি পুলিশের প্রথম ব্যাটালিয়নের একটি দল এবং ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের কর্মকর্তারা ট্রেনে করে আটক অবৈধ অভিবাসীদের পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে যান। এরপর তারা বাসে চড়িয়ে তাদের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাছে হস্তান্তর করে। তারপর তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
খবরে আরও বলা হয়, দিল্লিতে বিজেপি সরকার গঠনের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পুলিশকে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র ভেঙে ফেলার’ নির্দেশ দেন। অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের ভারতে প্রবেশে সহায়তা করে এবং তাদের জাল কাগজপত্র পেতে সহায়তা করে, এমন নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তের মাত্রা বাড়াতে এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হয়।
কারা অবৈধ অভিবাসীদের ভারতে প্রবেশের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে, ভারতে বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করেছে, জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিয়েছে, ঠিকানার প্রমাণ যোগাড় করেছে, দিল্লিতে চাকরির ব্যবস্থা করেছে এবং এমনকি থাকার ব্যবস্থাও করেছে, তা সনাক্ত করতে জেলা পুলিশ, ক্রাইম ব্রাঞ্চ ও স্পেশাল সেল একাধিক এফআইআর দায়ের করে। দিল্লি পুলিশ প্রায় পাঁচটি অস্থায়ী হোল্ডিং সেন্টার তৈরি করে। তাদের ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করতে ও একটি বিশেষ বিমানে অবৈধ অভিবাসীদের আগরতলা বিমানবন্দর এবং পশ্চিমবঙ্গে নামিয়ে দিতে বলা হয়।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, দিল্লি পুলিশের পর্যালোচনা করা ৩৪ হাজার ২৬৫ জন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী সন্দেহভাজন ব্যক্তির মধ্যে ৩৩ হাজার ২১৭ জনের নথিপত্র আসল বলে প্রমাণিত হয়। ২৭৮ জনের নথি যাচাই এখনো প্রক্রিয়াধীন।
এমএইচডি/এমজে