ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

বিশ্ব মেতেছে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
বিশ্ব মেতেছে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে

থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষর প্রথম প্রহরে উৎসব উদযাপনে মেতেছে গোটা বিশ্ব। পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় নানা আয়োজন।

থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে পুরো বিশ্ব থাকে উচ্ছ্বসিত। যে যেভাবে পারে তার মতো করেই নতুন বছরকে স্বাগত জানায়।

বর্ষবরণের উৎসব বিভিন্ন জাতি-গোত্র ও দেশ ভেদেও ভিন্ন হয়। যেমন- ডেনমার্কে প্লেট ভেঙে, ইকুয়েডরে কাকতাড়ুয়া পুড়িয়ে কিংবা রোমানিয়াতে পশুর সঙ্গে কথা বলে স্বাগত জানানো হয় নতুন বছর।

এছাড়াও মহাধুমধামে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের জন্য বছরের পর বছর সুনাম ধরে রেখেছে সারাবিশ্বের কিছু শহর। ফলে এসব স্থানে পর্যটকরা বছরের শেষ প্রান্তে ভ্রমণে বের হন। নিউ ইয়ার কাউন্টডাউন থেকে শুরু করে আতশবাজির খেলা ও নানান রঙে-ঢঙে নতুন বছরকে বরণের মুহূর্ত মনে রাখার মতো। এর মধ্যে কিছু স্থানে টিকিট কেটে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপভোগ করা যায়। কখনও কখনও মাসখানেক আগেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।  

জেনে নেওয়া যাক, এমন কয়েকটি দারুণ দেশ ও শহরের চিত্র-

সংযুক্ত আরব আমিরাতে
বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন আকাশচুম্বী ভবনের তালিকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরের বুর্জ খলিফা অন্যতম। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের (২ হাজার ৭১৬ দশমিক ৫ ফুট) রেকর্ড ধরে রেখেছে এটি। তার ওপর আরব দেশটির ‘নববর্ষ উদযাপন’ মানেই ব্যতিক্রমী কিছু। দেশটিতে প্রতিবছর ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে দর্শনীয় আতশবাজি, ড্রোন প্রদর্শনী এবং নানা ধরনের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রাখা হয়।

নববর্ষ উদযাপনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি এবার বিশ্বের তিনটি গিনেস রেকর্ড ভাঙার উদ্যোগ নিচ্ছে। শেখ জায়েদ নববর্ষ উদযাপনের সাংগঠনিক কমিটি ইতোমধ্যে নতুন বছর উদযাপনে ‘লোকজ এবং বিনোদনমূলক’ অনুষ্ঠানসূচি হাতে নিয়েছে।

খালিজ টাইমসের খবরে বলা হয়, এবারে ৩ হাজার ড্রোন (আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল) ব্যবহার করে দীর্ঘ ৪০ মিনিট আতশবাজি প্রদর্শনী করা হবে। ‘সংখ্যা ও বিশালতায়’ এটা তিনটি বিশ্ব রেকর্ড ভাঙবে। ড্রোনগুলো আল ওয়াথবা এবং দুবাই শহরের আকাশ আলোকিত করবে।

খবর অনুসারে, ধরন এবং প্রসারতায় এই কর্মসূচি হবে বিশ্বে প্রথম। এবারের নববর্ষে শিশুদের জন্য নাটক, সার্কাস উপভোগ এবং বিভিন্ন গেম খেলার সুযোগ থাকবে।

সিডনি
প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে জাঁকালোভাবেই বরণ করা হয় ইংরেজি নববর্ষ। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। নববর্ষের আগ মুহূর্তে ঘড়ির কাঁটা যখন ঠিক রাত ১২টা ১ মিনিটের ঘরে থাকবে, তখনই সিডনিতে শুরু হবে ‘সর্বকালের সেরা’ আতশবাজি উৎসব।

প্রায় ১০ লাখ মানুষ অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইকনিক ল্যান্ডমার্কগুলোকে আলোকিত দেখতে সিডনি হারবারে থাকবেন। 8 মিনিটের প্রদর্শনীতে ফোটানো হবে ৮ টন আতশবাজি।

সিডনির লর্ড মেয়র ক্লোভার মুর জানিয়েছেন যে, তারা এ বছর সিডনির ‘সর্বকালের সেরা’ নববর্ষ উদযাপন করতে চলেছেন।

তাইপে
তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন হয় দর্শনীয়ভাবেই। শহরের উচ্চতম ভবন ১০১ তাইপে থেকে চোখধাঁধানো আতশবাজি প্রদর্শনী রাতের আকাশ করে তোলে জমকালো। এ দৃশ্যের সাক্ষী হতে ন্যাশনাল ড. সান ইয়াত-সেন মেমোরিয়াল হল এবং জিনাই কমার্শিয়াল ডিস্ট্রিক্টে ভিড় থাকে মানুষের। এছাড়া শহরটিতে আয়োজিত হবে জাঁকজমক সংগীতানুষ্ঠান।

ব্যাংকক
এশিয়ায় রাতের সৌন্দর্য উপভোগ্য এমন শহরের তালিকায় থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থাকে ওপরের সারিতে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভিড়, শোরগোল ও হৈ-হুল্লোড় প্রিয় মানুষদের কাছে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের জন্য জায়গাটি জুতসই। সেন্ট্রাল ওয়ার্ল্ড প্লাজাকে বলা হয় ব্যাংককের ‘টাইমস স্কয়ার’। এখানেই থার্টি ফার্স্ট নাইটে সবচেয়ে বেশি ভিড়ভাট্টা দেখা যায়। আরেকটি জনপ্রিয় স্থান চাও ফ্রাইয়া নদীর তীরে কেনাকাটা ও বিনোদন এলাকা। এখানে রাতের আকাশ উদ্ভাসিত হয় আতশবাজিতে। আর হাজার হাজার মানুষের মুখে থাকে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ধ্বনি। কোলাহল এড়াতে ওয়াত ফো মন্দির হতে পারে জুতসই, যেখানে শায়িত আছেন বুদ্ধ।

মস্কো
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ঐতিহাসিক রেড স্কয়ার বেশ শীতল জায়গা। তবে ইংরেজি নববর্ষ বরণের জন্য উপভোগ্য আতশবাজির প্রদর্শনী হয় এখানে। মস্কোর বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ছাদে বসে আকাশে এই অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। মস্কো থাকাকালীন রুশ বিপ্লবী ভ্লাদিমির লেনিনের সমাধিসৌধ দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না পর্যটকরা। বিশ্বের যেসব সমাধিতে তাদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। সোভিয়েত যুগের কোল্ড ওয়ারের ধ্বংসাবশেষ দেখতেও ভ্রমণপ্রেমীদের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ে।

কেপটাউন
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন বিশ্বের সুন্দর শহরের মধ্যে অন্যতম। আতশবাজির সুবাদে এর সৌন্দর্য বেড়ে যায় আরও। বর্ষবরণ উৎসবের পাশাপাশি পর্তুগিজসহ সুস্বাদু বিভিন্ন দেশের খাবারের স্বাদ নেওয়ার জন্য এই জায়গার জুড়ি নেই। এছাড়া আঙুর ক্ষেতগুলোতে ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য।

লন্ডন
ইংরেজি নববর্ষের আতশবাজি প্রদর্শনী চোখধাঁধানো লাগে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের টেমস নদীর তীরে। পাহাড়ি এলাকা প্রিমরোজ হিল, হ্যাম্পস্ট্রিড হিথের পার্লামেন্ট হিল, গ্রিনউইচ পার্ক ও আলেক্সান্ড্রা প্যালেস থেকে জমকালো রাতের আকাশ উপভোগ করা যায়। টেমস নদীতে পাল তোলা নৌকায় চড়ে বর্ষবরণের অনুভূতি অন্যরকম। শহরের মিলব্যাঙ্ক টাওয়ারের ২৮ ও ২৯ তলায় লন্ডন স্কাইবারে ১২ ঘণ্টার পার্টিতে থাকে শ্যাম্পেন, ডিজে মিউজিক, অফুরান খাবার। লন্ডনে নতুন বছরের ঐতিহ্য হলো পুরনো পানশালায় যাওয়া। এছাড়া ব্রিটিশ রাজপরিবার নিয়ে আগ্রহীরা কেনসিংটন প্যালেসের মতো ঐতিহাসিক জায়গায় বেড়ান, যেখানে রানি ভিক্টোরিয়ার জন্ম হয়েছিল।

রিও ডি জানেইরো
উষ্ণ আবহাওয়ায় সৈকতঘেঁষা রিসোর্টে প্রায় ২০ লাখ মানুষের সঙ্গে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে আগ্রহীরা ভিড় জমায় ব্রাজিলের রিও ডি জানেইরোতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হয় কোপাকাবানা সৈকতে। এখানে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজানোর পাশাপাশি থাকে আতশবাজির প্রদর্শনী। চিরচেনা রিও ঢঙে পার্টি করতে চাইলে পঞ্চাশের দশকে স্থাপিত জোবি বার হতে পারে জুতসই। চোখধাঁধানো দৃশ্য উপভোগের জন্য ছোট আকারের চীনা বুদ্ধ মন্দির ভিস্তা চিনেসা অতুলনীয়।

নিউ ইয়র্ক
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হ্যাপি নিউ ইয়ারে কতটা মেতে ওঠে সবাই তারই সমার্থক যেন নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানে অবস্থিত টাইমস স্কয়ার। প্রায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম হয় এখানে। টাইমস স্কয়ারে এবারও ঐতিহ্যবাহী বল ড্রপ করা হবে। ১৯০৭ সালে শুরুর পর শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন দুই বছর বাদে প্রতিবছর এই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। টাইমস স্কোয়ারের হৈ-হুল্লোড় এড়িয়ে আতশবাজি উপভোগের জন্য ব্রুকলিনের প্রসপেক্ট পার্কে অবস্থিত গ্র্যান্ড আর্মি প্লাজায় যাওয়া যায়। তবে এই দৃশ্য দেখতে হলে অবশ্যই আগে পৌঁছানো চাই। কুড়ি পেরোনো তরুণ বা প্রবীণরা রিসোর্টস ওয়ার্ল্ড ক্যাসিনোতে ভাগ্য পরীক্ষা করেন। জেএফকে বিমানবন্দরের কাছে এই স্থানকে বলা যায় ইংরেজি নববর্ষের পার্টির প্রাণকেন্দ্র।

লাস ভেগাস
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা রাজ্যের লাস ভেগাস শহরে সারাবছর আলোকসজ্জা থাকে। তবে থার্টি ফার্স্ট নাইটে তা আরও জাঁকজমক হয়ে ওঠে। নতুন বছরকে বরণের জন্য রাস্তায় যানবাহনের চলাচল রীতিমতো বন্ধ থাকে এবং পথচারীরা দারুণ উৎসবের সাক্ষী হতে বেরিয়ে পড়েন। মধ্যরাতে বিভিন্ন ক্যাসিনো আতশবাজি প্রদর্শন করে। স্ট্রাটসফেয়ার টাওয়ার থেকে এই দৃশ্য উপভোগ করা যায়। লাস ভেগাসে এ সময় ছুটি কাটানো ব্যয়বহুল, তাই আগেভাগে হোটেল রুম বুক করে রাখা ভালো। শীতকালে রাতে বেশ ঠান্ডা পড়ে এখানে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।