ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

করোনার কারণে চাকরি হারাতে পারেন অর্ধেক আইসিটিকর্মী

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২০
করোনার কারণে চাকরি হারাতে পারেন অর্ধেক আইসিটিকর্মী

ঢাকা: দিন যতই যাচ্ছে ততই জটিল আকার ধারণ করছে করোনা পরিস্থিতি। স্থবির হয়ে পড়েছে বৈশ্বিক ব্যবসা বাণিজ্য। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বার প্রান্তে থেকে যেই তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) ক্যারিয়ার হিসেবে সবথেকে আকর্ষণীয় খাত মনে হচ্ছিল। করোনার কারণে চাকরি হারাতে পারেন সেই খাতেই কর্মরত প্রায় অর্ধেক স্থানীয় পেশাজীবী।

আইসিটিখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং, সফটওয়্যার অ্যান্ড হার্ডওয়্যার, ই-কমার্স এবং ফ্রিল্যান্সিংসহ এই খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১০ লাখ পেশাজীবী।

শুধু চাকরি হারানোই না বরং সামগ্রিকভাবে পেশাই পালটে যেতে পারে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আইসিটি প্রফেশনালসদের; আশংকা আছে এমনও।

উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে প্রায় অর্ধেক লেনদেন কমে আসবে এই খাতে। কারণ অর্ধেক বা তারও বেশি বাজার হারাতে পারে দেশীয় আইসিটি খাত। ফলে কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো কঠিন সিদ্ধান্তে যেতে হতে পারে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বাদ যাবেন না ফ্রিল্যান্সাররাও। ফলে কর্মহীন হবেন এই খাতের পেশাজীবীরা।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বাংলানিউজকে বলেন, কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো সিদ্ধান্ত সব থেকে পরের এবং শেষ সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। কিন্তু পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে অনেক উদ্যোক্তার কাছেই ভিন্ন কোনো উপায় থাকবে না।  

ইতোমধ্যেই অনেকেই বলছেন। তবে হয়তো আরও দুই-তিন মাস চাপ সামলানো যাবে। এরপর আর পারা যাবে না। শুধু সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার খাতেই ৫০ হাজার থেকে এক লাখ কর্মী চাকরি হারাতে পারেন। অথচ এসব কর্মীরা দীর্ঘসময় এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান অনেককে প্রশিক্ষণ দিয়ে আজকের অবস্থানে এনেছে। তাদের কোনো প্রতিষ্ঠানই হারাতে চাইবে না। আবার অনেক কর্মীই হয়তো এই ইন্ডাস্ট্রিতেই আর কাজ করবেন না। অন্য পেশায় জীবিকা খুঁজবেন। এই খাত দারুণ প্রতিভাবান কিছু কর্মী হারাতে পারে।

প্রাতিষ্ঠানিক চাকরির বাইরে থাকা ফ্রিল্যান্সরাও আছেন ঝুঁকিতে। অথচ দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার্স ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির মহাসচিব মাহফুজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কাজের বড় ক্ষেত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বাজার। কাজেই প্রথম দিকে না হলেও করোনা যখন এই অঞ্চলে আঘাত হানা শুরু করলো তখন থেকেই খারাপ অবস্থা আমাদের স্থানীয় ফ্রিল্যান্সারদের। ইতোমধ্যে হাতে গোনা কিছু ফ্রিল্যান্সার যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য এক রকম নিয়মিত কাজ করেন তারা বাদে বাকিদের অনেকেই গ্রাহক হারিয়েছেন; কাজ পাচ্ছেন না তারা। এফিলিয়েট মার্কেটিং, মোবাইল এবং ডিজিটাল মার্কেটিংসহ ফ্রিল্যান্সিং এর সবদিকের একই অবস্থা। স্থানীয় বাজারে যারা কাজ করতেন খারাপ আছেন তারাও। এই খাতে কর্মরত আছেন প্রায় তিন লাখ ফ্রিল্যান্সার। এদের মধ্যে দেড় থেকে দুই লাখ সিরিয়াসভাবে ফ্রিল্যান্সিং করেন। তারা আসলেই খুব বিপদে পড়বেন।

তবে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের কাছ থেকে আর্থিক অনুদান এবং সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা চেয়েছে খাত সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং-বাক্য সরকারের কাছে এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা আবেদন জানিয়েছে বলে জানান সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, আমরা সবাই মিলে সবার পাশে দাঁড়ালে পরিস্থিতি হয়তো সামাল দেওয়া যাবে। যেদিন করোনা একেবারেই চলে যাবে সেদিন থেকেও তিন থেকে ছয় মাস লাগবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে। এই সময়ে আমাদের সম্মিলিত সাহায্য আমাদের টিকিয়ে রাখবে।  

অন্যদিকে কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য হলেও সরকারের কাছে আবেদন করেছে বেসিস। একইসঙ্গে উদ্যোক্তাদের জন্য জামানতবিহীন সরল দুই শতাংশ হারে একবছরের গ্রেস পিরিয়ডে ঋণ সহায়তাও প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২০
এসএইচএস/এএটি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।