ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

মহাকাশে লাল-সবুজ পতাকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৫ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৮
মহাকাশে লাল-সবুজ পতাকা মহাকাশে লাল-সবুজ পতাকা

ঢাকা: লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে দেশের প্রথম স্যাটালাইট যাচ্ছে মহাকাশে। সারাদেশেই ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট-১’ উৎক্ষেপণ পর্ব প্রশাসনের উদ্যোগে সরাসরি দেখানোর আয়োজন করা হয়েছে। তবে যারা বড় স্ক্রিনে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না, তারা মোবাইলেই লাইভ দেখার জন্য অধীর আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন।

এক মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় দেশবাসী। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাই ঝরে পড়ছে আবেগ।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও এতে অংশ নিয়েছেন। নিজ ওয়ালে আমেরিকার ফ্লোরিডার সেই কেনেডি স্পেস সেন্টারের কেপ কেনাভেরাল উৎক্ষেপণ প্যাডে স্থাপিত স্যাটালাইট উৎক্ষেপণের ফটো দিয়ে তিনি লিখেছেন-স্পেসএক্স রকেটে গায়ে লাল-সবুজ পতাকা দেখে খুব গর্ববোধ করছি।

শুধু তিনিই নন নাট্যকার, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার দেশপ্রেমী উৎসুকরা তাদের আবেগ প্রকাশ করেছেন।

নাট্যকার ইরানী বিশ্বাস লিখেছেন-ঐতিহাসিক সময়ের সাক্ষী হতে অপেক্ষা। আজ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইনের মহাকাশ যাত্রা।

জানিস আক্তার নামের একজন লিখেছেন-তোপধ্বনী হোক। ঢোল বাজুক, ভুভুজেলা বাজুক সবার বাড়ির আঙ্গিনায়, ছাদে। অকারণেই হাসুক বাংলাদেশের সব মানুষ। মুষ্টিবদ্ধ ৩২ কোটি হাত উঠুক বলার জন্য, হ্যাঁ আমরাও পারি। সব মানুষ জানুক মাহাকাশে আজ বাংলাদেশের লাল-সবুজ পাতাকা যাচ্ছে। বিশ্ব জানুক আমরা আছি।

শুধু স্ট্যাটাস দিয়েই আবেগ প্রকাশ করছেন মানুষ। অনেকেই নিজের প্রোফাইল ফটোতে ‘মাহাকাশে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইন-১’ ফ্রেম হিসেবে ব্যবহার করেছেন। স্যাটেলাইন উৎপক্ষেণ লিংকও অনেকেই নিজের ওয়ালে শেয়ার করে সবাইকে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলানিউজ, বিটিভি ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে। দেশব্যাপী মাঠ পর্যায়েও বাংলাদেশের সাফল্যের এই দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে মাঠ প্রশাসন।

যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ দেশটির ফ্লোরিডার কেপ কেনাভেরাল লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ব্যবহার হয় একটি ফ্যালকন-৯ ব্লক ফাইভ রকেট।

এর আগে গত ৪ মে ফ্লোরিডার কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টারে নতুন এই রকেটের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়।

গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও ফ্লোরিডায় ‘ইরমা’ ঝড় এবং প্রতিকূল আবহাওয়াজনিত কারণে কয়েক দফা পিছিয়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১০ মে (বৃহস্পতিবার)। কিন্তু সেইদিনও উৎক্ষেপণের ৪২ সেকেন্ড আগে তা একদিনের জন্য স্থগিত করা হয়।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পিছনে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। ১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বিদেশি চুক্তি এবং বাকি ১ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকায় ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কিনতে ফ্রান্সের থালেস এলিনিয়া স্পেসের সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি।

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে অর্থায়নের জন্য এইচএসবিসি ব্যাংকের সঙ্গে গতবছর প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার।
ফ্রান্সের থ্যালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মিত হয়েছে। নির্মাণ, পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও হস্তান্তর শেষে বিশেষ কার্গো বিমানে করে সেটি কেপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠানো হয়েছে।

সাড়ে তিন হাজার কেজি ওজনের জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে নিয়ে ফ্যালকন-৯ কক্ষপথের দিকে ছুটে চলে কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকে। এই লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকেই ১৯৬৯ সালে চন্দ্রাভিযানে অ্যাপোলো-১১-তে করে চাঁদের অভিমুখে রওনা হয়েছিলেন তিন নভোচারী।

বিটিআরসি জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০ দিন লাগবে। স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায়।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য এবং বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। সরকার আশা করছে, বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ যে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সেই অর্থ সাশ্রয় হবে।

এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম) সেবা, স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সম্প্রচার এবং ইন্টারনেট সুবিধাসহ ৪০টি সেবা পাওয়া যাবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শুধু বৈদেশিক মুদ্রাই সাশ্রয় হবে না, সেই সাথে অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটানের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর আয় হবে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্যাটেলাইটের আয়ু হবে ১৫ বছর।

স্পেসএক্স’র ওয়েবসাইটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পুরো উৎক্ষেপণ দৃশ্য দেখানো হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ উপলক্ষে সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং আমলারা ফ্লোরিডায় অবস্থান করছেন।

স্যাটেলাইটের গায়ে লেখা রয়েছে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’।  

টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন তারানা হালিম গতবছরের মাঝামাঝি সময়ে ফ্রান্সে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি পরিদর্শনে গিয়ে সই না করে লিখেছিলেন সেই স্লোগান।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৬ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৮
ইইউডি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।