ঢাকা, সোমবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ফোর-জি এক্সপ্রেসওয়েতে বাংলাদেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
ফোর-জি এক্সপ্রেসওয়েতে বাংলাদেশ অপারেটদের প্রধানদের হাতে ফোর-জির লাইসেন্স হস্তান্তর করা হয়-ছবি- সুমন

ঢাকা: বহুল প্রতীক্ষিত ফোর-জি বা চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল-ইন্টারনেট সেবার লাইসেন্স গ্রহণ করেছে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটক।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের উপস্থিতিতে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা ক্লাবে মোবাইল ফোন অপারেটর প্রধানদের হাতে এ সংক্রান্ত লাইসেন্স হস্তান্তর করা হয়।
 
লাইসেন্স পাওয়ার পরপরই মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে টেলিটক ছাড়া অন্য অপারেটরগুলোর ফোর-জি সেবা চালু হয়েছে।

শিগগিরই টেলিটকে এই সেবা চালু করবে।

ফোর-জি চালু হওয়ার পর ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি পাবে, এতে সুবিধা পাবেন গ্রাহকরা।
 
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ অপারেটরদের প্রধানদের হাতে ফোর-জি’র লাইসেন্স হস্তান্তর করেন।

গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি, রবি’র এমডি এবং সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী গোলাম কুদ্দুস লাইসেন্স গ্রহণ করেন।

বিটিআরসি এবং মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার।

বাংলাদেশের মানুষ আরেকটি ইতিহাসের সাক্ষী হলো জানিয়ে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ফোর-জি সেবা চালুর মধ্য দিয়ে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, স্ট্যাডি সবকিছুর ডিজিটাল রূপান্তর হবে। এক সময় হয়তো ভয়েস কল বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং ডাটার উপর নির্ভরশীলতা বাড়বে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ফোর-জি চালু করার পর যেন সেবার মানটি উন্নত হয়।

ফোর-জি সিম পরিবর্তন করে নিতে টাকা গ্রহণ যুক্তিযুক্ত নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এমন কিছু করবেন না যাতে নিয়ম ভঙ্গ হয়।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, বর্তমান সময়ে তরুণরা তথ্যপ্রযুক্তির দিকে যাচ্ছে। দিন দিন ভয়েস থেকে ডাটার ব্যবহার বাড়ছে। ফোর-জি’র পর উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে।   

দেশে বর্তমানে মাত্র ১০ শতাংশ ফোর-জি সুবিধাসম্পন্ন হ্যান্ডসেট রয়েছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দেশেই মোবাইল ফোন তৈরির অনুমতি দিয়েছি।  

ফোর-জির যুগে প্রবেশকে বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন উল্লেখ করে গ্রামীণফোনের সিইও বলেন, আমরা এর মাধ্যমে উচ্চগতির ডাটা সেবা দেবো।  

ফোর-জি সেবা চালু করায় আমাদের সবার গর্ব করা উচিত উল্লেখ করে রবি সিইও বলেন, আশা করি এর মাধ্যমে দেশের বড় পরিবর্তন করতে পারবো।  

হ্যান্ডসেট ডিউটি কমানো, ফোর-জি যন্ত্রপাতির ডিউটি আরো সহজলভ্য এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফোর-জি সেবা দিতে ইনসেনটিভ মেকানিজম গ্রহণ করা যায় কি-না, সে ব্যাপারে নীতি নির্ধারকরা বিবেচনা করবেন বলে আশা করেন রবি সিইও।  

বাংলালিংক সিইও বলেন, ফোর-জি সেবার মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের আরো অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। ফোর-জি’র মাধ্যমে উচ্চগতির ডাটা দেওয়া হবে। লাইসেন্স পাওয়ার পর থেকে রবি’র ১৮৯ সাইট ফোর-জি রান হচ্ছে বলেও জানান মাহতাব।

দুইশ’র বেশি বিটিএসের মাধ্যমে বাংলালিংক বিভাগীয় শহরে ফোর-জি সেবা চালু করেছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
 
টেলিটক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশের চারটি মোবাইল অপারেটর লাইসেন্স পেলো। থ্রি-জিতে মানুষ যে ডাটা সুবিধা পেতো ফোর-জিতে তার চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা পাবে। একটি আধুনিক ও উন্নত দেশ গঠনে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সব বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এই সেবা চালু হওয়ায় সে সুযোগ পাওয়া যাবে।

প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা রূপান্তর ও রেডিও কমিউনিকেশন অ্যাপারেটাস লাইসেন্স গ্রহণ করে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক।

এর আগে ফোর-জি সেবা দিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্লাবে বিটিআরসি আয়োজিত নিলামে অংশ নিয়ে ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে গ্রামীণফোন ৫ মেগাহার্টজ ও ২১০০ মেগাহার্টজে বাংলালিংক ৫ মেগাহার্টজ এবং ১৮০০ মেগাহার্টজে ৫ দশমিক ৬ মেগাহার্জ তরঙ্গ কিনেছে।
 
নিলামের পর গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের তরঙ্গের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৩৭ ও ৩০.৬ মেগাহার্টজ। এর আগে গ্রামীণফোনের ৩২, রবির ৩৬.৪, বাংলালিংকের ২০ ও টেলিটকের ২৫.২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ছিলো। রবি আর এয়ারটেল একীভূত হওয়ায় কোনো তরঙ্গ কিনেনি রবি। আর টেলিটকেরও গ্রাহকের চাহিদার তুলনায় বেশি তরঙ্গ রয়েছে।
 
দেশে চালু থাকা ৩০ শতাংশ স্মার্টফোনের মধ্যে ফোর-জি ব্যবহার করা যাবে এমন সেটের সংখ্যা ১০-১৪ শতাংশ। আর ১৫ লাখ আইফোন ব্যবহারকারী ফোর-জি চালুর জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
 
ফোর-জি সেবা দেওয়ার জন্য টেলিটক, সিটিসেল, বাংলালিংক, গ্রামীণফোন ও রবি আবেদন করেছিলো। বকেয়া থাকায় পায়নি সিটিসেল।
 
বর্তমানে টু-জি সেবা ৯০০ মেগাহার্টজ ও ১৮০০ মেগাহার্টজে দেওয়া হয়। থ্রিজি সেবা ২১০০ মেগাহার্টজে দেওয়া হয়। ২১০০ মেগাহার্টজে যে থ্রি-জি সেবা দেওয়া হয় সেখানে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা দেওয়া আছে। অর্থাৎ এই তরঙ্গে ফোর-জি, টু-জি সেবাও দিতে পারবে অপারেটরগুলো।
 
প্রাথমিকভাবে ফোর-জির ডাটা স্পিড ২০ এমবি (মেগাবাইটস পার সেকেন্ড) রাখা হয়েছে। বিটিআরসি সময়ে সময়ে স্পিড পরিবর্তন করতে পারবে।
 
ফোর-জি লাইসেন্সিং গাইডলাইন এবং তরঙ্গ নিলামের জন্য আবেদন আহ্বান করে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিটিআরসি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮/আপডেট: ২০১২  ঘণ্টা
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।