ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসারের ৯টি পদ শূন্য

 জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২০
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসারের ৯টি পদ শূন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল। ছবি: বাংলানিউজ

মেহেরপুর: ২৫০ শয্যার মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মূলত এখন রোগী শূন্য হয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের দোহায় দিয়ে সাধারণ রোগে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে রোগী এবং তাদের স্বজনদের পক্ষ থেকে।

করোনা মহামারির আগ পর্যন্ত মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগীর উপচেপড়া ভিড় থাকলেও, এখন একেবারেই ফাঁকা। আগে যেখানে ৫ থেকে সাড়ে ৫শ রোগী আউটডোর এবং ইনডোর মিলে চিকিৎসা নিতো সেখানে এখন প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

খুব বেশি অসুস্থ না হলে হাসপাতালে এসে ভিড় করছেন না রোগীরা। আউটডোরের মত একই চিত্র ইনডোরেও। বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই এখন  রোগী শূন্য অবস্থায় রয়েছে।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, শিশু, সার্জারি, কার্ডিওলজি, জুনিয়র অর্থ সার্জারি, চক্ষু, গাইনি, এনেসথেসিয়া, প্যাথলজি, রেডিওলজি, চর্ম ও যৌন, আরএমও, রেডিওলজিস্ট, প্যাথলোজিস্ট, মেডিক্যাল অফিসারসহ অন্যান্য পদে ৪২টি সৃষ্ট পদ থাকলেও আছে মাত্র ১৫ জন। ফাঁকা রয়েছে ২৭টি পদ। এদের মধ্যে ১১ জন মেডিক্যাল অফিসারের মধ্যে রয়েছে মাত্র ২ জন। সংকট আর সমস্যা নিয়েই হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা চালু রাখা হয়েছে।

করোনার কারণে আতঙ্কিত হয়ে কমে গেছে রোগীদের চাপ। খুব বেশি অসুস্থ না হলে কেউ হাসপাতালে এসে ভিড় করছেন না। তবে জ্বর ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় যারা আসছেন, তাদের সেবা দেওয়া হচ্ছে বিশেষ সর্তকতায়।

এদিকে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা একেবারেই ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

...গাংনীর কাজীপুর গ্রামের আব্দুর রহমান এবং তার স্ত্রী সাহারবানু অভিযোগ করেন, আমরা মাথা যন্ত্রণা এবং শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে হাসপাতালে এসেছিলাম। কিন্তু সকাল থেকে বসে থেকেই চলে যাচ্ছি। কেউ আমাদের দেখল না।  

তিন বছর বয়সী শিশুর সামান্য জ্বর নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন সদর উপজেলার ঝাঁঝাঁ গ্রামের রহমান মিয়ার স্ত্রী জুলেখা খাতুন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে করোনার দোহায় দিয়ে সব চিকিৎসাই বন্ধ। চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি।

এদিকে হাসপাতালের গাইনি ও মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে পাওয়া গেছে নানা অব্যবস্থাপনার চিত্র। বেশ কিছু নারী রোগী সেখানে ভর্তি থাকলেও নেই কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার। ওয়ার্ডে সাপ্লাইয়ের তিনটি অক্সিজেন লাইন থাকলেও সিলিন্ডারের খোঁজ জানে না কর্মরত সিস্টাররাও।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সেবিকা জানালেন, তিনি দুই মাস হাসপাতালে সেবা দিচ্ছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার দেখেননি। তবে এ ওয়ার্ডে অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের জন্য তিনটি লাইন রয়েছে তার মধ্যে একটি অকেজো থাকলেও দুটি সচল রয়েছে।
 
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড, পুরুষ ও মহিলা সার্জারি, মেডিসিন ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দেখা গেছে বেশিরভাগ বেড (শয্যা) শূন্য। দু’একটি বেডে রোগী ও তাদের স্বজনরা অবস্থান করছেন। অন্য ওয়ার্ডেও একই চিত্র। জরুরি বিভাগে একজন ডাক্তার ও নার্সকে দেখা গেলেও অলস সময় পার করছেন তারা।

শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত একজন স্টাফ নার্স জানান, শিশু রোগীর চাপ অনেক কম, খুব জরুরি না হলে কেউ হাসপাতালে আসছেন না। আবার আসলেও কোনো রকম সুস্থ হলেই ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্কের কারণে রোগীদের চাপ কম। জ্বর, কাশি ও ঠাণ্ডাজনিত রোগী নেই বললেই চলে। অন্য রোগীও কম। কোনো রোগীর ক্ষেত্রে করোনার প্রাথমিক উপসর্গ আছে বলে সন্দেহ হলে তাদের সঙ্গে সঙ্গে করোনা ইউনিটে ভর্তি করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
 
মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, মেহেরপুর জেলা করোনামুক্ত রাখতে স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা এক সাথে কাজ করছেন। যে কারণে জেলায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত ২৬১০টি  নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ জেলায় এ পর্যন্ত ৭ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং ১৩০ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।  

তিনি জানান, জেলায় করোনা সন্দেহে রোগীদের নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকার পাশাপাশি মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ৮৫টি বেড প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন হিসেবে রাখা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে ৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।