ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ভারতের মতো করোনার ‘হ্যাপ্লোটাইপ এ২এ’ সংক্রমণের আশঙ্কা

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২০
ভারতের মতো করোনার ‘হ্যাপ্লোটাইপ এ২এ’ সংক্রমণের আশঙ্কা

ঢাকা: দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয়ে শহর-গ্রাম সমানভাবে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই পর্যায়ে ভারতের মতো হ্যাপ্লোটাইপ এ২এ সংক্রমিত হতে পারে বলেও ধারণা তাদের।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নভেল করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) হ্যাপ্লোটাইপ এ২এ দ্রুত ও অধিক সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন। আর এ২এ এর এই ধরনটি সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়ায় বলে ভারতে এই মুহূর্তে করোনা পরিস্থিতি লাগামহীন। সংক্রমণ ঠেকাতে আরও সতর্ক না হলে ভারতের মতো পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

গত জুন মাস থেকে গোটা ভারতে মূলত হ্যাপ্লোটাইপ এ২এ ধরনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িযে পড়ে। গত ১ আগস্ট দেশটিতে নতুন করে একদিনে সর্বোচ্চ ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হন। এর আগের দিন ৩১ জুলাই সেখানে আক্রান্ত হয়েছিলো ৫৫ হাজার। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি চলছে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি ঈদের আগে কিছুটা স্থিতিশীল ও কমের দিকে গেলেও ঈদের পর আবার ঊর্ধ্বমুখী দেখা যাচ্ছে। প্রতি ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২১ থেকে ২৫ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ ৪/৫ জনে একজন। হঠাৎ করে এই পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম যেটা দেখা গেছে সেটা সংখ্যায়, তবে আক্রান্তের হার কমেনি। শুক্রবার (৭ আগস্ট) ২৪ ঘণ্টার যে ফলাফল এসেছে তাতে ১২ হাজার ৬৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে দুই হাজার ৮৫১ জন শনাক্ত হয়েছেন। এই পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে শনাক্তও বাড়বে। তাছাড়া ঈদ কেন্দ্র করে মানুষের শহর থেকে গ্রামে অবাধে চলাফেরা এবং বর্তমানে মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে একটা ‘ড্যাম কেয়ার ভাব’ তৈরি হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে পারবর্তী ঊর্ধ্বগতি পর্যায়কে ত্বরান্বিত করবে। বর্তমানে যে পর্যায়ে সেটা অর্থাৎ প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ওয়েভে রূপ নিতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এমএইচ চৌধুরী লেলিন (লেলিন চৌধুরী) বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণ একটি বিশেষ উচ্চতায় ওঠার পর প্রলম্বিত হয়। পরিস্থিতিতে দেখে মনে হচ্ছে এই সংক্রমণের প্রথম পর্যায়টা দ্বিতীয় ওয়েভে প্রবেশ করবে। প্রথম পর্যায়ে ছিল শহর এলাকায়। কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে শহর থেকে গ্রামে সংক্রমণ পৌঁছেছে। এ অবস্থায় শহর ও গ্রাম সমানভাবে আক্রান্ত হতে পারে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সংক্রমণ ঠেকানোর নতুন কর্মকৌশণ নির্ধারণ করা দরকার।  

তিনি বলেন, প্রতিবেশি দেশ ভারতে আক্রান্ত বেড়েই চলেছে। সেখানে করোনা ভাইরাসের হ্যাপ্লোটাইপ এ২এ সংক্রমিত হচ্ছে। ভাইরাসের এই হ্যাপ্লোটাইপ এ২এ প্রচুর সংক্রমণ ক্ষমতা রয়েছে। যেহেতু ভারত প্রতিবেশী দেশ, তাই এই ধরনের সংক্রমণ আমাদের দেশে বিভিন্নভাবে আসার একটা আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সীমান্ত এলাকায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে যাওয়া-আসা না ঘটতে পারে।  

‘আসলে শুরু থেকেই আমরা দেখেছি কিছু মানুষের মধ্য একটা ড্যাম কেয়ার মনোভাব চলে এসেছে। সেটা এখন আরো বেড়েছে। তাছাড়া সরকারের দাযিত্বশীল পর্যায় থেকে নেতারা বলছেন করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে,’ বলেন লেলিন চৌধুরী।

আইইডিসিআর এর প্রক্তান্ত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পরীক্ষা বেশী হলে আক্রান্ত বেশী হবে। আক্রান্তের হার এখন শতকরা ২১ থেকে ২৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ ৪ থেকে ৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে একজন শনাক্ত হচ্ছে। হঠাৎ করে এটা বেড়ে যেতে পারে। অথবা কোনো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অস্বাভাবিক সংক্রমণ বা বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। যেভাবেই হোক সংক্রমণ ঠেকাতে হবে। নিজে নিজেই সংক্রমণ কমবে না, বরং বাড়বে। এটাকে কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।  

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে হ্যাপ্লোটাইপ এ২এ সংক্রমণের কথা বলা হচ্ছে। সেটা আমাদের এখানেও হয় তো আছে। সেখানে জেনেটিক নিউটেশন চলছে। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে ভয় কমে গেছে। ভয় সব সময়ই মানুষের কমে যায়, কিন্তু সচেতনতা কমলে চলবে না। তবে মানুষকে সচেতন হতে হবে, সচেতন করতে হবে। চেষ্টা করেই সংক্রমণ কমাতে হবে, একা কমবে না, একা বাড়বে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২০
এসকে/এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।