ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

মেডিক্যাল বর্জ্যে সয়লাব খুলনা করোনা হাসপাতাল!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
মেডিক্যাল বর্জ্যে সয়লাব খুলনা করোনা হাসপাতাল!

খুলনা: খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ব্যবহৃত মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড কভার, সু কভার, গগলসসহ সুরক্ষাসামগ্রী উন্মুক্ত স্থানে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এসব বর্জ্য থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

হাসপাতালটির (খুলনা ডায়বেটিকস হাসপাতাল) প্রবেশ পথ ও ভবনের সামনে যত্রতত্র মেডিক্যাল বর্জ্যে ভরা। শুধু হাসপাতালের বাইরে নয় ভেতরেও করোনা রোগীদের ব্যবহারের জন্য যেসব বাথরুম, টয়লেট রয়েছে তাও চরম অপরিচ্ছন্ন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীরা।

শুক্রবার (১৯ জুন) মহানগরীর নূরনগরস্থ করোনা হাসপাতালে সামনের প্রবেশ পথ ও ভবনের সামনে যত্রতত্র ক্লিনিক্যাল বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ডাস্টবিন থাকলেও সেটার মুখ খোলা রয়েছে। মেডিক্যাল বর্জ্য পলিথিন ভরে বেশি ফেলা হয়েছে ডাস্টবিনের বাইরে। এতে আশপাশের বাসিন্দারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

নূরনগরের স্থানীয় বাসিন্দা এম হোসেন বলেন, মেডিক্যাল বর্জ্য বায়োসেফটিক্যাল ব্যাগে ভরে ডাস্টবিনে না রেখে বাইরে যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য ব্যবহৃত সবকিছু একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলার কথা থাকলেও তা না করে হাসপাতালের প্রবেশ পথ ও ভবনের সামনে যত্রতত্র ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ফেলায় আশপাশের বাসিন্দারা রয়েছেন আতঙ্কে।

করোনা হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে আসা এক ব্যক্তি বলেন, তিন তলা হাসপাতাল ভবনের নিচ তলায় আমি থাকতাম। আমি সেখানে সাত দিন ভর্তি ছিলাম। সাত দিনে একদিনেও টয়লেট পরিষ্কার করতে দেখিনি। বাধ্য হয়ে নিজে পরিষ্কার করে ব্যবহার করেছি। পিপিই পরে থাকার কারণে কে চিকিৎসক, কে পরিচ্ছন্নকর্মী বা সুইপার তা বোঝারও উপায় নেই। হাসপাতালের নিচ তলা ও তৃতীয় তলায় করোনা রোগী থাকেন সব জায়গাই একই অবস্থা।

তিনি বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা, চিকিৎসক, নার্সদের ব্যবহার ও সেবা সবই ভালো শুধু পরিচ্ছন্নের বিষয়টি খারাপ।

করোনা হাসপাতাল ছাড়াও খুলনায় বাসায় সার্জিক্যাল মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভসসহ নানা ধরনের মেডিক্যাল সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। বাসা-বাড়িতে ব্যবহার করা মাস্কসহ অন্যান্য বর্জ্য করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করছে। এগুলো জীবাণুমুক্ত না করে সাধারণ বর্জ্যর সঙ্গে ফেলে দেওয়ায় পরিচ্ছন্নকর্মীসহ অনেকের করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলেও নগরীর সচেতন মহল মনে করছেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মো. সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, মেডিক্যাল বর্জ্যগুলো হাসপাতালের সামনে ফেলে রেখে দেয় সেটি অন্যায়। আর যদি তা হয় করোনা হাসপাতালে তাহলে সেখান থেকে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হবে।

তিনি বলেন, করোনার এ সময়ে যেভাবে ব্যবহৃত মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস যত্রতত্র যেভাবে ফেলা হচ্ছে, তাতে করোনার সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যত্রতত্র ফেলা এসব বর্জ্য থেকে সংক্রমণ মানুষ থেকে মানুষে ছড়াবে। কাক, কুকুর মুখে নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ফেলবে, সেখান থেকে ভাইরাস ছড়াবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত মেডিক্যাল বর্জ্যগুলো অটোক্লেভস মেশিনের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে তা বায়োসেফটিক্যাল ব্যাগে ভরে রাখা। পরে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

খুলনার সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, করোনা হাসপাতালের বর্জ্য খুলনা সিটি করপোরেশনের অপসারণের দায়িত্ব। মেয়র সেখানে পরিচ্ছন্নকর্মীও দিয়েছেন।

তিনি বলেন, করোনা হাসপাতালে সামনের প্রবেশ পথ ও ভবনের সামনে যত্রতত্র ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এ বিষয় আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি সিটি মেয়রকে জানাবো।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
এমআরএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।