ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

‘প্রস্তুতি আছে, করোনা এলেও আতঙ্কের কিছু নেই’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২০
‘প্রস্তুতি আছে, করোনা এলেও আতঙ্কের কিছু নেই’

ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বাংলাদেশে কোনোভাবে করোনা ভাইরাস চলে এলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা আগে থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে আছি।

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্যখাতের উদ্যোগ এবং ডেঙ্গুর সর্বশেষ পরিস্থিতি’শীর্ষক  আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে।

চীনে শুরু হয়েছিল, সেখানে প্রায় ৮০ হাজার লোক আক্রান্ত ও প্রায় তিন হাজার মারা গেছেন। ইতোমধ্যে অনেকগুলো দেশে ছড়িয়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ইতালিতে মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
 
‘আমরা মনে করি, আমাদের আশেপাশের দেশে যেহেতু করোনা ভাইরাস এসে গেছে। বাংলাদেশেও যে আসবে না, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আমরা প্রায় সবসময় প্রস্তুত আছি, প্রস্তুতি আরো বৃদ্ধি করছি। করোনা ভাইরাস চলে এলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। আমরা আগে থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে আছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক আমাদের আলোচনা হয়, তাকে সব বিষয় অবহিত করে ব্যবস্থা নিয়েছি। ’
 
বিদেশ থেকে আগতদের মাধ্যমে যাতে করোনা ভাইরাস না ছড়ায়, এ ব্যাপারে প্রস্তুতি সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা নির্দেশনা দিয়েছি- যে কোনো দেশ, বিশেষ করে যে সমস্ত দেশ বা এরিয়া বেশি আক্রান্ত হয়েছে সেখান থেকে কেউ এলে তার স্ক্রিনিং হবে এবং তিনি সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। ঢাকা শহরে তো আছেই, আমরা প্রতিটি জেলায় হাসপাতালগুলোর টপ ফ্লোরে আইসোলেশেন ওয়ার্ড করেছি।
 
‘ঢাকায় কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল ও বক্ষব্যাধি হাসপাতাল বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ২০ বেডের একটি আইসিইউ করা হচ্ছে, সেখানে ক্রিটিক্যাল রোগী রাখা হবে। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে জানাবে। ’
 
ঢাকার বাইরে করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিউয়ের ব্যবস্থা থাকবে, সেখানে প্রশিক্ষত লোক থাকবে। আল্লাহ না করুক, যদি রোগী বেশি দেখা যায় তাহলে আমরা হাসপাতালের বাইরেও স্কুল-কলেজ, কমিউনিটি সেন্টার মার্ক করে রেখেছি আক্রান্তদের রাখার জন্য। স্থানীয় যে কমিটি আছে তারা ঠিক করে রাখবে।
 
হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সদের প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, তাদের জন্য যথেস্ট পরিমাণে গাউন, মাস্ক, গ্লাভস দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি এবং প্রতিনিয়ত এসব সংগ্রহ করে সব হাসপাতালে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।  
 
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, সিভিল সার্জনদের নিয়ে এসেছি। প্রতিদিন ভিডিও কনফারেন্সে প্রশিক্ষণ দিয়ে বলেছি স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিতে। যখন একটা বিপর্যয় ঘটবে, তখন প্রশিক্ষণের অপেক্ষায় থাকা যাবে না। গাইডলাইন ও প্রাথমিক জ্ঞান দিয়ে ট্রিটমেন্ট করতে হবে।
 
করোনা মোকাবিলা প্রস্তুতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা চিন্তাভাবনা করেছি, বিদেশে থেকে যিনিই আসবেন তিনিই সিভিল সার্জনের সঙ্গে দেখা করবেন এবং কোথা থেকে এসেছেন তা জানাবেন। যাতে কেউ মিস না হয়। বিভিন্ন দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি, যারা ইতালি, কোরিয়া ও ইরান থেকে আসবে তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া। সেখানে অন অ্যারাইভাল ভিসা ক্যানসেল করে দেওয়া হয়েছে। তাদের মেডিকেল সার্টিফিকেটও নিয়ে আসতে হবে।

করোনার চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য বুকলেট ও গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, কেবল নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা করোনায় সচেতনতা বিষয়ক প্রচারণা চালাবো।  
 
ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে আগত ৪ লাখ ১৮ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এছাড়া আমরা একশ'র মতো রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটিসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আরও দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়। এ কমিটি প্রতিনিয়ত মিটিং করে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এখন থেকেই কাজ করবেন বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
 
মন্ত্রী বলেন, সরকারি হাসপাতালের মতো বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের এক কোটি লোক বাইরে থাকে। যারা বিদেশে চাকরি করে, তারা যেন খুব জরুরি ছাড়া এই মুহূর্তে বিদেশ থেকে না আসে বা বিদেশে না যায়। আমরা চাই না বাংলাদেশ আক্রান্ত হোক।
 
সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং স্বাস্থ্যখাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২০ 
এমআইএইচ/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।