ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

শীতে শ্বাসকষ্ট-ডায়রিয়ায় আক্রান্ত পৌনে দুই লাখ, মৃত্যু ৫১

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২০
শীতে শ্বাসকষ্ট-ডায়রিয়ায় আক্রান্ত পৌনে দুই লাখ, মৃত্যু ৫১

ঢাকা: চলতি শীত মৌসুমে এ পর্যন্ত সারাদেশে ৫০ হাজার ৭৮৬ জন শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৬৫৩ জন। এছাড়া শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৪১ হাজার ১০ জন। এসব রোগে ভুগে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৫১ জন।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ এমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার  বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।

আয়শা আক্তার  বলেন, ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ৫০ হাজার ৭৮৬ জন শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

এ ধরনের জটিলতায় মারা গেছেন ১৭ জন। এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৬৫৩ জন। মারা গেছেন ৪ জন। এসব ছাড়া অন্যান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ১ লাখ ৪১ হাজার ১০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন ও মৃত্যুবরণ করেছে ৩০ জন।  

অন্যান্য অসুস্থতার মধ্যে রয়েছে- জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ, জ্বর ইত্যাদি। শীতকালীন এসব রোগে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন এলাকায়। অন্যান্য বিভাগগুলো রোগ ও মৃত্যুর হারে ঢাকার চেয়ে অনেক পেছনে রয়েছে।  
 
আয়শা আক্তার জানান, কেবলমাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৭৬৮ জন শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯০৪ জন। এছাড়া শীতজনিত অন্যান্য রোগে ২ হাজার ৭৬০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রোগে ভুগে কারো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এসব রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হারই বেশি বলে জানান এ কর্মকর্তা।  
 
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক সূত্রে জানায়, এ তথ্য কেবলমাত্র দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আগত রোগীদের। রাজধানীর কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের হিসেব এর মধ্যে থাকলেও সারাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর হিসাব এতে নেই। এছাড়া আঞ্চলিকভাবে প্রায় প্রতি ঘরেই শীতজনিত রোগের প্রকোপ রয়েছে। এবারের শীতে শৈত্যপ্রবাহের মাত্রা বেশি হওয়ায় এসব রোগের বিস্তার বেশি ঘটছে বা ঘটবে বলে আশঙ্কা চিকিৎকসকদের।  

রাজধানীর মাতুয়াইলের মা ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. ইমরান শাহেদ বাংলানিউজকে জানান, শীতের বিভিন্ন রোগে শিশুরাই বেশি ধরাশায়ী হয়। যেহেতু বড়দের চেয়ে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। শিশুদের ক্ষেত্রে তাই সাবধানতা অবলম্বন করাটাই শ্রেয়। তবে যেহেতু এবার শৈত্যপ্রবাহের মাত্রা বেশি সেহেতু বড়দেরও সাবধান থাকতে হবে। আর রোগে আক্রান্ত হলে শুরু থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। নিজে নিজে অনিয়মিতভাবে ওষুধ খেয়ে অনেক ওষুধ রেজিস্ট্যান্ট হওয়ায় মানুষ এখন আসলেই অনেক বিপদে আছে। তাই এসব রোগেই বর্তমানে বেশ মৃত্যুহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগে এতোটা দেখা যেতো না।
 
এদিকে শীতেও দূর হয়নি ডেঙ্গুর প্রকোপ। এমন অবস্থা এর আগে দেখা যায়নি বাংলাদেশে।  

এ  বিষয়ে ডা. আয়শা আক্তার জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৪ দিনে সারাদেশে ৪৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৩৬ জন ও অন্যান্য বিভাগে ৭ জন ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ জন। তাছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ১৯ জন এবং রাজধানীর বাইরে ২ জন।  
 
গত বছরের এপ্রিল থেকে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। এর মধ্যে গত জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এটি মহামারী রূপ নেয়। এ সময়ে সারাদেশে কয়েক লাখ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। মৃত্যু হয় তিন শাতধিক মানুষের। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ও মৃতের সংখ্যা ১৫৬ জন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুসারে গত বছর ডেঙ্গু সন্দেহে ২৬৬ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৪৯ জনের মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে ১৫৬ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২০
এমএএম/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।