ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ধীরে হাঁটা দ্রুত বুড়িয়ে যাবার লক্ষণ!

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৯
ধীরে হাঁটা দ্রুত বুড়িয়ে যাবার লক্ষণ!

ঢাকা: কোনো মানুষই চায় না তার শরীরে বয়সের ছাপ পড়ুক। তবুও স্বাভাবিক নিয়মানুসারেই একটা চঞ্চল শরীরও একদিন বুড়িয়ে যায়; পড়ে যায় বয়সের ছাপ।

কখনো ভেবেছেন, আপনি কখন বুড়িয়ে যাবেন, তা নির্ভর করছে আপনার হাঁটার গতির ওপর? তবে এমন চমকপ্রদ তথ্যই দিচ্ছে সাম্প্রতিক এক গবেষণা।

গবেষণাটিতে দেখা যায়, যারা ধীর গতিতে হাঁটেন, তাদের শরীরে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়ে।

সঙ্গে সংকুচিত হয়ে আসে তাদের মস্তিষ্কও। অন্যদিকে, যাদের হাঁটার গতি তুলনামূলক বেশি, তাদের শরীরে বয়সের ছাপ পড়ে দেরিতে।

নিউজিল্যান্ডের এক হাজার অধিবাসীর ওপর চালানো হয়েছে এই গবেষণাটি। যাদের জন্ম সত্তরের দশকে এবং বয়স ৪৫ কিংবা এর আশপাশে। দীর্ঘ সময় ধরে চালানো হয়েছে এই গবেষণাটি। শৈশব থেকেই কয়েক বছর পরপর তাদের শেখার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া, অংশগ্রহণকারীদের নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতার পরীক্ষা ও ব্রেন স্ক্যান করা হয়।  

৪০ বছর বয়স কিংবা এর পর একজন মানুষের হাঁটার গতি দেখেই বোঝা যায় তার মস্তিষ্ক ও শরীর কতটা বুড়িয়ে যাচ্ছে। গবেষণা দলটি বলছে এ তথ্য বেশ ‘আশ্চর্যজনক’।  

সাধারণত ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের স্বাস্থ্যের অবস্থা বোঝার জন্যে প্রায়ই চিকিৎসকরা তাদের হাঁটার গতি পরিমাপ করে থাকেন। কারণ এই পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পেশিশক্তি, ফুসফুসের ক্ষমতা, শারীরিক ভারসাম্য, মেরুদণ্ডের দৃঢ়তা এবং দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। দেখা গেছে, বয়স্ক মানুষের মধ্যে ধীরে হাঁটার প্রবণতা হতে পারে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ (স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া) হওয়ার লক্ষণ।  

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের হাঁটার সর্বাধিক গতি লক্ষ্য করা গেছে প্রতি সেকেন্ডে ২ মিটার।

গবেষণাটির নেতৃত্বে ছিলেন যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টেরি ই মফিট। তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, ধীর গতিতে হাঁটা দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণ।

গবেষণায় পাওয়া তথ্যানুযায়ী, যারা দ্রুত হাঁটেন তাদের চেয়ে, যারা ধীরে হাঁটেন, তাদের ফুসফুস, দাঁতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে জলদি বয়সের ছাপ পড়ে। এছাড়া তাদের শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে তুলনামূলক কম।

আরও অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ব্রেন স্ক্যান করে দেখা যায় ধীরে হাঁটা ব্যক্তিদের মস্তিষ্কেও বয়সের ছাপ পড়ে দ্রুত। যার ফলে কমতে থাকে তাদের স্মৃতিশক্তি।

এছাড়া তিন বছর বয়সী শিশুদের বুদ্ধিমত্তা, ভাষাদক্ষতা ও পেশিসঞ্চালন ক্ষমতার পরীক্ষার ফল দেখে, ৪৫ বছর বয়সের পর তাদের হাঁটার গতি কেমন হবে তা অনুমান করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুরা ধীরে হাঁটে (১ দশমিক ২ মিটার/সেকেন্ড) ৪০ বছর পর তাদের আইকিউ, যেসব শিশুরা দ্রুত হাঁটে (১ দশমিক ৭৫ মিটার/সেকেন্ড) তাদের চেয়ে গড়ে ১২ পয়েন্ট কম।

তবে, স্বাস্থ্য ও আইকিউ’র পার্থক্যের অন্য কারণ হতে পারে তাদের জীবন-যাপন পদ্ধতি। তাছাড়া, অনেক শিশু সুস্বাস্থ্য নিয়েই জন্মায়।  

গবেষণাটি বলছে, শেষ বয়সে স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন হবে তা জীবনের শুরুর দিকেই বোঝা যায়। কম বয়সে হাঁটার গতি পরিমাপ করার মাধ্যমে শরীরে বয়সের ছাপ দ্রুত পড়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। যেমন, কম ক্যালোরির খাবার গ্রহণসহ যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

মোদ্দা কথা, শরীর ও মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য অল্প বয়স থেকেই সুস্থ জীবন যাপনের চর্চা করা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৯
এফএম/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।