ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

‘দেশে এক-তৃতীয়াংশ রোগের কারণ দূষিত পরিবেশ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৯
‘দেশে এক-তৃতীয়াংশ রোগের কারণ দূষিত পরিবেশ’ বৈজ্ঞানিক সেমিনারে উপস্থিত অতিথিরা

ঢাকা: বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রোগী ফুসফুসের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। শুধুমাত্র অ্যাজমায় ভুগছেন প্রায় ৭০ লাখ মানুষ। অপরিকল্পিত নগরায়ন, পরিবেশ দূষণ ও শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ার কারণে আমাদের দেশে বক্ষব্যাধি ও হৃদরোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত ফুসফুস রোগের জন্য এই পরিবেশ দূষণই দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। 
 

রোববার (২৪ মার্চ) রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) অডিটোরিয়ামে ‘দি চেস্ট অ্যান্ড হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ মন্তব্য করা হয়।

বক্তারা বলেন, প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনার অভাবে নন-কমিউনিকেবল চেস্ট ডিজিজ যেমন-তীব্র ও নিরাময়যোগ্য ফুসফুসের রোগ (সিওপিডি) ও হৃদরোগের মতো রোগগুলো কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফলে জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।
 
বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, বায়ু দূষণের কারণে প্রথমে আক্রান্ত হয় ফুসফুস ও শ্বাসনালী। অব্যাহত বায়ু দূষণে অ্যাজমা, অ্যালার্জি, শ্বাসনালী ও ফুসফুসে নিউমোনিয়া সংক্রমণ, সিওপিডি ও ফুসফুসের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার রোগও বেড়েই চলছে। অন্যদিকে যক্ষ্মা এখনও আমাদের বৃহত্তম স্বাস্থ্য সমস্যা। প্ৰতি বছর প্রায় তিন লাখ মানুষ নতুনভাবে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় এবং ৭০ হাজার লোক মারা যায়।
 
চিকিৎসকের পরামর্শ না মেনে চলাকেও এ রোগ বৃদ্ধির আরেক কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, অনিয়মিত চিকিৎসা এবং কিছুদিন চিকিৎসার পর সুস্থ্যবোধ করলে অনেক যক্ষ্মা রোগী ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। ফলে রোগটি অনিরাময় যোগ্য এমডিআর-টিবি হয়ে যায়। এ ধরনের জটিল এমডিআর-টিবির চিকিত্সা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি।
 
বক্ষব্যাধি বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, মেডিকেল কলেজে মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীদের প্রায় ২০ ভাগ রোগী বিভিন্ন ধরনের বক্ষব্যাধি নিয়ে ভর্তি হয়। দেশের মেডিকেল কলেজগুলোর বক্ষব্যাধির উন্নত চিকিৎসার সুযোগ সম্প্রসারিত করার জন্য রেসপিরেটরি মেডিসিন ও কার্ডিওথোসিক সার্জারির কিছু ইউনিট চালু হয়েছে। ১৩টি মেডিকেল কলেজে রেসপিরেটরি মেডিসিনের ও ২টি মেডিকেল কলেজে থোরাসিক সার্জারির পদ সৃষ্টি হয়েছে।
 
সারাদেশে বক্ষব্যাধী রোগীর চাহিদা অনুসারে হাসপাতাল ও চিকিৎসক নেই উল্লেখ করে আরো জানানো হয়, রাজধানীতে এ বিষয়ক সরকারি মাত্র দুইটি হাসপাতাল। মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও শ্যামলীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল। যেখানে সব মিলিয়ে ৬০০টি শয্যা রয়েছে। রোগীদের সংখ্যা অনুসারে এই সেবার ব্যবস্থা খুবই নাজুক বলা চলে। তাছাড়া ঢাকা ও কয়েকটি বিভাগীয় শহর ছাড়া সব জায়গায় এমবিবিএস ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন। যেখানে এ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খুবই প্রয়োজন। এই পদ সৃষ্টি করা ছাড়াও দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলজে রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ খোলা খুবই জরুরি। এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় অনুষ্ঠানে।
 
দি চেস্ট অ্যান্ড হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মির্জা মোহাম্মদ হিরণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, সংগঠনটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক বিশ্বাস আখতার হোসেন, সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. আব্দুর রউফ, বৈজ্ঞানিক সাব-কমিটির চেয়ারম্যান ডা. মো. সাইদুল ইসলাম, শ্যামলীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. আবু রায়হান প্রমুখ।   

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৯
এমএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।