ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

চিকিৎসকের অবহেলায় কিডনিহীন রোগী!

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮
চিকিৎসকের অবহেলায় কিডনিহীন রোগী! রওশন আরা

ঢাকা: একটি কিডনি নষ্ট থাকায় অপারেশন করে অকেজো কিডনিটি ফেলে দিতে গিয়ে চিকিৎসকের অসতর্কতায় দুটো কিডনি ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। বাম কিডনি নষ্ট থাকা রওশন আরা নামে এই রোগীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাপেক্ষে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

রোগী রওশন আরার ছেলে রফিক সিকদার বাংলানিউজকে জানান, বাম পাশের কিডনি জটিলতা নিয়ে মাকে গত ২৬ আগস্ট বিএসএমএমইউ’তে ভর্তি করাই। ভর্তি করার পর বেশ কিছু পরীক্ষা করানোর পর গত ৫ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা বাম পাশের কিডনি রাখতে চাননি। বাম কিডনি তখন কিছুটা কাজ করছিল। আর ডান পাশের কিডনি সম্পূর্ণ ভালো ছিল।

তিনি আরো বলেন, অপারেশনের পর পোস্ট অপারেটিভে নেওয়ার পর মায়ের জ্ঞান ছিল কিন্তু শরীর ফুলে যাচ্ছিল। তবে ক্যাথেটার লাগানো থাকার পরও তার প্রস্রাব হচ্ছিল না। দায়িত্বরত চিকিৎসকরাও এটা আমাকে জানিয়েছিল। দুপুরে অপারেশনের পর রাত সাড়ে আটটার পর বলা হলো, আইসিইউ সার্পোট লাগবে। কিন্তু তখন বিএসএমএমইউ’তে আইসিইউ খালি না থাকায় তারা আমাদের বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিতে বলেন। তারা বলেন, রোগীর ইউরিন তৈরি হচ্ছে না। আর বমি হচ্ছিলো।

পরে রাতেই রোগীকে মগবাজারের ইনসাফ বারাকা হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে সিটিস্ক্যান করার পরামর্শ দিলে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে তখনই সিটিস্ক্যান করানোর পরই ধরা পড়ে রোগীর একটি কিডনিও নেই। এরপর ইনসাফ বারাকা হাসপাতাল থেকে রোগীকে আবার বিএসএমএমইউতে নিতে বলা হয়। এবং বিএসএমএমইউতে ডায়ালাইসিস করানো শুরু হয়। ডায়ালাইসিস শুরু হলেও রোগীর বেড়ে যাওয়া ক্রিয়েটিনিন কমছিল না।

জটিলতা বেড়ে গেলে ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিফ কনসালটেন্ট ও কিডনি রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ সাহেবের কাছে নেওয়া হয় রওশন আরাকে। এই চিকিৎসকও রোগীর কোন কিডনি নেই তা নিশ্চিত করেন। তাই আবার রফিক সিকদার বিএসএমএমইউ’তে ফিরে আসেন।

শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিএসএমএমইউ’তে চিকিৎসাধীন রওশন আরার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, অপারেশন করার আগে প্রস্রাব হয়েছে। অথচ এই এতদিন ধরে প্রস্রাব হচ্ছে না।  

পাশে থাকা তার বোন জাহেদা বলেন, রওশন আরার পুরো শরীর ফুলে গিয়েছে।
  
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রওশন আরার জন্মগতভাবেই ঘোড়ারখুর আকৃতির মতো জোড়া কিডনি (দুই কিডনি একসঙ্গে লাগানো) ছিল। এটি ফেলার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। এ ধরনের কোনও পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, কিডনি রাখলে কাজ করবে না কারণ অস্ত্রোপাচারের সময় রক্তপাত থামানো যাচ্ছিলো না। তখন তার ডান পাশের ভালো কিডনিটিও ফেলে দিতে হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেও এটাই নিয়ম। কিন্তু এক্ষেত্রে তখন চিকিৎসকদের রোগীর স্বজনদের এ বিষয়ে কাউন্সিলিং করানো এবং তাদের বিষয়টি সর্ম্পূণ জানানো যে, জোড়া কিডনি বলে সেটি রাখা সম্ভব না। জোড়া কিডনি হলেও যদি কোনও ধরনের জটিলতা তৈরি না হয় তাহলে মানুষ বছরের পর বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু চিকিৎসকরা সেটি করেননি।
 
জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল বাংলানিউজকে জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচারের সময় বামদিকে এমন ইনফেকশন থাকায় রক্তনালি, খাদ্যনালি, কিডনি বোঝা খুব কঠিন হয়ে যায়। প্রচণ্ড রক্তপাত হয়। রক্তপাত বন্ধ হলেও অবস্থা খারাপের দিকে যায় এবং আইসিইউতে নেয়ার জন্য বলি।
  
ডান দিকের কিডনি আছে নাকি নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, রির্পোট অনুযায়ী নন ভিজ্যুয়ালাইজেশন। এখানে অন্য কোন অবসেন্ট বা অন্য কিডনি কাজ করছে না। যখন শরীরের কোনও অর্গানের অস্ত্রোপচার করা হয় তখন দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে থেকে সেখানে ভালোভাবে বোঝা যায় না। তাই আমরা পুনরায় পরীক্ষা করি নাই। আমরা আপাতত ডায়ালাইসিস করছি।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক দা. হারুণ আর রশিদের নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জমা হবে। এরপর আসল ঘটনা জানা যাবে। আর এখন ওই রোগীর সুচিকিৎসার জন্য ৬ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮
এমএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।