ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

প্রাপ্ত বয়স্কদের ১৮ ভাগ উচ্চ রক্তচাপে, অর্ধেকই জানে না

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৮
প্রাপ্ত বয়স্কদের ১৮ ভাগ উচ্চ রক্তচাপে, অর্ধেকই জানে না বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে আইসিডিডিআর,বি'র সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনার। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: উচ্চ রক্তচাপ রোগটি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু এ বিষয়ে এদেশের অনেক মানুষই জানেন না। বাংলাদেশে, প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে শতকরা ১৮ ভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।তবে তাদের মধ্যে অর্ধেকই জানেন না যে তাদের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। প্রাথমিক অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা গেলে ওষুধ সেবন না করে শুধু জীবনাযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। 

বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রতি ৩ জনের মধ্যে ২ জনের রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত। যা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ রোগের কারণ।

এসবের মধ্যে আছে হৃদরোগ (অসংক্রামক ব্যাধিজনিত মৃত্যুর শতকরা ৫০ ভাগের জন্য দায়ী হৃদরোগ) এবং কিডনির রোগ। এছাড়া প্রতি ৩ জনের মধ্যে ২ জন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগী নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন না। একারণে জীবনঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।

উচ্চ রক্তচাপ সংক্রান্ত এসব তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) গবেষকদের  “COBRA-BPS Trial (Control of Blood Pressure and Risk Attenuation – Bangladesh, Pakistan and Sri Lanka)” নামক নতুন একটি গবেষণাপত্র থেকে।
 
বৃহস্পতিবার (১৭ মে) আইসিডিডিআর,বি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রাম, “Hypertension! The Silent Killer! Reaching the Unreached” শিরোনামে এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়। বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস পালন উপলক্ষে আইসিডিডিআর,বি'র সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।  

সেমিনারে আইসিডিডিআর,বি'র এই মাল্টি কান্ট্রি ট্রায়ালের বাংলাদেশ অংশের প্রধান ডা. আলিয়া নাহিদ জানান, “প্রাপ্ত বয়স্কদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং রক্তচাপ হ্রাস করতে স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকদের মাধ্যমে একটি সহজ পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়েছে, যা জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সহজেই সংযুক্ত করা সম্ভব। আর তাতেই উচ্চ রক্তচাপের ঝুকি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ” 

এছাড়া তিনি এই  ট্রায়াল থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করেন যার শিরোনাম ছিল ”কোবরা বিপিএস: বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে জোরদার করার একটি কার্যকর পদ্ধতি” 

এছাড়া গবেষণাটির প্রধান গবেষক সিঙ্গাপুরের ডিইউকে-এনইউএস মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক তাজিন এইচ. জাফর গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের উপর আলোকপাত করতে গিয়ে একটি ভিডিওবার্তায় বলেন, “প্রথাগতভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা সর্বদাই সংক্রামক ব্যাধির উপর জোর দিয়ে এসেছে এবং অসংক্রামক ব্যাধিকে অবহেলা করেছে। এই বিষয়ে আমাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। ”


অনুষ্ঠানে অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন প্রোগ্রাম সম্পর্কে ধারণা দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আব্দুল আলিম। তিনি এইচপিএনএসপি (২০১৭-২২)-এর এনসিডিসি অপারেশনাল প্ল্যান, প্রাথমিক পর্যায়ের রেফারেল সেবা এবং কিছু নির্দেশিকার উপর আলোকপাত করেন। সম্প্রতি সরকার এ সকল নির্দেশিকা তৈরি করেছে।  

এ নির্দেশিকা অনুসারে বাংলাদেশে অসংক্রামক ব্যাধিজনিত মৃত্যুহার এবং অসুস্থ্যতার হার  হ্রাসের উদ্দেশ্যে ঝুঁকি হ্রাসে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ও রোগের ঝুঁকি সনাক্ত করে সঠিক ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে প্রমাণভিত্তিক পদক্ষেপগুলি শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে এনসিডিসি অপারেশনাল প্ল্যান এইচপিএনএসপি (২০১৭-২২) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এরই মধ্যে দুইটি উপজেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্তকরণ এবং রেফারেল সার্ভিস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং উচ্চ রক্তচাপের স্ক্রিনিং, রেফারেল এবং চিকিৎসা সম্পর্কিত নির্দেশিকা অনুমোদিত হয়েছে।  

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এবং রিসার্চ ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী, অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ানস অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এস.এম. মোস্তফা জামানসহ প্রমুখ।  

বৈজ্ঞানিক সেশনের পরেই ছিল উন্মুক্ত আলোচনাপর্ব। এর সঞ্চালক ছিলেন  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট) অধ্যাপক এ.এইচ.এম. এনায়েত হোসেন। এই সেশনে আরো অংশগ্রহণ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. নূর মোহাম্মদ, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. এম এ জলিল, জাতীয় অধ্যাপক এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) আব্দুল মালিক প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৮
এমএএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।