ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

শীতে রোগী বেড়েছে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
শীতে রোগী বেড়েছে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে আইসিডিডিআরবি’র প্রবেশমুখ

ঢাকা: প্রতি বছর বর্ষার আগে ও শীতের শুরুতে ডায়রিয়া রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে শিশুরা শীতের শুরুতে ডায়রিয়া ও কলেরা রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ডায়রিয়া ও কলেরা রোগের সবচেয়ে ভাল চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় আইসিডিডিআরবি (ইন্টান্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশ) হাসপাতালে।
 

রোগীদের ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচসহ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার শীতের শুরু থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এখানে।

 

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে সরেজমিনে ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, মহাখালীর এই হাসপাতালটিতে গত ২ মাসে (নভেম্বর ও ডিসেম্বর আংশিক) দৈনিক গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে কোনো রোগী হাসপাতালে ২ থেকে ৫ দিন অবস্থান করে চিকিৎসা নিয়েছেন। আবার কোনো রোগী ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।

এখানে ভর্তি হতে রোগীদের কাছ থেকে কোনো রকম ফি নেয়া হয় না। তাদেরকে দিতে হয় না সিট ভাড়া অথবা ওষুধের মূল্য। এমনকি খাবারের জন্যও কোনো ফি নেয়া হয় না।  

ডেমরা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী মতি মিয়া (৫৫) সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে পাতলা পায়খানা জনিত সমস্যা নিয়ে আইসিডিডিআরবিতে আসেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি, আমাদের দেশে এমন একটি হাসপাতাল আছে। অন্য হাসপাতালের মতো এখানে ভর্তি হতে কোনো সমস্যা হয়নি। গভীর রাতে এলেও সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। খাবার-দাবারও খুব উন্নতমানের। ক্লিনার আয়া কেউ কোনো টাকা পয়সা চায় না। এরকম আরো হাসপাতাল ঢাকায় থাকা দরকার বলে তিনি জানান।

রিমু সাহা এসেছেন মান্ডা থেকে। গতকাল সোমবার তার ৪ বছর বয়সের শিশু অর্পনের পাতলা পায়খানা ও বমি হয়। অনেকবার হওয়ার পর তিনি স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তবে বিকেল নাগাদ কোনো উন্নতি না হওয়ায়, ছেলেকে নিয়ে আসেন আইসিডিডিআরবিতে। এখানে আনার সঙ্গে সঙ্গে তার ছেলেকে ভর্তি করে স্যালাইন ও ওষুধ দেয়া হয়েছে। ছেলে এখন অনেকটা ভাল।

রিমু সাহা বাংলানিউজকে বলেন, এখানের চিকিৎসা সেবা খুবই ভাল। ছেলের পাতলা পায়খানা হওয়ার কোনো কারণ জানাতে না পারলেও ঠাণ্ডার কারণে হতে পারে বলে তিনি জানান।  

হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এটেনডেন্ট গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদের হাসপাতাল অনেক পরিষ্কার এটা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীরা হাসপাতালটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, শীতের আগমনের সময় রোটা ভাইরাস জনিত কারণে ডায়রিয়া ও কলেরার প্রাদুর্ভাব হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছরই এটা হয়ে থাকে। এবার শীতেও রোগীর সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি জানান।

এ থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবাইকে পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। শিশুদের ঠাণ্ডা লাগানো থেকে বিরত রাখতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সক্ষমতা অনেকের নেই। তবে যে পানি দিয়ে হাত ধৌত করবেন সেটাকে অবশ্যই পরিষ্কার পানি হতে হবে। আর এক বোতল পানিতে ৩ টাকা দামের একটি মিনি শ্যাম্পু মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে অনেকদিন ধরে হাত ধোয়া যায়। এটা করলেও অনেক টাকা সাশ্রয় হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এর বরাত দিয়ে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, হু’র মতে ৫০ ভাগ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব শুধু হাত পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে। তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি হাত পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি।

শীতের শুরুতে আইসিডিডিআরবিতে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সময়টাতে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে ৬০/৬৫ শতাংশ শিশু এবং বাকিরা বিভিন্ন বয়সের হয়ে থাকেন।

ডিসেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি রোগী এসেছিল ৫, ৭ ও ৮ তারিখে। ওই তিন দিন দৈনিক গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। এছাড়া নভেম্বর মাসের ১ ও ১৩ তারিখে দৈনিক গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এমনিতে গড়ে দৈনিক সাড়ে চার শতাধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা এখানে দেয়া হয়। শীতের সময় কখনো কখনো রোগীর সংখ্যা হাজার হয়ে যায়।   

তিনি আরও বলেন, জায়গার অভাবে এখান থেকে কোনো রোগী ফেরত পাঠানো হয় না। আমাদের হাসপাতালে সাড়ে তিন’শ রোগী রাখার ব্যবস্থা থাকলেও আমরা কখনো কখনো সহস্রাধিক রোগী রেখেও চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। তখন তাবু খাঁটিয়ে, বারান্দায়, করিডোরে বেড পেতে রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়।

বাংলাদেশ সরকার আসছে ২০১৮ সাল থেকে রোটা ভাইরাসের প্রতিরোধক টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে। আশা করা যায় ২০১৮ সালের পর বাংলাদেশে ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়ার প্রকোপ অনেকটা কমে আসবে। এই টিকা বর্তমানেও বাজারে পাওয়া যায়। এটা যে কেউ ইচ্ছা করলে কিনে ব্যবহার করতে পারেন।

হাসপাতালের ফান্ডিং কোথায় থেকে হয় এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আইসিডিডিআরবি পরিচালিত হয় অনুদানের টাকায়। এই সংস্থার তিনটি (মহাখালী-মিরপুর-চাঁদপুরের মতলব) হাসপাতালে প্রতি বছর ২ লাখেরও বেশি রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে খরচ হয় পাঁচ মিলিয়ন ডলার। এই খরচ বাংলাদেশ সরকার, ইউকে এইড, কানাডার সিডা ও সুইডিস সিডা ছাড়াও বিভিন্ন দাতা সংস্থা যোগান দিয়ে থাকে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি যদি আইসিডিআরবি’র তহবিলে অনুদান দিতে চান তিনি দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার আয়কর রেয়াত পাবেন।

আইসিডিডিআরবি’ হাসপাতালের প্রধান ডা. আজহারুল ইসলাম খানের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার কার্যালয়ে গেলে জানা যায় তিনি কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। পরে মোবাইল ফোনে কথা হয় তার সঙ্গে। ঢাকার বাইরে অবস্থান করায় অফিসিয়াল কোনো কথা না বলে অধীনস্থদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
এএইচ/আরআই          

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।