গত সোমবার (০৫ জুন) মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় রিকশা চালাতে গিয়ে ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে তালেবের। অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পু্নর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
স্বামীর সুচিকিৎসা পেতে দৌঁড়াদৌঁড়ি করছেন তালেবের স্ত্রী তাহিরন খাতুন। কারো সাহায্য-সহযোগিতাও পাচ্ছেন না তিনি। হাসপাতালের ব্রাদারদের (পুরুষ নার্স) কেউ কেউ সহযোগিতা করলেও টাকা চাচ্ছেন তাহিরনের কাছে। কিন্তু অবৈধ এ আবদার মেটানোর সক্ষমতা নেই রিকশাচালক আবু তালেবের পরিবারের। তাহিরন খাতুনের অভিযোগ, তারপরও পঙ্গু হাসপাতালের ব্রাদাররা জোরপূর্বক টাকা আদায় করেছেন তার কাছ থেকে। যেটিকে ‘বকশিশ’ বলে দাবি করে থাকেন তারা।
তিনি বলেন, ‘রিকশা বাড়ি খাইয়া স্বামীর পাও ভাঙছে। একসঙ্গে আশটোশো (৮০০) ট্যাকা নিইচে। তারা (ব্রাদার) ১০০ ট্যাকা বকশিস নিইচে। বলে, খালা বকশিশ দেও। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে বকশিশ নিইচে। বকশিশ দিয়া লাগে আমার জরুরি দরকার বইলে। বকশিশ দিলে তারা স্বামীর পাওয়ে ভালোমতো ব্যান্ডেজ করে দেয়। ওষুধও নাগিয়ে দেয়’।
বুধবার (০৭ জুন) হাসপাতালের সামনে বকশিশের দাবি নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন হাসপাতালের ব্রাদার ও রোগীর স্বজনেরা।
ছেলের ভাঙা পায়ের চিকিৎসা করতে এসেছেন শহিদুল ইসলাম। ছেলে রিমনের মটরবাইকে ডান পা ভেঙে গেছে। পায়ের অপারেশনও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন বাসায় নিয়ে যাওয়ার পালা। অপারেশন শেষে ওটি’র সামনে ব্রাদারেরা প্লাস্টার করে দেন। এজন্য ৩০০ টাকা বকশিশের আবদার করেন শহিদুলের নিকট। শহিদুল ১০০ টাকা দিতে চাইলেও নিতে রাজি নন ব্রাদারেরা।
এ নিয়েই জরুরি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারের সামনে জটলা। শহিদুল বলেন, ‘ভাই ছেলের বিয়ে দিচ্ছি না মেয়েরে বিয়ে দিচ্ছি, বলেন দেখি? যে কারণে বকশিশ দেওয়া লাগবে। ছেলের পা ভাঙছে, সবার মনে অশান্তি। এর মধ্যেই ব্রাদাররা বকশিশ চেয়ে বসে আছেন’।
সরেজমিনে ঘুরে অভিযোগ পাওয়া গেছে, ব্রাদাররা ছাড়াও টাকা ছাড়া কোনো কাজ করতে চান না ওয়ার্ডবয়, ক্লিনার ও পিয়নরাও।
নিটোরের জরুরি বিভাগ, আউটডোর, ইনডোর, ১০টি অপারেশন থিয়েটারে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ হাত-পা ভাঙা রোগীর প্লাস্টার করা হয়। কয়েকশ’ রোগীর ড্রেসিংও করা হয়। অপারেশনের পর রোগীদের ড্রেসিং করাতেও ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা আবদার করে বসেন ব্রাদাররা। ড্রেসিংয়ের জন্য হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হলেও তাদের দাবি, নিজ উদ্যোগে ভালোমতো ওষুধ লাগানো হয়েছে। তাই বাড়তি টাকা দিতে হবে।
কোনো রোগী বেড পেলেও তার কাছ থেকে ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা জোরপূর্বক আদায় করেন ব্রাদারেরা।
হাত-পা ভাঙা রোগী নিয়ে হাসপাতালে অনেক সময় অসহায় হয়ে পড়েন স্বজনেরা। এসব অসুবিধা দূর করতেও বকশিশের দাবি পূরণে বাধ্য হন তারা।
নিটোর কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘রোগী বা স্বজনদের কাছ থেকে বকশিশ হোক আর যাই হোক, টাকা দাবি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এমনটি হওয়ার কথা নয়। বকশিশের বিষয়টি জানলাম। এটা আমি খতিয়ে দেখবো’।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৩ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর