ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

জানান আপনার সমস্যা ও মাতামত

বাচ্চাদের জন্য খেলাধুলা-আনন্দফুর্তিও গুরুত্বপূর্ণ

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৪
বাচ্চাদের জন্য খেলাধুলা-আনন্দফুর্তিও গুরুত্বপূর্ণ

আমি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিকে আমাদের বসবাস।

আমার বাচ্চার নাম তানজিব উল ইসলাম অনিক। তার বয়স ৭ বছর। সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। শিশু শ্রেণি খুব মনোযোগের সহিত পড়ালেখা করে ভারো ফলাফল করে ১ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। এর পর থেকে ক্রমান্বয়ে সে পড়ালখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পরীক্ষায় ফলাফল বরাবর খারাপ করতে থাকে। স্কুলে তার বয়সী কিছু খারাপ ছেলের সঙ্গে মেলামেশা করে এবং তাদের সাথে বসে।

তাদের থেকে আলাদা করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। ক্লাস থেকে খালি খাতা নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। ফলে আমরাও অনুমান করতে পারি না যে, শিক্ষক আজকে ক্লাসে কি পড়িয়েছে?

প্রথমে তাকে অনেক বুঝিয়ে চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। পরে বকাঝকা করে ও হালকা শাস্তি  দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। নিজের থেকে সে পড়তে বসে না। অনেক বকাঝকার পর বসে কিন্তু পড়ার প্রতি তার কোনো মনোযোগ আছে বলে মনে হয় না।

কি করা যায়, আমাকে সে পরামর্শ দিয়ে বাধিত করবেন।

আপনি সমস্যাটি নিয়ে বেশ চিন্তিত বোঝাই যাচ্ছে। বিষয়টি চিন্তা করার মতোই, তাতে সন্দেহ নেই।
child_1
আপনার ছেলেটির এমনিতে স্বাভাবিক বুদ্ধি কেমন, তা আপনার লেখা থেকে বোঝা গেলো না। যদি বুদ্ধি স্বাভাবিক হয়ে থাকে, যদি সময় মতো কথা বলা, দাঁড়ানো ঠিক ভাবে হয়ে থাকে, তবে এটিকে আচরণগত সমস্যা হিসেবেই দেখতে হবে।

ও এখনো অনেক ছোট, তাই খুব বেশি চিন্তিত হবেন না। তবে অবশ্যই বিষয়টিকে একেবারে পাত্তা না দেওয়াটাও ঠিক হবে না।

খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মেশা, তাদের সাথে বসা ভালো কিছু নয়। তার থেকেও বড় কথা কেন সে এটা করছে সেটা ভালো করে বোঝার চেষ্টা করুন।

পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ কম হবার আরো কোনো কারণ আছে কিনা সেসব জানতে চেষ্টা করুন। আপনার বাসায় তার জন্য পড়ার যথেষ্ট স্বাভাবিক পরিবেশ বা পরিস্থিতি আছে কিনা সেসবও খেয়াল করুন। পড়াশুনায় দরকারি ও মজার বিষয় সেসবও বুঝানোর চেষ্টা করুন। পড়াশুনাটা অতিরিক্ত চাপ কিনা সেটাও বোঝার চেষ্টা করুন।

মনে রাখতে হবে, ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য খেলাধুলাসহ অন্যান্য আনন্দফুর্তিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবসর সময়টাও অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। অবসর সময় সে কি করে বা করতে পছন্দ করে সেসবও খেয়াল করুন। সব সময় পড়ালেখার কথা বলা বা কঠিন নিয়মের ভিতর দিয়ে পরিচালনা করাও অনেক সময় হিতে বিপরিত হতে দেখা যায়। সুতরাং সব কিছুই ভালোভাবে লক্ষ রাখতে হবে।
child_2
বাসার ভেতরে সবকিছু মজায় মজায় করার চেষ্টা করবেন। কোনো একটি বিষয়ে একেক জন যাতে একেক মতামত না দেয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যেমন খেলাধুলা, পড়া, ঘুরতে যাওয়া এসব বিষয়ে ছেলেটির ভেতর যাতে কোনো ধরনের কনফিউশন বা দোদুল্যমান অবস্থা তৈরি না হয় সেটিও খেয়াল করুন। মা বাবা বা পরিবারের অন্য সবাই একই বিষয় একই রকম করে বোঝানোর চেষ্টা করুন।

যদি ইতোমধ্যেই এসব করা হয়ে থাকে। তবে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে স্কুলটাও পরিবর্তন করতে পারেন।

তবে তার আগে অবশ্যই আগে উল্লেখ করা বিষয়গুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিতে হবে। কারণ ছাড়া স্কুল পরিবর্তন করতে গেলে সেটাও আবার তার মনে আঘাত লাগতে পারে। মোটকথা সবকিছু ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে।

প্রিয় পাঠক, ‘মনোকথা’ আপনাদের পাতা। মনোরোগ নিয়ে যে কোনো মতামত ও আপনার সমস্যার কথা জানাতে পারেন আমাদের। আমরা পর্যায়ক্রমে অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনাদের প্রশ্নের জবাব জানিয়ে দেবো। আপনি চাইলে গোপন রাখা হবে আপনার নাম-পরিচয় এমনি কি ঠিকানাও।

সমস্যার কথা জানানোর সঙ্গে সমস্যার বিস্তারিত বিবরণ, আপনার নাম, বয়স, কোথায় থাকেন, পারিবারিক কাঠামো এবং এজন্য কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন কি না এ বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের জানান। শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই সমস্যা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা জানানো সম্ভব হবে।
 
এছাড়া মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত বা এ বিষয়ে বিশেষ যে কোনো লেখা যে কেউ পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের।   

আপনার সমস্যা, মতামত বা পরামর্শ ও লেখা পাঠানোর জন্য আমাদের ইমেইল করুন-


biplob

 

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।