ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

পেনিক ডিজঅর্ডার একটি মানসিক রোগ

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১২ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৩
পেনিক ডিজঅর্ডার একটি মানসিক রোগ

শারীরিক রোগ ভেবে যে মানসিক রোগটির কারণে মানুষ সবচেয়ে বেশি হাসপাতালে ভর্তি হয়(বা হাসাপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে দেখা করতে যায়) তার নাম ‘প্যানিক ডিসর্ডার’। প্যানিক ডিসর্ডার এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে শুরু হয় এবং তার তীব্রতা সামান্য সময়ের মধ্যে একেবারে উর্ধ্বে উঠে আসে।



এ রোগে আক্রান্তের মনে হয়, এখনই আমি ‘মারা যাবো’ বা ‘জ্ঞান হারাবো’। মারা যাওয়ার কারণ হিসেবে সবচেয়ে বেশি যে ভাবনাটি দেখা যায় সেটি হচ্ছে- হার্ট অ্যাটাক। তারপরেই থাকে স্ট্রোক করার ভয় তাকে পেয়ে বসে। অনেকে হাইপারটেনশান বা ব্লাড প্রেশার নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়েন।

প্যানিক ডিসর্ডারের কারণে মানুষের ব্যক্তিগত পারিবারিক কিংবা সামাজিক জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এমনও অনেক রোগী দেখা যায়, যারা নিজের মৃত্যুর অবশ্যম্ভাবী ভেবে সম্পদ ও সংসারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব অন্যের হাতে তুলে দেন।

সারাক্ষণ মনের মধ্যে একটা ভয় নিয়ে চলতে থাকেন, কখন আবার শুরু হয়! কোনো কাজেই মনোযোগী হতে পারেন না। ভয় হয়-যদি একা থাকেন কিংবা তার ধারেকাছে পরিচিত কেউ না থাকে, তবে তার কী হবে?

রোগীর মনে হয়, তার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বুক ধড়ফড় করা, হাত-পা অবশ হয়ে আসা, মুখ শুকিয়ে আসা, হাত-পা কাঁপাসহ বেশ কিছু শারীরিক উপসর্গও দেখা দেয়। অনেক সময় প্রচুর ঘাম হতে পারে, সেই সঙ্গে শরীরের কোনো কোনো অংশ অবশ হয়ে যাচ্ছে বলেও মনে হতে পারে।

বস্তুত প্যানিক ডিসর্ডার শরীরের কোনো রোগ বা সমস্যা নয়। এটি একটি মানসিক রোগ। দেখা যায়, রোগীরা সমস্যা নিয়ে বারবার বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন-ইসিজি, ইকো থেকে শুরু করে হার্টের এনজিওগ্রাম পর্যন্ত অনেকের করা হয়ে যায়। বিভিন্ন রকমের রক্ত পরীক্ষা তো আছেই। সে সঙ্গে অনেক সময় রোগী নিজেও বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করিয়ে নেন নিজের সমস্যাটি আবিষ্কারের জন্য।

কোনো পরীক্ষাতেই কোনো কিছু ধরা না পড়াতে অনেকে ভাবেন- ডাক্তার মনে হয় ঠিক মতো রোগটি ধরতে পারছেন না। কিংবা পরীক্ষাগুলোর রেজাল্ট হয়তো ঠিক মতো আসছে না। অনেক ডাক্তারও রোগীকে বলে দেন, ‘আপনার কোনো রোগ নেই’। আর এতে রোগী বা রোগীর আত্মীয়-স্বজন আরো বেশি দ্বিধার মধ্যে পড়ে যান। ভাবেন- তাহলে এমন সমস্যা হচ্ছে কেন? এমনকী অনেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পর্যন্ত চলে যান।

এটি একটি মানসিক রোগ, এ বিষয়টি বুঝতে অনেক সময় খুব দেরি হয়ে যায়। অনেকে বারবার ব্যাখ্যার পরও মানসিক রোগ হিসেবে মেনে নিতে চান না। কিংবা মানসিক ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে কুণ্ঠা বোধ করেন।

মূলত প্যানিক ডিসর্ডার সঠিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ ভালো হয়। এটি যে কোনো বয়সেই হতে পারে। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রকাশভঙ্গিটা বুঝতে অনেক সময় দেরি হতে পারে।

প্যানিক ডিসর্ডার কেন হয়?

অনেক মানসিক রোগের মতো সরাসরি কোন কারণ বের করতে না পারলেও বংশ পরম্পরায় এ রোগ চলতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরে চলা মানসিক চাপও অনেক সময় এ-রোগ প্রকাশের কারণ হতে পারে।
এছাড়া অন্যান্য অনেক রোগের সাথেও প্যানিক ডিসর্ডার থাকতে পারে। যেমন- ডিপ্রেশন, পিটিএসডি, মাদকাসক্তি কিংবা বিভিন্ন রকম দু:শ্চিন্তা-উদ্বেগ (অ্যাংজাইটি)। অনেক সময় বিভিন্ন ওষুধের কারণেও এ রোগ হতে পারে।

তবে মনে রাখতে হবে, পেনিক ডিসর্ডার ডায়াগনসিস করতে গিয়ে কখনো যেন সত্যিকারের কোনো শারীরিক সমস্যাকে উপেক্ষা করা না হয়।

যেসব শারীরিক সমস্যার কারণে এমন হতে পারে, তাদের মধ্যে হরমোনের সমস্যা (থাইরয়েড, সুপ্রারেনাল), হার্টের বিশেষ কিছু সমস্যা অবশ্যই গুরুত্বসহ দেখতে হবে। কোনো কোনো ওষুধও প্যানিক অ্যাটাকের বড় কারণ হতে পারে।

প্যানিক ডিসর্ডারের চিকিৎসাপদ্ধতি সাধারণ। কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ, সে সঙ্গে সাইকোথেরাপি এবং রিলাক্সেশান এক্সারসাইজ জরুরি।

এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, পরিবারের অন্যদের ইতিবাচক ও সহায়ক ভূমিকা অনেক বেশি প্রয়োজন। অন্যদেরও বুঝতে হবে এটি একটি রোগ এবং সেই মতো রোগীকে সহায়তা করতে হবে।

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর ও ‍জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।