ঢাকা, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ জুন ২০২৪, ০৯ জিলহজ ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৪
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি

ঢাকা: স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে নানা প্রতিষ্ঠান ও পরিধি বৃদ্ধি পেলেও আইন, নীতিমালার সংস্কার ও উন্নয়ন সে অনুসারে হয়নি।

আইনের দুর্বলতার কারণে মানসম্মত আর মানহীনদের চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থার মানহীনদের ভোগান্তির দায় সকলকে বহন করতে হচ্ছে।

আইনের সীমাবদ্ধতা, নজরদারির অভাব, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি) না থাকাসহ নানা কারণে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো মানুষের আস্থা হারাচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনটি প্রণয়নের কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলমান থাকলেও এখনো সম্পন্ন করা যায়নি। এ আইনকে দুর্বল করতে স্বার্থান্বেষীরা সক্রিয় রয়েছে। সরকারকে সতর্কতার সাথে স্বাস্থ্যসেবার জন্য পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করা জরুরি।

শনিবার (২৫ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-পবা ও বারসিক আয়োজিত সভায় এ দাবি জানানো হয়। সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম।  

বক্তারা খসড়া আইনে পাবলিক হাসপাতাল স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার পৃথক সংজ্ঞা ও সুনির্দিষ্ট করার পাশাপাশি সরকার যাতে প্রয়োজনে পাবলিক হাসপাতালকে বিশেষ সুবিধা দিতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা, রোগীর সুরক্ষায় ও চিকিৎসা অবহেলা নিরুপণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্যসেবায় খাদ্য, ওষুধ মালামাল, উপকরণ সরবরাহকারীর দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা, চিকিৎসা ব্যয় কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা, চিকিৎসা ব্যয় কমাতে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম যুক্ত করা, স্বাস্থ্য সেবার মান ও যথার্থতা পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন, রেফারেল ইত্যাদি বিধান যুক্ত করা, ডিজিটাল রেজিস্টার ব্যবস্থার বিধান রাখা, জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত অভিযোগ প্রদানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কমিটি গঠন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রশাসনিক জরিমানা প্রদানের ব্যবস্থা রাখা, পরিবেশ আদালত-ওষুধ আদালতের মতো স্বাস্থ্যসেবা আদালত গঠন এবং  সাধারণ নাগরিকদের সহজে অভিযোগ ও মামলা দায়ের করার ক্ষমতা প্রদান করার সুপারিশ করেন।

বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, চিকিৎসার ব্যর্থতার দায় নেওয়ার পাশাপাশি আগামী দিনে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। আইনের উদ্দেশ্য শুধু এ খাতের মানুষকে সাজা প্রদান নয়, বরং স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত সকলকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সঠিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, প্রস্তাবিত আইনে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলো আরও সুনির্দিষ্ট হওয়া জরুরি। আইনটি পাস হলে বাস্তবায়নের বিষয় চলে আসবে। আইনে যদি বাস্তবায়নের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে না থাকে তাহলে বাস্তবায়নে দুর্বলতা তৈরি হতে পারে। সেজন্য আইন বাস্তবায়নে সকলকে যেন দায়বদ্ধ করা যায়, খসড়া আইনে প্রশাসনিক জরিমানার পাশাপাশি সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য একটি বিশেষ আদালত গঠন করা যেতে পারে।

পাভেল পার্থ বলেন, সর্বশেষ জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে স্বাস্থ্যখাতের ওপর বিরূপ প্রভাবকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যের প্রভাব মোকাবিলায় বিশেষ অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন খাদ্য উৎপাদন ও জনস্বাস্থ্যসহ মানুষের জীবনযাপনের ওপর প্রভাব ফেলছে। এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো খসড়া আইনে যুক্ত করা যেতে পারে।

ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের অধ্যাপক ডা. ফিরোজ আহমেদ খান বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বলতে চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারী–দুটো পক্ষকে বোঝাবে। কিন্তু খসড়া আইনে উভয় পক্ষকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। বর্তমানে চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্র সুরক্ষিত নয়। অবহেলাজনিত কারণে ক্রিমিনাল কেস দাখিল করা হচ্ছে এবং অবহেলা বা অপরাধ প্রমাণের আগেই চিকিৎসকদের হাতকড়া পরানো হচ্ছে। পৃথিবীর কোনো দেশে অবহেলা ক্রিমিনাল কেস হিসাবে গণ্য হয় না।

সভাপতির বক্তব্যে পবার নির্বাহী সভাপতি ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্যসেবার সাথে চারটি পক্ষ যুক্ত। প্রথমে সরকার, সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করা। সে আইনের অধীনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যসেবার মান সমুন্নত রাখা ও বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। সরকার প্রণীত আইন দ্বারা তদারকি কর্তৃপক্ষের অধিকার, দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতা সুনির্দিষ্ট করা। দ্বিতীয়ত, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সেবা গ্রহীতা হিসাবে যারা আসেন, তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা। তৃতীয়ত, সেবাদাতা ও তার দলের প্রতিটি সদস্যের দায়িত্ব ও অধিকার সঠিকভাবে নির্দিষ্ট করা। একইসঙ্গে, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও অধিকার নির্দিষ্ট করা। সর্বশেষ, স্বাস্থ্যসেবার উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এজাতীয় উপযুক্ততার মানদণ্ড নির্ধারণ, তাদের দায়িত্ব ও অধিকারের জায়গাটি সুপরিষ্কার করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৪
এমএমআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।