ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে শোকজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৪
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে শোকজ

ঝালকাঠি: নির্বাচনকালীন সময়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত, সরকারি দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ঢাকায় অবস্থান করায় ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামীম আহমেদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।  

বরিশাল বিভাগের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল তাকে শোকজ করেন।

 

গত শনিবার (৬ জানুয়ারি) ২৭.২৪-০০১ স্মারকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কঠোর নির্দেশনা অমান্য করায় এ শোকজ দেওয়া হয়েছে তাকে।  

ইতোপূর্বে তত্ত্বাবধায়কের বিভিন্ন দুর্নীতি সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ করায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার অজুহাতে নিজেকে সৎ দাবি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। এবার ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আলোচিত সমালোচিত সেই তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদকে শোকজ করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে এখন তিনি কী বলবেন? এ প্রশ্ন এখন সর্বমহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শামিম আহমেদ গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কর্মস্থলে না থাকার উদ্দেশে গত ৫ জানুয়ারি ঝালকাঠি ত্যাগ করেন। তিনি তার ভোটাধিকার প্রয়োগের কথা উল্লেখ করে তিনদিনের ছুটির আবেদন করেন বিভাগীয় পরিচালকের কাছে। কিন্তু গত ৬ জানুয়ারি স্মারকের আবেদনে স্বাক্ষর করে ৫ জানুয়ারি কর্মস্থল ত্যাগ করেন। যদিও তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন ৬ জানুয়ারি অফিস শেষে কর্মস্থল ত্যাগ করতে ইচ্ছুক। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এবিএম ইমাম হোসেনকে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব দিয়ে যান।  

তত্ত্বাবধায়ক দায়িত্ব প্রাপ্তির চিঠি কত তারিখ পেয়েছেন জানতে চাইলে ডা. ইমাম হোসেন জানান, ৬ জানুয়ারি মেইলে পেয়েছি।  

তবে কার মেইল থেকে চিঠি পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি নীরব থাকেন।  
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানতে পেরে এর সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এক পর্যায়ে তারা খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় বরিশাল বিভাগের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক এ শোকজ দেন।  

কর্মস্থলে অনুপস্থিতির জন্য তত্ত্বাবধায়ককে তিনদিনের মধ্যে জবাব চেয়ে কারণ দর্শানোর চিঠিতে উল্লেখ করে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের এই কঠোর নির্দেশনা থাকলেও আপনি একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদে থেকেও নির্বাচনের আগের দিন কর্মস্থল ত্যাগ করেন। যা অনভিপ্রেত ও গণকর্মচারী শৃঙ্খলা আচরণবিধি পরিপন্থি। তাই কেন এই সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন পত্রপ্রাপ্তির তিনদিনের মধ্যে বিনা ব্যর্থতায় জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম কর্মস্থলে যোগ দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও শোকজ করে আসছেন। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন। এমনকি নিজের বাসভবনে অবৈধভাবে সরকারি এসি ব্যবহার, ডাক্তার কোয়াটারে তার সমর্থিত আউটসোর্সিংয়ের গাড়ি চালককে বসবাসের সুযোগ দেওয়া, রংপুরে থাকাকালীন সেখান থেকে সরকারি ল্যাপটপ নিয়ে আসা, সরকার নির্ধারিত বাসা ভাড়া কর্তন না করা, নিজের স্বার্থে হাসপাতালের ওষুধ ক্রয়ে ব্যর্থতার কারণে বরাদ্দ অর্থ ফেরত যাওয়া, বর্তমানে ওষুধের চরম সংকট সৃষ্টি হওয়া, হাসপাতালের কোটি কোটি টাকার মেডিকেল সরঞ্জামাদি ক্রয়ে পছন্দনীয় ব্যক্তিকে কাজ দিতে ঝালকাঠির পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে ঝালকাঠির বাইরের পত্রিকায় চাপা বিজ্ঞপ্তি দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি করে যাচ্ছেন তিনি। এসব সংবাদ বিভিন্ন দৈনিক ও প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত হলে তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করে প্রতিবাদ জানিয়ে নিজেকে সৎ দাবি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইচ্ছানুযায়ী ছুটির কথা বলে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। যার জন্য তাকে শোকজ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।