ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফুটবল

দেশকে আরও জয় দিতে চান রূপনা, মা চান সরকারি চাকরি  

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২২
দেশকে আরও জয় দিতে চান রূপনা, মা চান সরকারি চাকরি

  নিচে ডানে রূপনার স্কুল

রাঙামাটি: রূপনা চাকমা দুর্গম পাহাড়ে বেড়া ওঠা এক সাহসী নক্ষত্র। যিনি বীরদর্পে গোলবার আগলে রেখে দক্ষিণ এশিয়া নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শক্তিশালী নেপাল নারী দলকে হারিয়ে বিজয় উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশকে।

 

তিনি শুধু বিজেই উপহার দেননি, বাগিয়ে নিয়েছেন সেরা গোল রক্ষকের পুরস্কারও।  

রূপনা চাকমা রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূঁইয়াদম এলাকায় গাজামণি চাকমার ছোট মেয়ে। আজকের এ রূপনা চাকমা একদিনে গড়ে ওঠেননি। তাকে পার হতে হয়েছে নানা চড়াই-উতড়াই। বাবাহীন অভাবের সংসারে জীর্ণ ঘরে বৃষ্টির ফোটা মাথায় নিয়ে করতে হয়েছে দিনযাপন। রূপনার মা, পাশে তাদের জীর্ণ ঘর

বৃদ্ধা মা এবং চার ভাই-বোনের সংসারে সবার ছোট হওয়ায় লেখাপড়ার সুযোগ ভাগ্যক্রমে পেয়ে যান। এ ক্ষেত্রে বড় ভাই-বোনেরা কিছুটা সুনজর দিয়েছেন তার ওপর। যে কারণে এগুতে পেরেছেন সামনে। স্কুলের আঙিনায় প্রবেশের পর ঘোরে রূপনার ভাগ্যর চাকা।

ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে স্বভাবের রূপনার খেলাধূলার প্রতি ঝোঁকটা বেশি। রূপনার এ ঝোঁক দেখে এগিয়ে আসেন স্থানীয় ফুটবল কোচ বীরসেন চাকমা। যাকে রূপনাসহ তার সঙ্গীরা কাকা বাবু বলে ডাকেন। এ কাকা বাবু মূলত রূপনার ভাগ্যের আকাশে ত্রাণকর্তা হিসেবে হাজির হন। তার হাত ধরেই রূপনার জয়যাত্রা শুরু। খেলেছেন স্কুল পর্যায়ে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে। স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত তিনি বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলেছেন।

তার খেলার দক্ষতা আরও বাড়িয়ে দেন ঘাগড়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক শান্তিময় চাকমা। এ দুই কোচের হাত ধরে রূপনা জাতীয় পর্যায়ে গোলকিপার হয়ে খেলার সুযোগ লাভ করেন।

বর্তমানে রূপনা জাতীয় দলের পাশাপাশি বসুন্ধরা কিংস মহিলা ফুটবল দলের হয়ে খেলেন।

রূপনার বড় ভাই শান্তি জীবন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমার আদরের ছোট বোন এখন বাংলাদেশের গর্ব। তার পরিচয়ে নিজেকে পরিচয় দিতে পেরে আমি গর্বিত।
রূপনার মেঝ ভাই অটিল চাকমা বাংলানিউজকে বলেন,  আমার বোন বাংলাদেশের মান উঁচু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

রূপনার মা কালাসোনা চাকমা বলেন, আমার মেয়ের এমন বিজয় দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। তবে বয়স বাড়লে সে আর খেলতে পারবে না। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ, আমার মেয়েকে যেন একটি সরকারি চাকরি দেন।

রূপনার কোচ বীরসেন চাকমাবাংলানিউজকে বলেন, আমি অত্যন্ত গর্ববোধ করছি, আমার ছোট মেয়েরা আজ বাংলাদেশের জন্য গর্ব। নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।

রূপনার স্কুল ঘাগড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক শান্তিময় চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছোট ছোট মেয়রা দেশের জন্য সুনাম কুড়িয়ে আনছে। এটা অত্যন্ত চমৎকার। এটা যে কোনো কোচের জন্য গর্বের বিষয়। ক্লোক ওয়াইজ: বিরসেন, শান্তিময় ও শিক্ষিকা চন্দ্র দেওয়ান

ঘাগড়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্র দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্কুলের মেয়েরা আমাদের গর্ব, পুরো বাংলাদেশের গর্ব। তারা এ স্কুলে পড়তো। এ স্কুল তাদের পৃষ্টপোষকতা করেছে।

জাতীয় দলের গোলকিপার রূপনা চাকমা বলেন, ঘাগড়া স্কুলে পড়ার সুবাদে খেলাধূলায় আসা। কাকা বাবুর (কোচ বীরসেন চাকমা) হাত ধরে আমার খেলার যাত্রা শুরু। আমি বাংলাদেশকে সামনে আরও বিজয় উপহার দিতে চাই। এদেশের জন্য কিছু করতে চাই।

কাউখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের কারণে মূলত এমন বিজয় দেখেছে বাংলাদেশ। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।