ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফুটবল

ডেনমার্ক হারলেও জিতলো 'জীবন'

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১১ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২১
ডেনমার্ক হারলেও জিতলো 'জীবন'

নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বড় কোনো টুর্নামেন্টে জয়ের দেখা পেল ফিনল্যান্ড। স্বাভাবিকভাবেই এমন ঐতিহাসিক জয়ের তুমুল উল্লাস প্রকাশ করার কথা দলটির খেলোয়াড়-সমর্থকদের।

কিন্তু ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা তাদের সব উৎসবের আনন্দ অনেকটা ম্লান করে দিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচের জয়-পরাজয় ছাপিয়ে গেছে 'জীবনের উৎসব'।  

তবে এরিকসেন মাঠে লুটিয়ে পড়ার পর তার জন্য ডেনিশ দর্শকদের সঙ্গে ফিনিশ দর্শকরাও যেভাবে সমস্বরে গলা ফাটালেন, তা আসলে এককথায় অসাধারণ। শেষমেশ জয়োৎসবও করলো ফিনল্যান্ডের দর্শকরা, খেলোয়াড়রাও তাদের অভিবাদন গ্রহণ করলেন। তবে সব ছাপিয়ে গেল এরিকসেনের ওই ঘটনা। তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছে পুরো ফুটবলবিশ্ব।  ম্যাচের আসল নায়ক তাই নিঃসন্দেহে এরিকসেন। এজন্যই বলা হচ্ছে, 'ডেনমার্ক হারলেও জয়টা আসলে হয়েছে জীবনের। '

কোপেনহেগেনে শনিবার রাতে ইউরোর গ্রুপ বি'র ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছে ফিনল্যান্ড। এটাই ফিনিশদের প্রথম ইউরো অভিযান।  তবে ডেনমার্ক দলটিকে বাহবা দিতেই হবে। দলের সবচেয়ে বড় তারকার ভয়ঙ্কর বিপদ চাক্ষুষ করার পরও তারা মনকে শক্ত করে দারুণভাবে ম্যাচ শেষ করেছে। প্রতিপক্ষের জাল লক্ষ্য করে তারা ২২টি শট নিয়েছে। এর মধ্যে একটি পেনাল্টি মিস না হলে খেলার ফল অন্যরকম হতো। অন্যদিকে ১টি মাত্র শট নিয়েই জয়ের মুখ দেখেছে ফিনিশরা।

ম্যাচের ৪৩তম মিনিটে হঠাৎই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। পরে সতীর্থ খেলোয়াড়রা এবং রেফারি ছুটে গিয়ে তাকে ঘিরে রেখে দলীয় চিকিৎসকদের দ্রুতই মাঠে ডেকে পাঠান। তবে তখনও জ্ঞান ফেরেনি এরিকসেনের। এরপর ম্যাচ স্থগিতের ঘোষণা দেয় উয়েফা।

ম্যাচে এর আগ পর্যন্ত সমানে সমান লড়াই করেছে দুই দলই। কিন্তু গোলের দেখা পায়নি কেউ। যখন একটা থ্রো ইন রিসিভ করতে টাচলাইনের কাছে চলে যান এরিকসেন। বল রিসিভের আগেই হারান জ্ঞান, কোনো রকমের সংঘর্ষ ছাড়াই। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল ডেনমার্কের গোলকিপার ক্যাসপার স্মাইকেল নিজের গোলপোস্ট থেকে ছুটে আসেন সেখানে। বাকিরাও ছুটে যান তার কাছে। তখন থেকেই বন্ধ ছিল খেলা।

ধারণা করা হচ্ছে, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে ইন্টার মিলানের এই মিডফিল্ডারের। মাঠে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার চেষ্টা করা হয় তাকে। তার সতীর্থরা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে মানবদেয়াল তৈরি করেন, যাতে তাকে আড়ালে রেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায়।  

দর্শকদের দিকে ঘুরিয়ে রাখা এরিকসেনের সতীর্থদের মুখগুলোতে উৎকণ্ঠার ছায়া বিরাজ করছিল। কেউ কেউ তো কাঁদছিলেনও। প্রতিপক্ষ ফিনল্যান্ডের খেলোয়াড়রাও ছুটে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরেই তাকে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় স্ট্রেচারে করে। শেষমেশ স্থগিতই ঘোষণা করে দেওয়া হয় খেলাটিকে। পরে দুই দলের খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দেন রেফারি।  

উয়েফা অফিসিয়াল বিবৃতি দিয়ে জানায়, মাঠ ছাড়ার সময় জ্ঞান ফিরেছে এরিকসেনের। এবং তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তার বর্তমান অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। এমনকি ফেইসটাইমে (ভিডিওবার্তার অ্যাপ) সতীর্থদের সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি। সতীর্থদের প্রতি ম্যাচ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান ডেনিশ এই প্লেমেকার।

এরিকসেন বিপদমুক্ত জানার পর ফের মাঠে নামতে রাজী হন ডেনিশ ফুটবলাররা। তারা যখন মাঠে নামেন ফিনল্যান্ডের খেলোয়াড়রা হাততালি দিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানান এবং স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় ১৫ হাজার দর্শক দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর প্রথমার্ধের বাকি ৪ মিনিট খেলার পর পাঁচ মিনিটের বিরতি দেওয়া হয়।

এরিকসেনের ওই ঘটনার আগ পর্যন্ত ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে ছিল ম্যাচ। দু'বার তারা প্রায়। অষ্টম মিনিটেই ডি-বক্সের বাইরে থেকে এরিকসেনের নিচু শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ফেরান ফিনল্যান্ডের গোলরক্ষক লুকাস হ্রাদেকি। ষোড়শ মিনিটে হয়বিয়ার্গের হেড এক হাতে ঠেকিয়ে ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান তিনি। ১৯তম মিনিটে এরিকসেনের আরও এক প্রচেষ্টা ফেরান এই ফিনিশ গোলরক্ষক।

বিরতির মিনিট পাঁচেক আগে এরিকসেনের ওই ঘটনা। পরে ম্যাচ শুরু হলে তার বদলি হিসেবে নামেন মাথিয়াস ইয়েনসেন। বিরতির পর সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় ফিনল্যান্ড। ৫৯ মিনিটে সতীর্থের ক্রসে ছয় গজ বক্সের মুখে হেডে বল জালে পাঠান জোয়েল।

৭৩তম মিনিটে ইউসুফ পোলসেন প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় ডেনমার্ক। স্পট কিকে হোয়বিয়ের্গের শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক। বাকি সময়ে আর সুযোগ তৈরি করতে পারেনি স্বাগতিকরা।

বাংলাদেশ সময়: ০২১১ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২১
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।