মাথায় এক ঝাঁক চুল। লম্বা মসৃণ গোঁফ।
আবু শামা জানালেন, ছোটবেলা থেকেই তার শিল্পকর্মের দিকে দারুণ ঝোঁক। কিন্তু তখন সেটা করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। ১৯৮১ সালে যোগ দেন পুলিশ বাহিনীতে। কিন্তু চাকরি জীবনের কর্মব্যস্ততা তাকে ধমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং দায়িত্বে অবহেলা না করেও তিনি অব্যাহত রেখেছেন তার শৌখিন শিল্পচর্চা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি করে চলেন তার শিল্পচর্চা।
হারিয়ে যাওয়া পাখির যে শিল্পকর্মটি তিনি করেছেন, এর জন্য লেগেছে সাড়ে ৮ মাস। এ সময়টিতে দিনরাত পরিশ্রম করে পূর্ণতা দিয়েছেন তার বহুকাক্সিক্ষত শিল্পকর্মের। দেখলে মনে হবে যেন একটি জীবন্ত গাছে দেশীয় প্রজাতির হরেক রকমের পাখপাখালির সমাবেশ। বোঝার উপায় নেই যে, মুরগির পালকে তিনি তার এ বিচিত্র শিল্পকর্মের আপন ভুবন সাজিয়েছেন।
এ চিত্রশিল্পী বলেন, ২০০৭ সালের ঈদে বাড়িতে যাওয়ার ছুটি না পেয়ে প্রচন্ড হতাশ হয়েছিলাম। সেই রাতেই পুলিশ লাইনের যে কক্ষটিতে আমি থাকতাম সেই কক্ষটিতে হরেক রকমের দৃশ্য আঁকতে থাকি। ওই সময় আমার মাথায় আসে এ দৃশ্যগুলো যদি মুরগির পালক দিয়ে পূর্ণতা দেই তবে ব্যতিক্রমধর্মী এক শিল্পকর্ম হিসেবে ঠাঁই করে নিতে পারে। সে থেকেই আমার পথচলা শুরু। আবু শামা জানান, অনেকে এ চিত্রকর্মটি আমার কাছ থেকে কিনে নিতে চান। কিন্তু আমি এখনই এটি বিক্রি করব না।
আবু শামার বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার সেঙ্গুয়া গ্রাম। বাবা মোজাফফর আলী মন্ডল। দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। আবু শামার দৃষ্টিনন্দন এ শিল্পটির উচ্চতা সাড়ে ৫ ফুট আর দৈর্ঘ্য ৪ ফুট। যে গাছটিতে হরেক রকমের পাখপাখালি ঠাঁই দেওয়া হয়েছে সে গাছটি মূলত সিমেন্ট ও রড দিয়ে তৈরি।
আবু শামার শিল্পকর্মে যেসব পাখি তৈরি হয়েছে সেগুলো হলো : বক, কুক্কা, ময়না, হটহটি, গিরিংবাজ (সাদা সিপাহী), টিক্কা, পেঁচা, দোয়েল, শালিক, চড়ুই, পানিখোর, কাঁঠবিড়ালী, কোকিল, চিল, ময়ূর, বুলবুলী, মাছরাঙা, কবুতর, ঘুঘু, হেচ্চুয়া, ডাহুক, টুনটুনি ইত্যাদি। দৃশ্যটির বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে শিল্পী তার মনের মাধুরী মিশিয়ে কিছু কিছু বন্য জীবেরও অর্ভিভাব ঘটিয়েছেন। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপারটি হচ্ছে তিনি তার নিজ নামে আরও একটি পাখি তৈরি করেছেন। সেই পাখিটির নাম শ্যামা।
আবু শামার এ শিল্পকর্ম দেখতে প্রতিদিন পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ আসছেন। এ শিল্পটির সৌন্দর্যের কথা লোকমুখে শুনে সেখানে ছুটে গেছেন ময়মনসিংহের জেলা পুলিশ সুপার খোন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি এ শিল্পীকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিচ্ছেন।
সম্প্রতি এক বিকেলে শহরের পুলিশ লাইন উচ্চবিদ্যালয়ের গেটসংলগ্ন আবু শামার শিল্পকর্মের ওই ঘরটিতে গিয়ে দেখা গেছে বিভিন্ন পেশা-শ্রেণীর মানুষের জটলা। তার চোখধাঁধানো এ শিল্পকর্মটি যেমনি চমকিত করেছে, তেমনি প্রকৃতিপ্রিয় জীবনানন্দ দাশের আবহমান বাংলার চিরচেনা মোহনীয় হারিয়ে যাওয়া পাখিগুলোও যেন নিজ ভুবনে ফিরে এসেছে। চিত্রকর্ম দেখতে আসা মানুষের প্রশ্নের জবাবে আবু শামা জানাই, দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় পাখি। অনেকেই পাখির নাম পর্যন্ত বলতে পারেই না। নতুন প্রজন্ম এখন বাস্তবের বদলে বই-পুস্তকে পাখি দেখে। এ কারণেই তাদের কাছে পাখির পরিচিতি তুলে ধরতে এই শিল্পকর্মটি করার আমার আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৭৫০, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১০