ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বাংলার প্রাণের কাছে

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যে ছায়ানটের লোকসঙ্গীত 

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৮
গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যে ছায়ানটের লোকসঙ্গীত  লোকসঙ্গীত অনুষ্ঠানে ছায়ানটের শিল্পীরা। ছবি: সুমন শেখ/বাংলানিউজ

ঢাকা: লোকসংগীত বাংলার প্রাণ, বাংলার সম্পদ। শত বছর আগে মোহাম্মদ মনসুর উদ্দীন যখন এই সম্পদ তুলে এনেছিলেন, তখন তিনি তার নাম দিয়েছিলেন 'হারামণি'। 

আর সে গ্রন্থের ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বর্তমানে আমরা সেই হারামণির ধন-সম্পদ, মণি-মুক্তাই ব্যবহার করি নানাভাবে!

হারামণির সে মণিমুক্তা যে আমাদের আরও আহরণ করা প্রয়োজন, তার বোধ থেকেই ছায়ানট শুরু করে বাৎসরিক লোকসঙ্গীত অনুষ্ঠানের।

 

সে ধারাতেই পাঁচজন শিল্পীর রচিত গান নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এ আয়োজনের ১৪২৪ বাংলা সনের আসর।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনে এ বছরের অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়  কালা শাহ ফকির, বিজয় সরকার, খালেক দেওয়ান, কুটি মনসুর ও নুরুল ইসলাম জাহিদের গান। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে কালা শাহ ফকিরকে।

সন্ধ্যায় আসর শুরু হয় কালা শাহ ফকিরের ‘আমার মুর্শিদ পারশমণি গো’ গানের মধ্য দিয়ে। এ সময় ছায়ানটের লোকসঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা সমবেত কণ্ঠে এ গানটি পরিবেশন করেন।

এ গানের পর স্বাগত বক্তব্য রাখেন ছায়ানটের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।  

স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, লোকগান আমাদের এক অনন্য সম্পদ। এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ছায়ানট লোকগানকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চায়। সে প্রেক্ষিতেই প্রতিবছর পাঁচজন শিল্পীকে বেছে নিয়ে তাদের গানগুলো সকলের সামনে হাজির করা হয়।  

‘এসব লোকগানের তাৎপর্য অসাধারণ। এ গানেরই একটি ধারা বাউল গান, যা সম্প্রতি ইউনেস্কোর স্বীকৃতিও পেয়েছে। তাই সময় এসেছে এ গানগুলোর পরম্পরাকে আমাদের মাঝে ধারণ করার। ’

স্বাগত বক্তব্যের পর সম্মেলক গানের মধ্য দিয়ে শুরু লোকসঙ্গীত আয়োজনের মূল আসর। এ সময় গান পরিবেশন করেন লোকগানের বিশিষ্ট শিল্পীরা।  

শিল্পীদের কণ্ঠে লোকগানের আকুল করা সে সুর মোহবিষ্ট করে শ্রোতা-দর্শকদের। লোকসঙ্গীতের এ আসের সর্বমোট ২৩টি গান পরিবেশন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিজয় সরকার রচিত ‘আমি গানের মালা গাঁথিয়া’, ‘আমি যারে বাসি ভালো’, ‘তারে আর কি ফিরে পাবো’, ‘জানিতে চাই দয়াল তোমার’, ‘আমার প্রাণ বন্ধুয়ার দেশে’ গানগুলো পরিবেশিত হয়।  

এ গানগুলো পরিবেশন করেন দেবাহুতি মজুমদার, মোন্তাজউর রহমান মানিক, সরদার মো. রহমত উল্লাহ, চন্দনা মজুমদার ও ছায়ানটের লোকসঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা সমবেত কণ্ঠে।

খালেক দেওয়ান রচিত যে গানগুলো শিল্পীরা গেয়ে শোনান এর মধ্যে ‘মা লো মা ঝি লো ঝি’, ‘সখী ধর আমায়’, ‘কি সুখে রাঈ’, ‘কঠিন মরু কারবালাতে’, ‘মাটির ঘরে হাওয়ার পাখি’ ও ‘সোনার বউলো শুনছনি’ উল্লেখযোগ্য।  

এ গানগুলো গেয়ে শোনান সেতু খন্দকার, উজ্জল দেওয়ান, আব্দুস সালম ও আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।  

কুটি মনসুরের লেখা গানগুলোর মধ্যে ছিল– ‘কোথায় নিরঞ্জন ভাবিয়া দেখো মন’, ‘প্রেম কইরা যে প্রেমিক মরে’, ‘যৌবন জোয়ার একবার আসে রে’, ‘আমার দয়াল আল্লা রে’ ও ‘কে বলে মানুষ মরে’।  

স্বপ্না রায়, নাজমুল আহসান তুহিন, নীবর মজুমদার ও মুকুল মজুমদার ও সমবেত কণ্ঠে কুটি মনসুরের এ গানগুলো পরিবেশন করা হয়।  

সবশেষে ছিল নুরুল ইসলাম জাহিদ রচিত লোকগান। রংপুর অঞ্চলের ভাওইয়া গানগুলো হলো- ‘কয়সের আলোচাউল পাড়িয়া’, ‘সোনা বন্ধুরে আর কতদিন’, ‘আরে ও নিদয়ারে বন্ধুধন’, ও ‘আরে পায়ের মাথাত পাও ফেলায়’।  

এ রচয়িতার গান গেয়ে শোনান মহিতোষ কুমার, সাদিকা নূর মুমু, এরফান হোসেন ও সমবেত কণ্ঠ।

সবশেষে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় লোকসঙ্গীতের এ আয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৮
এইচএমএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।