ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

চার্চিলের প্রজাপতি প্রেম

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১০
চার্চিলের প্রজাপতি প্রেম

বাড়ির চারদিকে রঙিন ফুলে ফুলে নেচে বেড়াবে আরও রঙিন ডানার প্রজাপতি, ফুটফুটে ছেলেমেয়েরা মুগ্ধ হয়ে দৌড়াবে উড়ন্ত সেই রঙিন ফুলগুলোর পেছনে, দর্শকরা দেখে মুগ্ধ হবেন, দেশ-বিদেশের গবেষকরা ছুটে আসবেন কাব্যময় রঙের সেই পতঙ্গ নিয়ে গবেষণার জন্য... এমন স্বপ্নই দেখেছিলেন বিশ্ববিখ্যাত রাজনীতিবিদ, সমরনায়ক ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল (১৮৭৪-১৯৬৫)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই প্রভাবশালী সমরনায়ক প্রজাপতি ভালোবাসতেন এ কথা ভাবতে হয়তো অনেকরই কষ্ট হতে পারে।

তারপরও বাস্তবতা এই যে, চার্চিল ছিলেন সত্যিকারের প্রজাপতিপ্রেমী।

বড় মানুষের স্বপ্ন নাকি কখনো ছোট হয় না। চার্চিলের সে স্বপ্নও ছোট ছিল না। ইচ্ছে ছিল প্রজাপতি পালন করে তিনি আলোড়ন সৃষ্টি করবেন। এক্ষেত্রে প্রকৃতিপ্রেমী আর প্রাণী বিশেষজ্ঞদের কাছে হয়ে উঠবেন পাইওনিয়ার। তাই নিজের কেনা বাড়ির চারপাশে গড়ে তুলেছিলেন প্রজাপতিদের পছন্দের ফুলের বাগান। শুরু করেছিলেন প্রজাপতি পালন। কিন্তু যুদ্ধ-বিগ্রহ আর রাজনীতি নিয়ে যাকে ভাবতে হয়েছে সারাক্ষণ তিনি কতটাই বা নজর দিতে পারেন তার শখের প্রতি?

কিন্তু এবার চার্চিলের সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন শুরু করেছে ন্যাশনাল ট্রাস্ট ন্যাচার কনজারভেশনের সেন্টার। তার ওই বাড়িটিকে তারা ‘প্রজাপতি হাউস’ বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বাগানসহ প্রজাপতি উৎপাদনের কাজ।

১৯২২ সালে মেয়ে মেরির জন্মের পর চার্চিল কেন্টে একটি বাড়ি কেনেন গ্রীষ্মকালীন সময়ের জন্য। ওই বাড়ি ঘিরেই তিনি প্রজাপতি বাগানের পরিকল্পনা করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ হাগ নিউম্যানের পরামর্শ নেন এবং তাকে এ ব্যাপারে পুরো পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তার সেই শখের বাগানে বাধ সাধে। তবে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৪৬ সালে তিনি গড়ে তোলেন তার সেই প্রজাপতি বাগান। দীর্ঘ দিনের যুদ্ধও তাকে কিছুতেই সরাতে পারেনি প্রজাপতির স্বপ্ন থেকে। এমনই প্রেম ছিল তার।

প্রজাপতি সংগ্রহেও তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ। যৌবনে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময় তিনি বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি সংগ্রহ করেন।

প্রজাপতির প্রতি চার্চিলের ভালোবাসা জন্মায় ৬ বছর বয়স থেকেই। স্কুলের সামনে ফুলের বাগানে যখন প্রজাপতিরা রঙিন ডানা মেলে ওড়াওড়ি করত তখন তিনি অবাক হয়ে ওদের পেছনে দৌড়াতেন। কখনও কখনও ধরতে পারলে হাতের তালুতে রেখে আদর করে আবারও উড়িয়ে দিতেন। তখন থেকেই তার মনের মধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করে একটা প্রজাপতি-বাগান, যে বাগানে সব প্রজাতির প্রজাপতি উড়বে ঝাঁকে ঝাঁকে। ওই স্বপ্ন শুধু বুকে নিয়েই কেটে গেছে তার শৈশব, কৈশোর আর যৌবন। বয়স ষাটের কোটা পেরুনোর পর তার কিছুটা বাস্তবায়ন করতে পারলেও মালির ভুল, আবহাওয়া আর তার ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে তা সার্থক হয়নি।

ন্যাশনাল ট্রাস্টের উদ্যোগে এবার চার্চিলের সেই স্বপ্ন সার্থক হওয়ার পথে। তার পরিকল্পনা অনুযায়ীই তারা এগোচ্ছেন। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে তার কেন্টের সেই বাড়ির চারপাশ। স্বপ্নময় রঙিন ডানা মেলে উড়তেও শুরু করেছে প্রজাপতি। তার স্বপ্নের মতো হয়তো একদিন এই বাড়িই হয়ে উঠবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘প্রজাপতি হাউস’।

চার্চিল বেঁচে নেই কিন্তু তার সেই স্বপ্ন বেঁচে আছে আজও। তার স্বপ্নের মতো নতুন করে তৈরি এই প্রজাপতি বাগানের মাধ্যমে হয়তো তিনি বেঁচে থাকবেন অন্য এক চার্চিল হয়ে, যার বুকে ছিল প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা আর প্রজাপতির প্রতি আজীবনের প্রেম।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১২১২, আগস্ট ২৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।