ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

বেঙ্গলে নরওয়ের গ্লাস ও সিরামিকস শিল্পের প্রদর্শনী

তোফাজ্জল লিটন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২১ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১০
বেঙ্গলে নরওয়ের গ্লাস ও সিরামিকস শিল্পের প্রদর্শনী

কাচের সাথে মানুষের বিমুগ্ধ সম্পর্ক প্রায় চার হাজার বছরের পুরনো। স্বাভাবিকভাবে কাচ ও সিরামিকসের কথা মনে এলেই চোখে ভাসে উঠে সুদৃশ্য পেয়ালা অথবা ডিনার সেটের কথা।

কিন্তু এ দিয়ে যে দারুণ শিল্পকর্ম নির্মান সম্ভব তা অনেকে ভাবলেও এর প্রদর্শনী বাংলাদেশে খুব একটা হয় না।

৬ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় বেঙ্গল শিল্পালয়ে এমনই একটি  প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পকালব্যাপী এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘সমকালীন নরওয়ে’স গ্লাস ও সিরামিকস’ । অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও বাংলাদেশে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মিজ ইনগেবিয়র্গ স্টফরিং।

ডা. দীপু মনি বলেন ‘কোনো দেশের সংস্কৃতি জানতে পারলেই সে দেশের মানুষকে জানা ও বোঝা যায়। আর কোনো দেশের সংস্কৃতি জানতে হলে অবশ্যই সে দেশের শিল্প এবং সাহিত্য সম্পর্কে জানতে হবে। এভাবেই মানুষের সাথে মানুষের,  দেশের সাথে দেশের সুসম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। আমি আশা করছি এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা নরওয়ের শিল্প সম্পর্কে জানতে পারবো এবং তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। ’

প্রদর্শনীতে মোট শিল্পকর্মের সংখ্যা ৬১টি। ধানমন্ডির বেঙ্গল গ্যালারিতে এ প্রদর্শনী চলবে ২০ আগস্ট শুক্রবার  পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এ প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীটি নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০০ সাল থেকে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক, টোকিও, বেইজিং, সিডনি, কুয়ালালামপুর, হেলসিংকি, সিঙ্গাপুর, সান্টিয়াগো এবং বার্লিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রদর্শনীতে নরওয়ের ২৭ জন প্রতিষ্ঠিত ও নবীন গ্লাস ও সিরামিক শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে।

১৭৪১ সাল থেকে নরওয়ে কাচপণ্য উৎপাদন করছে। তবে ১৭৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী কাচপণ্য উৎপাদক হেডিল্যান্ড গ্লাসভার্ক কোম্পানিটি এখনো চালু রয়েছে। ১৯৫০-এর পর একদল সৃজনশীল ও বিখ্যাত ডিজাইনার এ কোম্পানিতে যোগ দেন। সে সময় নকশা ও ব্যবহারিক উপযোগিতার সমন্বয়ে এর এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। ১৯৭০-এর দশকের শেষদিকে তরুণ শিল্পীরা নিজেদের মুক্ত স্টুডিও গড়ে তোলেন। তখন কাচপণ্য শিল্পকলায় আরও এক নতুন মাত্রা পায়। সেই থেকে এর ব্যাপক প্রসার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসে।

কাচশিল্পের স্টুডিও আন্দোলনের দুই শিল্পী ওলা মারি ব্রান্তেনবার্গ ও কারেন কিম। ব্রান্তেনবার্গের প্রথম দিকের কাজ বর্তমানে এক বিশেষ মাত্রা লাভ করেছে। তিনি কাচামাল হিসেবে কাচের স্থিতিস্থাপকতার গুণাবলিকে ব্যবহার করেন। তবে তার কাজের প্রেরণা আসে প্রকৃতি থেকে। ব্রান্তেনবার্গের সাম্প্রতিক ফুলদানি সিরিজে প্রতিফলিত হয়েছে সমুদ্রের উপরিভাগের লতাগুল্মের চিত্রকল্প যা আসলে সামুদ্রিক মৃদু ঢেউয়ের বহমানতা অনুসরণে সৃজিত।

ইদা পারনেলি লচেন এবং ওলুফ ফয়িনুম আবার মাধ্যম হিসেবে কাচের েেত্র এক ভিন্ন প্রদ্ধতি প্রয়োগ করেন। পানীয় গ্লাসের মতো অতি ব্যবহারোপযোগী দ্রব্য সামগ্রীতেই লচেনের কেন্দ্রীভূত মনোযোগ। ফয়িনুমের বড় দেয়ালের কাজগুলো এবং বর্গাকৃতির থালাবাসন একত্রে বিশেষায়িত কাচ কৌশলে নতুন রূপ লাভ করে।

নতুন প্রজন্মের নরওয়েজীয় কাচশিল্পীদের প্রতিনিধিত্বশীল দুই নাম ক্যাথেরিন ম্যাস্কে এবং হাকনসেন। তাদের কাজে নতুন প্রজন্মের নারীদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও ভাব প্রতিফলিত হয়। কাচ ও আলোকচিত্রের সমন্বয়ে ম্যাস্কে এক ভিন্নতর অভিব্যক্তি সৃষ্টি করেন। তাঁর কাজের মৌল বিষয়বস্তু হলো মানুষের পাঁচ ইন্দ্রিয় এবং শিল্পীর নিজের দেহেরই আলোকচিত্র । ম্যাস্কের কাজের বাঁকা উপরিতল সৃষ্টি করে দৃশ্যজ অভিঘাত।

আলসো কারি হাকনসেনের স্বচ্ছ কাচের সংযমী বহিরাকৃতি অবশেষে এক দ্বৈত অনুভূতি সৃষ্টি করে। দৃঢ়, জ্যামিতিক, স্বচ্ছ বহিরাকৃতিগুলো আসলে উন্মোচন  করে এক অর্ন্তনিহিত প্রাণময় ভুবন।

ত্রিমাত্রিক ও দ্বিমাত্রিক- এই উভয়রকম সৃষ্টির মধ্যে দিয়েই সাজানো হয়েছে এই অবয়বকেন্দ্রিক প্রদর্শনী । তবে ‘ফিগারেটিভ’ বা ‘অবয়বধর্মী’ এই শব্দটি বাস্তবানুগ রীতি নির্দেশ করে না। যেমন শিল্পী গানিলা আকেসন এবং মারিত তিঙ্গলেফ-এর কাজে বাস্তব জগতের নির্দেশ তেমন নেই বললেই চলে। তাদের কাজে মূলত মানব অবস্থার প্রতিফলন দেখা যায়। এই শিল্পীদ্বয়  ছাড়াও অন্যদের কাজ মূলত ‘অবয়ব এবং ট্রল’ এই শিরোনামে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অবয়বধর্মী কাজের ক্ষেত্রে কাদামাটির ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। শিল্পী ক্রিস্টি ব্রাউন এই শক্তিশালী ঐতিহ্যের সূত্রে মানব-অবয়ব নিয়ে কাজ করেন।
   
সিরামিক কর্মশালা

‘সমকালীন নরওয়ের গ্লাস ও সিরামিকস’ প্রদর্শনীর ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সিরামিক বিভাগ, বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টস এবং নরওয়ে দূতাবাস ৮ আগস্ট রোববার থেকে তিন দিনব্যাপী একটি সিরামিক কর্মশালার আয়োজন করছে। কর্মশালাটি পরিচালনা করবেন সফররত নরওয়ের শিল্পী লিন্ডা জনসন লোথে।

৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ১১টায় চারুকলা অনুষদে প্রধান অতিথি হিসেবে শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী কর্মশালার উদ্বোধন করবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ডিন অধ্যাপক মতলুব আলী। সিরামিক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪৫০, আগস্ট ০৭, ৩০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।