ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

গণমাধ্যমে বীভৎস ছবি : শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব

মোঃ শরিফুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১০
গণমাধ্যমে বীভৎস ছবি : শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব

হাজারো শব্দের চেয়ে ছবি আরো বেশি স্পষ্ট করে কাহিনীর বর্ণনা দেয়। কিন্তু সাতসকালে ঝকঝকে ছাপায় বীভৎস যেসব ছবি পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে তা শুধু কাহিনী প্রকাশ করছে না, পাশাপাশি অসুস্থও করে তুলছে আমাদের।

বিশেষ করে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী ও দুর্বলরা মানসিকভাবে অসুস্থতার শিকার হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হচ্ছে, যা ভারসাম্যহীনতা তৈরি করছে।  


একটা ছবি বীভৎস কি না, বীভৎস হলে কতটুকু বীভৎস, তা নির্দিষ্ট করার নেই কোনো সুনির্দিষ্ট মানদ-। তবে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বীভৎস ছবি প্রকাশের প্রবণতা। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জায়গায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংবাদিকতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশনে তার প্রভাব পড়ছে। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু পত্রিকা যেমন মেতে উঠে সরকারি কর্মকা-ের জয়গানে, তেমনি বিরোধীপক্ষও খুন, জখম, ভয়ংকর অস্ত্র প্রদর্শন, বোমা বিস্ফোরণ, এসিড সন্ত্রাসের সংবাদ নগ্নভাবে উপস্থাপন করে অস্থিতিশীল সামাজিক অবস্থার কথা প্রমাণ করতে চেষ্টা করছে। কখনো কখনো পত্রিকার বাড়তি কাটতির আশায় পেশাগত মূল্যবোধ ত্যাগ করে, মানবিকতা উপেক্ষা করে বীভৎস ছবিসম্বলিত ভয়াবহ সংবাদগুলো তারা নিদ্বিধায় পরিবেশন করে। ফলে ব্যক্তিস্বার্থ অর্জনের পাশপাশি ভয়াবহতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে তারা সৃষ্টি করছে আরো বড়ো ধরনের সামাজিক-মানসিক সমস্যা।

পত্রিকার সবচে দ্রষ্টব্যস্থান প্রথম পৃষ্ঠা ও শেষ পৃষ্ঠা। এসব জায়গায় তুলে ধরা রঙিন বীভৎস ছবি দেখে শিশুরা সহজেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ফলে ভেঙ্গে যায় তাদের মানসিক প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাৎক্ষণিকভাবে দেখা দেয় ভয় পাওয়া, বিষন্নতা, ঘুম কম হওয়া, কম খাওয়া, হঠাৎ চিৎকার করার মতো নানা সমস্যা। দীর্ঘমেয়াদিভাবেও কিছু কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন : বিবাহসম্পর্কিত বিষয়ে কোনো  নির্যাতন, বীভৎসতার ছবি কোনো মেয়ে দেখলে পরবর্তী সময়ে তার বিবাহসম্পর্কিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। একই ব্যাপার ছেলেদের ক্ষেত্রে সন্ত্রাস, বোমা বিস্ফোরণের ছবি দেখলে হতে পারে।


মনোচিকিৎসক ও মনোবিশ্লেষক লেখক ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘শিশুরা সহিংসতাবিষয়ক কিছু দেখলে তাদের মনে সেই বিষয়ে ছাপ পড়ে এবং পরবর্তী সময়ে পরিবেশ-পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেটা বিকাশ লাভ করে। এতে করে যেমন শিশু ভবিষ্যতে আরো লাজুক, বিষন্ন ও অসুস্থ  হতে পারে, তেমনি ভয়ংকর উগ্র, বিধ্বংসীও হতে পারে। ’

প্রচারেই প্রসারÑ এই নীতিতে বিশ্বাসী গণমাধ্যমগুলো বীভৎস ছবি প্রকাশ করে অজান্তে পালন করছে সেই ভূমিকা। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশুবিশেষজ্ঞ ড. মাহাবুব আলম বলেন, ‘শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। যেসব শিশুর সুষ্ঠু মানসিক বিকাশ হয়নি, নেতিবাচক সংবাদ, বীভৎস ছবি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সেই সব শিশু জড়িয়ে পড়ে নেতিবাচক কর্মকান্ডে। ’

খুন, জখম, নির্যাতন আগে ছিল, এখনও আছে। কিন্তু বদলেছে তার প্রকাশভঙ্গি। শিশু আইন, সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও নেতিবাচক প্রবণতার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচেছ। সাংবাদিকতার পেশাগত ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হলেও ফটো সাংবাদিক হিসেবে সংবাদপত্রে যারা যুক্ত তাদের অনেকেই সংবাদপত্রের মূল এথিকস সম্পর্কে যথেষ্ট প্রশিক্ষিত নন। প্রায়শই ছবিতে বাহুল্য কিছু এনে ছবিকে তারা করে তোলেন ভয়াবহ। অন্যদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক বা কর্তৃপক্ষও অনেক সময় এ কাজে প্ররোচনা দিয়ে থাকেন,। এই ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাবার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘ফটো সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে যতœবান হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজনে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসকদের নিয়ে বিভিন্ন সময় সেমিনার, ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করে তাদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো, যাতে তারা যথার্থ সংবাদ ও ছবি পরিবেশনের তাৎপর্য বুঝতে পারেন। এছাড়া পরিবর্তন প্রয়োজন মিডিয়া মালিক ও সম্পাদকদের দৃষ্টিভঙ্গিরও। ’

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪৩০, জুলাই ০৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।