ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

প্রকৃতির বিস্ময়কর পাখি ‘এশীয়-শাবুলবুলি’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২২
প্রকৃতির বিস্ময়কর পাখি ‘এশীয়-শাবুলবুলি’ পুরুষ শাবুলবুলিটি তার ছানাদের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করে এনেছে। ছবি: তিমু হোসেন

মৌলভীবাজার: বন, প্রকৃতি ভ্রমণ আজ অনেক মানুষেরই ইচ্ছার অংশ হয়ে দেখা দিয়েছে। শহুরে জীবনযাপনের নানা ধরনের দূষণের বিপরীতে অরণ্যভ্রমণ মানুষের মাঝে সুস্থতা ছড়ায়।

এমনি আরণ্যক দিন-যাপনের কোনো এক বিরল মুহূর্তে যদি এমনই বিস্ময়কর এক পাখিকে হঠাৎ আপনার সামনে দেখতে পান, তবে হৃদয় যে পরমানন্দে ভরে যাবে-এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই! 

এমনি অবাক করা চিরসৌন্দর্য তার মাঝে ছড়ানো। প্রথমেই চোখে পড়বে এর পুচ্ছশোভা। অর্থাৎ দীর্ঘলেজের যে সৌন্দর্য পাখিটিকে সব পাখি থেকে এক্কেবারে আলাদা করে রেখেছে – সেটিই মুহূর্তে দৃষ্টিগোচর হবে। তারপর, নিজ থেকেই আপনি পাখিটিকে দেখতে থাকবেন। উড়ে অন্য ডালে গেলেও সঙ্গে সঙ্গেই আপনি তাকে খুঁজতে থাকবেন।  বলা যায়, এমন লম্বা লেজ এবং মাথার ঝুঁটির জন্য পাখিটিকে সব পাখি থেকে আলাদা করে খুব সহজেই চিনে নেওয়া যায়।

এশীয়-শাবুলবুলি’র ইংরেজি নাম এশিয়ান প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার এবং বৈজ্ঞানিক নাম (Terpsiphone paradisi)। এশীয়-শাবুলবুলি ছাড়াও অঞ্চলভেদে ওই পাখিটিকে দুধরাজ, সাহেব বুলবুলি, শাহ বুলবুল, সুলতান বুলবুল প্রভৃতি নামে মানুষ চিনেন।  

তবে, পুরুষ এবং স্ত্রী পাখিটিকে শারীরিক রঙের বিশ্লেষণে সাধারণ মানুষের পক্ষে চেনা বেশ কঠিন। শাবুলবুলি পুরুষ পাখিটির দুই বর্ণপর্ব রয়েছে। কোনো কোনো পুরুষ শাবুলবুলি সাদা রঙের হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো পুরুষ শাবুলবুলি হয়ে থাকে লাল বর্ণের। তবে, উভয়েরই লেজই হয় লম্বা, ফিতার মতো দীর্ঘ এবং মাথার ওপরে থাকে বড় ঝুঁটি। আর স্ত্রী শাবুলবুলি পাখিটির ডানা ও খাটো লেজটি লাল, পেট হালকা কালচে এবং মাথার ঝুঁটি খাটো। পুরুষ এবং স্ত্রী পাখি উভয় পাখিরই চোখ কালচে বাদামি, ঠোঁট নীল-ধূসর এবং নখর কালচে। শাবুলবুলিরা খুবই সাবধানের সঙ্গে উঁচু গাছের ডালে চমৎকারভাবে ঘাস, লতাপাতা, মাকড়সার জাল দিয়ে পেয়ালা আকৃতির খুব সুন্দর বাসা বানায়। তাদের পছন্দের স্থান হল বাঁশঝাড়। আম কাঁঠালের বাগানেও তাদের দেখা মেলে।  

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব সূত্র জানায়, Terpsiphone গণের এই পাখিটি সারা পৃথিবীতে ১২ প্রজাতির থাকলেও বাংলাদেশে মাত্র ১ প্রজাতির রয়েছে। এরা ছোট আকারের পতঙ্গভুক পাখি। ঠোঁট অপেক্ষাকৃত সামান্য লম্বা এবং পা খাটো ও বলিষ্ঠ। পুরুষ পাখিদের লেজের কেন্দ্রের পালক অনেক লম্বা হয়। এই এশীয় শাহবুলবুলি পাখিটিকে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বাংলাদেশ ।  

গভীর অরণ্যে হয়তো হঠাৎ পাখিটির দেখা পাওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু পাখিটির বাসা এবং ছানা সমেত দেখা পাওয়া অনেকটাই ভাগ্যের সুপ্রসন্নতার ব্যাপার। এশীয়-শাবুলবুলির ছানা এবং মা তার ছানাগুলো মুখে খাবার গুজে দেওয়া বিরল এই ছবিগুলো তুলেছেন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী তিমু হোসেন। যিনি প্রায়শই অরণ্যপ্রকৃতিতে মিশে থাকেন-বৈচিত্র্যময় পাখিদের ব্যতিক্রমী মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করার জন্য। তিনি বাংলানিউকে বলেন, আমাদের প্রকৃতির মাঝে এশীয়-শাবুলবুলি অপরূপ সৌন্দর্যের পাখি। তার সঙ্গে আসলে অন্য কোনো পাখির তুলনা হয় না। আপনি ইংরেজি শব্দটা লক্ষ্য করলে দেখবেন এই পাখিটির নামের সঙ্গে  ‘প্যারাডাইস’ শব্দটি যুক্ত আছে। এর বাংলা অর্থ বেহেস্ত বা স্বর্গ। অর্থাৎ এই পাখিটিকে প্রতীকী অর্থে স্বর্গীয় প্রেক্ষাপটের ভাবনায় যুক্ত করা হয়েছে। যা অন্যান্য পাখিদের তুলনায় নামে বিবেচনায় মর্যাদার স্বাক্ষর রাখে।  

বনভ্রমণের একটি বিশেষ মুহূর্তে সৌভাগ্যবশত এই এশিয়ান প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচারদের পেয়ে যাই। তাও আবার ছানাসহ। সে যে কী বিস্ময়কর অনুভূতি তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়! যারা প্রকৃতিতে ভ্রমণের সময় এমন বিরল দৃশ্যগুলো হঠাৎ দেখতে পান তারাই এর প্রাপ্তিআনন্দ বা মর্যাদা বোঝতে পারেন বলে জানান ওই আলোকচিত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।