ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সন্ধান মিললো বিরল ‘এশীয় তুলি-লেজ সজারু’ 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২১
সন্ধান মিললো বিরল ‘এশীয় তুলি-লেজ সজারু’  এশীয় তুলি-লেজ সজারুর রাত্রিকালীন বিচরণ। ছবি: মুনতাসির আকাশ

মৌলভীবাজার: দেশেই সন্ধান পাওয়া গেছে বিরল প্রজাতির ‘এশীয় তুলি-লেজ সজারু’। ইতোপূর্বে বন্যপ্রাণী গবেষকদের কাছে এ সংক্রান্ত প্রাণীটির প্রয়োজনীয় আলোকচিত্র ও মাঠপর্যায়ের তথ্যের ঘাটতি ছিল।

এই বিরল প্রাণীটিকে পাওয়া মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো বাংলাদেশে এখনো জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ দেশ।  

২০১৫ সালের লালতালিকা অনুযায়ী আইইউসিএন বাংলাদেশ প্রজাতিটিকে ‘অপ্রতুল তথ্য’ ক্যাটাগরিতে স্থান দিয়েছে। এর মানে হলো প্রজাতিটি এতটাই বিরল যে তার সংরক্ষণ অবস্থা মূল্যায়নের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য আমাদের কাছে নেই।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একটি গবেষক দল দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বনাঞ্চলে মাংসাশী স্তন্যপায়ীদের নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করছে। এই গবেষণাতেই বনে ক্যামেরা-ট্র্যাপ পদ্ধতির ব্যবহারে সন্ধান মিলেছে এশীয় তুলি-লেজ সজারুর। দেশে দ্বিতীয়বারের মতো এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে প্রথমবারের মতো দেখা মিলেছে এই প্রাণীটির।  এশীয় তুলি-লেজ সজারুর রাত্রিকালীন বিচরণ।  ছবি: মুনতাসির আকাশনর্থ ইস্ট বাংলাদেশ কার্নিভোর কনজারভেশন ইনিশিয়েটিভ শীর্ষক গবেষক দলটির দলনেতা এবং ঢাবি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মুনতাসির আকাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এশীয় তুলি-লেজ সজারু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে পাওয়া যায়। তবে, বিশাল অঞ্চলজুড়ে এর বিস্তৃতি হলেও একে অন্যতম বিরল প্রজাতির সজারু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এশীয় তুলি-লেজ সজারু একটি নিশাচল স্তন্যপায়ী। এদের দেহ অনেকটা সরু এবং ইঁদুরের মতো। সমগ্র দেহেই কাঁটার উপস্থিতি দেখা যায়। প্রজাতিটির শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো লেজের প্রান্তে তুলির মতো গুচ্ছাকার পশমের উপস্থিতি। এরা ৪-৮ সদস্যের পরিবার হিসেবে বসবাস করে। পরিবারের সবাই সাধারণচলার পথ, খাদ্যগ্রহণ অঞ্চল, এলাকা এবং পায়খানা ব্যবহার করে। ’ 

তিনি আরো বলেন, এ প্রজাতিটি তৃণভোজী। সাধারণত গাছের বাকল, মূল, কন্দ, পাতা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। নিশাচর হওয়ায় এরা রাতে একাকী খাদ্যের সন্ধানে ব্যস্ত থাকে এবং দিনে পরিবারসহ সুড়ঙ্গে অবস্থান করে। এদের নির্মিত সুড়ঙ্গ ৩ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। একটি এশীয় তুলি-লেজ সজারু খাদ্যের সন্ধানে এক রাতে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত অঞ্চল অতিক্রম করতে পারে।  

গবেষক দলটির আরেক সদস্য, তরুণ গবেষক মুহাম্মদ সামিউল আলম জানান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বনগুলো ইন্দো-বার্মা জীববৈচিত্র্য হটস্পটের অন্তর্ভুক্ত। যা পৃথিবীর মাত্র ৩৬টি হটস্পটের মধ্যে একটি।  
জানা গেছে, ২০১৫ সালে ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন এলায়েন্সনামে পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা সাঙ্গু-মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনে ক্যামেরা ট্র্যাপের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো এশীয় তুলি-লেজ সজারুর সন্ধান পায়। এছাড়া ক্যামেরাট্র্যাপ ব্যবহার করে ২০১৪ সালে দক্ষিণ ভুটানে, ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে প্রথমবারের মতো এশীয় তুলি-লেজ সজারুর উপস্থিতি দেখতে পায় গবেষকরা।  সাম্প্রতিক সময়ে ক্যামেরা ট্র্যাপিং প্রযুক্তির উন্নতি ও ব্যবহার বন্যপ্রাণি গবেষণায় ধনাত্মক প্রভাব ফেলেছে।  

গবেষকদল মনে করেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বনে এমন বিরল এক সজারুর উপস্থিতি একদিকে যেমন গবেষকদের নতুন ও কার্যকরী উপায়ে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করবে তেমনি নীতিনির্ধারকদের কাছে উত্তর-পূর্বের বনাঞ্চলগুলোর গুরুত্ব অনেক গুণ বাড়বে। এ অঞ্চলের বনগুলো ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া সম্মিলিত উপায়ে আরও অধিক অঞ্চলজুড়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করা যেতে পারে। এসব বনাঞ্চল ও প্রাণিবৈচিত্র্য রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট অর্জনে অনেকাংশেই এগিয়ে রাখবে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বনে এমন বিরল এশীয় তুলি-লেজ সজারুর সন্ধান পাওয়াটা আনন্দের বিষয়। জাতীয় টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে এসব বনাঞ্চল ও প্রজাতি সংরক্ষণ অপরিহার্য বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক মুনতাসির আকাশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।