ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পাখি শিকার, অতঃপর মানবের ‘দানবীয়’ আচরণ!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২১
পাখি শিকার, অতঃপর মানবের ‘দানবীয়’ আচরণ! বকের চোখে গেঁথে দেয়া হয়েছে পাখনা। ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: নির্মমতার অনেক রকমফের আছে। কেবল মানুষে মানুষে হানাহানি নয়, পশুপাখির ওপর মানবের দানবীয় আচরণ দেখা যায় অনেক সময়।


 
এমনই একটি ঘটনার দেখা মিলে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কুশিয়ারার তীরবর্তী শেওলায়।
 
একদল পাখি শিকারি স্থানীয় হাওর থেকে রাতের আঁধারে জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে শিকার করেন অসংখ্য বক। ফাঁদে আটকা পড়া বক যাতে চোখে না দেখে সেজন্য পাখনা গেঁথে বকগুলোর চোখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভাষায় প্রকাশ না করতে পারার একরাশ যন্ত্রণা যেনো পাখিগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলেই দেখা যায়।  
 

পাখিগুলো বহনকালে যাতে ঠোঁট দিয়ে আঘাত না করে, সেজন্য চোখে পাখনা গেঁথে দেওয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করেন শিকারিরা। এরপর গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করতে দেখা যায়। এমনকি সিলেটের বিয়ানীবাজারে কুশিয়ারা নদীর ওপর শেওলা সেতুতে বসে অবলীলায় কোনো ধরনের বাধা বিপত্তি ছাড়াই শিকারিদের পাখি বিক্রি করতে দেখা যায়।  
 
পাখি শিকার আইনে অপরাধ হলেও সারা বছর আইন না মানার প্রতিযোগিতা চলে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায়।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের বিয়ানীবাজার, গোয়াইনঘাট, জাফলং, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে চলে পাখি নিধন। বিশেষ করে জৈন্তাপুরের হরিপুরে আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে রেঁস্তোরায় পাখির মাংস দিয়ে আহার কার না জানা। পর্যটক থেকে শুরু করে ওই সড়কে আগন্তকদের প্রতিনিয়ত ভূরিভোজ চলে রাস্তার পাশের রেস্তোরায় পাখি দিয়ে।
 

প্রশাসনের জানা থাকলেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই চোখে পড়ে না, এমনটি জানালেন স্থানীয়রাও। পাখি নিধন বন্ধে পরিবেশবাদি সামাজিক সংগঠনগুলো বার বার প্রতিকার জানিয়ে আসলেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্টদের।
 
পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বাংলানিউজকে বলেন, নগরে প্রকাশ্যে পাখি বিক্রি অনেকটা বন্ধ হলেও পাখি শিকার এখনো বন্ধ করা যায়নি। সিলেটের হাওরাঞ্চলে পরিযায়ী পাখি শিকার অব্যাহত রয়েছে। এর কারণ পাখি শিকার বন্ধে আইন সম্পর্কে জনসাধারণের অজ্ঞতা রয়েছে। আইন থাকলেও এর প্রয়োগ হচ্ছে না।
 
তিনি বলেন, যারা আইন প্রয়োগ করেন, তারাও এখনো মনে করেন পাখি শিকার তেমন কোনো অপরাধ না। তাছাড়া প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে পাখি খাওয়া এবং পাখি শিকারিরা টেলি মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে পাখি বিক্রি করতে পারার প্রবণতা পাখি শিকারীদের উৎসাহ যোগাচ্ছে। তাই দেশিয় ও পরিযায়ী পাখি নিধন বন্ধে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি অভিযান চালানো প্রয়োজন।


 
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২১
এনইউ/আরএ  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।