ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লাউয়াছড়ার গহীন অরণ্যে ডানা মেললো ‘কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২১
লাউয়াছড়ার গহীন অরণ্যে ডানা মেললো ‘কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা’ সুস্থ হয়ে উড়ে যাবার প্রাক্কালে কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা, ছবি: খোকন থৌনাউজাম

মৌলভীবাজার: মাঝে মধ্যে খুব নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে প্রকৃতি। সেই নিষ্ঠুরতায় বিপন্ন হয় প্রকৃতির মূল্যবান প্রাণ।

তবে অনেকে আছেন যত্ন ও ভালোবাসায় বিপন্ন হয়ে পড়া প্রাণগুলোর লালন-পালন করেন।

কিছুদিন আগে লাউয়াছড়া সড়কে দ্রুতগামী অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ে যায় একটি কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা। এক মোটরসাইকেল আরোহী সেটি পেয়ে বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী খোকন থৌনাউজামের কাছে নিয়ে যান। তিনি তাদের স্থানীয় সংগঠন ‘স্ট্যান্ড ফর আওয়ার অ্যান্ডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ড লাইফ’ (এসইডাবলিইউ)-এর মাধ্যমে পাখিটিকে সারিয়ে তোলার ভার নেন। এভাবেই সুস্থ হয়ে ওঠে বিপন্ন পাখিটি। আবারও ফিরে যায় প্রকৃতিতে।

এ ব্যাপারে এসইডাবলিইউর ফাউন্ডার খোকন থৌনাউজাম বাংলানিউজকে বলেন, লাউয়াছড়া সড়কে দ্রুতগামী অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা লাগে কণ্ঠী নিমপ্যাঁচার। আহত হয়ে সড়কে পড়ে ছিল সেটি। স্থানীয় মোটরসাইকেলচালক রিজভী তাকে উদ্ধার করে আমাদের কাছে  নিয়ে আসে।

তিনি বলেন, উড়ার কথা দূরে থাক, আহত প্যাঁচাটি ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছিল না। প্রাথমিক পরিচর্যা শেষে কয়েকদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয় তাকে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও খাবার দেওয়া হয়। প্যাঁচাটির ডানা ও পায়ে নিয়মিত মালিশ দিলে চার-পাঁচ দিনের মধ্যে উড়ার সক্ষমতা অর্জন করে সেটি। আমাদের সংগঠনের অপর ফাউন্ডার সোহেল শ্যাম পাখিটির প্রয়োজনীয় দেখভাল করেন।

জানকিছড়া বিট কর্মকর্তা আনিসুজ্জামানের উপস্থিতিতে সংগঠনের সদস্যরা লাউয়াছড়া বনের গহীনে আবারও প্যাঁচাটিকে অবমুক্ত করেন।

খোকন থৌনাউজাম বাংলানিউজকে জানান, বাংলাদেশে মোট চার প্রজাতির নিমপ্যাঁচা পাওয়া যায়। এগুলো হলো- পাহাড়ি নিমপ্যাঁচা  (Mountain Scops Owl), উদয়ী নিমপ্যাঁচা (Oriental Scops Owl), দেশি নিমপ্যাঁচা (Indian Scops Owl) ও কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা (Collared Scops Owl)।

এরমধ্যে কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা আকারে ২৩-২৫ সেন্টিমিটার হয়। কালচে বাদামি দেহে লম্বা ধূসর কান-ঝুঁটি আছে তার। ঘাড়ে কালচে-বাদামি লাইন ও হলুদ পট্টি। ডানায় আছে হলদে তিলা। উপরের চঞ্চু সবুজাভ ও নিচে কালচে। রাতের বেলা থেকে থেকে 'টুও' বা 'নিম' শব্দ করে ডাকে।

কণ্ঠ নিমপ্যাঁচার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, এরা পুরোপুরি নিশাচর ও আবাসিক পাখি। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে পছন্দ করে। দিনের বেলা ঘন পাতার আড়ালে বা গাছের কোটরে বিশ্রাম নেয়। তাই সহজে চোখে পড়ে না। আবার রাতের বেলা বের হয় শিকারে। এর শিকারের তালিকায় রয়েছে নানা রকম পোকা, ঘাসফড়িং, টিকটিকি, গিরগিটি, ছোটপাখি ইত্যাদি।

কণ্ঠী নিমপ্যাঁচার প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল। এরা গাছের কাণ্ডের প্রাকৃতিক ফোকরে কিংবা কাঠঠোকরা পাখির পরিত্যক্ত বাসায় ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, সংখ্যায় তিন-পাঁচটি হয় বলে জানান খোকন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২১
বিবিবি/এনএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।