ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পানির উপর দৌড় দিয়ে আকাশে ডানা মেলে ‘জল-কুক্কুট’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪২ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২০
পানির উপর দৌড় দিয়ে আকাশে ডানা মেলে ‘জল-কুক্কুট’

মৌলভীবাজার: শান্ত এই জলাভূমি পাখির ডাক আর দৌড়ঝাপে হঠাৎই অস্থির। এই অস্থিরতাটুকুই জানান দেয় জলজ সৌন্দর্যের। যার বর্ণনা অতুলনীয়! স্বাভাবিক চোখে দেখলেই জলজ এ পাখিদের প্রতি কেমন এক ভালোলাগা তৈরি হয়ে যায়। 

মৌভীবাজারের সমৃদ্ধ মৎস্য অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল। এখানে নানা ধরনের জলচল পাখিদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে।

শীত মৌসুমে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে নানা স্ট্যাটাসের অর্থাৎ সংকটাপন্ন’, ‘বিপন্ন’, ও ‘মহা বিপন্ন’ পরিযায়ী পাখিরা এখানে এসে অবস্থান নেয়। এছাড়াও স্থানীয় বা আবাসিক পাখিদের ব্যাপক সমারোহ এই প্রাকৃতিক জলাভূমির ব্যাপক সৌন্দর্য বিস্তার করে রেখেছে।
 
শীতে সারা দেশের জলাভূমিতে থাকে এবং সহজে দেখা যায় ‘জল-কুক্কুট’ পাখিদের। এর দৈর্ঘ্য ৪২ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৬০০ গ্রাম। এই পাখিটি উড়ে ওপরে ওঠার জন্য অনেক দূর পর্যন্ত পানির উপর দিয়ে দৌড়ে উড়ে যায়।
 
পাখি আলোকচিত্রী শাহানুল করিম চপল বাংলানিউজকে বলেন, এই ছবিগুলো মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল থেকে তুলেছি। এই পাখিটির বাংলা নাম জল-কুক্কুট। এছাড়াও একে কালো কুক্কুট বলে। এর ইংরেজি নাম Coot / Common Coot এবং বৈজ্ঞানিক নাম Fulica atra Linnaeus
 
বাইক্কা বিল মুখরিত করে রেখেছে এরা ‘জল-কুক্কুট’।  ছবি: শাহানুল করিম চপলতিনি আরো বলেন, এই পাখির চোখের ছবি তোলা বেশ কষ্টের। কারণ কালোর মাঝে লাল চোখ ছবি তুললেই সব সুন্দর আসে কিন্তু চোখ মিলিয়ে যায়। তখন আর ছবি পছন্দ হয় না। আর এরা এত দূর থেকে উড়াল দেয় যে ভালো ছবি পেতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়।
 
এই পাখিটির শারীরিক বর্ণনা সম্পর্কে তিনি বলেন, এদের দেহ ঘন কালো। চঞ্চু (ঠোঁট) ও কপালের বর্ম সাদা। চোখ লালচে এবং পা সাদাটে। লেজ অত্যন্ত ছোট। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির বর্ণ অনুজ্জ্বল এবং গলা বুক সাদাটে। ছেলে এবং মেয়ে পাখি চেহারা একই দেখতে।
 
শিকারি পাখিদের খাদ্যবস্তুতে পরিণত হয় -এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ঈগল বা চিল প্রভৃতি গোত্রের পাখিদের খাবার এরা। খোলা হাওর-বাওড়ে যখন জল-কুক্কুট বেখেয়ালি হয়ে বিচরণ করে ঠিক তখনই সুযোগটি কাজে লাগায় শিকারি পাখিরা। ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তীক্ষ্ম নখের থাবায় ধরে নিয়ে তাদের।  
 
এদের খাদ্য তালিকা ও প্রজনন সম্পর্কে তিনি বলেন, জল-কুক্কুট নদী, হাওর-বিল বা মুক্ত জলাশয়ে ছোট বা বড় ঝাকে থাকে। এদের প্রধান খাবার ধান, জলজ উদ্ভিদের কচি ডগা, বীজ, কেঁচো, জলজ কীট। মাঝে মধ্যে ছোট মাছ খেতে দেখা যায়। পানিতে সাঁতার কেটে বা ডুব দিয়ে এরা খাবার সংগ্রহ করে। বাসা বাঁধে ভাসমান জলজ উদ্ভিদের ওপর লতাপাতা বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ৫-১২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে তিন সপ্তাহ।
 
বাংলাদেশের জলচর পাখিরা আজ অনেকাংশে বিপন্ন। যেখানে আমাদের জলাভূমিগুলো বিপন্ন যেখানে স্বাভাবিকভাবেই জলাভূমির উপর আশ্রয় করে থাকা পাখিগুলোর অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়েছে। ক্রমাগত পাখি শিকার, প্রাকৃতিক জলাভূমি ধ্বংস করে কৃত্রিম মাছের ঘের বা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র তৈরির ফলে প্রাকৃতিক জলাশয়ের পাখিদের প্রজনন এবং জীবনযাপন মারাত্মক হুমকির বাঁধার মুখে। এ জন্য ব্যাপক গণসচেতনা গড়ে তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে জানান এই পাখি আলোকচিত্রী শাহানুল করিম চপল।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২০
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।