ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

নারী চা শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের ‘স্বপ্নভঙ্গ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
নারী চা শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের ‘স্বপ্নভঙ্গ’ চা পাতা চয়ন করছেন নারী শ্রমিকরা, ছবি : বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন 

মৌলভীবাজার: নারী শ্রমিকরাই চা শিল্পের প্রাণ। তাদের হাতের কোমল পরশে প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে টিকে আছে বাংলাদেশের চা বাগানগুলো। তাদের সেবাময়ী অমৃতস্বত্বার এই রূপটি অদম্য শরীরিক শ্রম আর দুর্নিবার জীবনীশক্তিতে লালিত।  

কিন্তু প্রকৃতি এবার বেঁকে বসেছে! হয়েছে নিষ্ঠুর থেকে নিষ্ঠুরতর। প্রায় তিনটি মাসের ক্রমাগত বৃষ্টিপাত নিয়ে এসে চা শিল্পের জন্য অমঙ্গলবার্তা।

এবারের অতিবৃষ্টির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে চা শিল্পাঞ্চলগুলোতে। কমে গেছে দৈনিক পাতা চয়নের (পাতা উত্তোলন) গড় পরিমাণ।  

নারী চা শ্রমিকদের পাতাচয়নও কমে গেছে তুলনামূলকভাবে। নারী সদস্যরাই চা বাগানে সরাসরি পাতাচয়নের সঙ্গে জড়িত। গড় উৎপাদন কমে যাওয়ায় আশাহত হতে হচ্ছে তাদের। অতিবর্ষণের প্রভাবে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে চায়ের পাতাচয়ন। শুধু নারী চা শ্রমিকই নয়, চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকেরই স্বপ্নভঙ্গ।  
জনপ্রতি চা পাতার ওজন নেয়া হচ্ছে, ছবি : বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন শনিবার (১২ আগস্ট) ভাড়াউড়া চা বাগানের ১৭নং সেকশনে বেলা তিনটায় গিয়ে দেখা গেল নারী শ্রমিকরা সম্মিলিতভাবে পাতাচয়ন করছেন। তাদের হাতের গতিও বেশ দ্রুত। দৈনিক প্রায় আশি থেকে একশ কেজির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তাদের এই পাতা ছিঁড়ার ব্যস্ততা। কিন্তু গাছে পর্যাপ্ত পাতা না থাকলে কী করে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছবে স্বপ্ন? 

ভাড়াউড়া চা বাগানের প্রবীন সেকশন সর্দার অনিল পালের গ্রুপে নারী, পুরুষ এবং ক্যাজুয়েল (অস্থায়ী) শ্রমিক মিলিয়ে তার গ্রুপে রয়েছেন মোট ৩৫০ জন শ্রমিক । নারী ১৮৮ জন, পুরুষ ৪২ জন এবং শ্রমিকদের সন্তান বা পরিজনের সমন্বয়ে গঠিত ক্যাজুয়েল ৪২ জন। সেদিন ১৭নং সেকশনে ১৪০ জন নারী শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। অবশিষ্টরা চিকিৎসাজনিত ছুটিতে রয়েছেন।  

সেকশন সর্দার অনিল পাল বাংলানিউজকে বলেন, এখন চা পাতাচয়ন আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। পাতা বেশি হচ্ছে না। ১৪০ জন শ্রমিক এই পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার কেজি চা তুলতে পেরেছেন। অন্যসময় এই ১৪০ জন শ্রমিকই দৈনিক ৮ থেকে ১০ হাজার কেজি পর্যন্ত তুলতে পারেন।  
চয়নকৃত চা পাতার একাংশ, ছবি : বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনপাতাচয়নের পরিমাণ সম্পর্কে তিনি বলেন, দৈনিক ২৪ কেজি করে পাতাচয়ন বাধ্যতামূলক। এর জন্য মুজুরি ৮৫ টাকা। তবে ২৪ কেজির বেশি তুললে কেজি প্রতি ৩ টাকা ৫৮ পয়সা হারে অতিরিক্ত মুজুরি পান। অঞ্জলি রাজগড়, সাবিত্রী দুশাদ, মিরা গোয়ালা, লক্ষ্মীভর, কারুমনিয়া প্রমুখ মহিলা সর্বোচ্চ পরিমাণ চাপাতা তুলতে পারেন। দৈনিক আশি থেকে একশ কেজি পর্যন্ত টার্গেট থাকে তাদের।  

অঞ্জলি রাজগড় এবং সাবিত্রী দুশাদ জানান, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে আমাদের কাজ। সকাল ১০টায়, দুপুর ১টায় এবং বিকেল সাড়ে ৪টায় সারাদিনে মোট ৩ বার আমাদের পাতা ওজন দেওয়া হয়।  

ভাড়াউড়া ডিভিশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) গোলাম মোহাম্মদ শিবলী, বাংলানিউজকে বলেন, এবার ‘এক্সেস রেইনিং’ হচ্ছে। গত পঞ্চাশ বছরেরও টি-ইন্ডাট্রিতে এতো ব্যাপক পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়নি। এর ফলে মাটির নানাগুণাবলী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত সূর্যালোক না পেলে চা গাছ খাদ্যপ্রস্তুত করতে পারছে না। ফলে গাছও ‘ইউক’ হয়ে পড়ছে। দেখা দিতে শুরু করেছে নানান রোগব্যাধি।

চা পাতা বহনকারী চা বাগানের ট্রাক্টর, ছবি : বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন 

তিনি আরো বলেন, এ অতি বৃষ্টি মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে চা বাগানগুলোর উপর। এখন চায়ের প্রোডাকশন তুলনামূলকভাবে বেশ কমে গেছে। পর্যাপ্ত সূর্যালোকের অভাব এবং অতিবৃষ্টির কারণে চায়ের মাটির শোষণক্ষমতা নষ্ট হয়ে পড়ায় দুটি পাতা একটি কুঁড়ির বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। গতবছর থেকে এবার আমরা টোয়েন্টিফাইভ পার্সেন্ট বিহাইন্ডে (পেছন) রয়েছি।  

প্রাকৃতিক এই সমস্যার কারণে সৃষ্ট সংকট দেশের বাৎসরিক মোট উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে জানান ডিজিএম গোলাম মোহাম্মদ শিবলী।

বাংলাদেশ সময়: ১১:৫২ ঘন্টা; আগস্ট ১৩, ২০১৭
বিবিবি/বিএস 



 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।