ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বুনোফুল ‘দাঁতরাঙা’, কেউ বলে ‘লুটকি’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১০ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৭
বুনোফুল ‘দাঁতরাঙা’, কেউ বলে ‘লুটকি’ পথে-প্রান্তরে বর্ষায় ফুটে থাকে দাঁতরাঙা ফুল, ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: পিচঢালা পথ ধরে ছুটছে যান। পাশেই পতিত জমি। দ্রুতগামী যানের গতির দোলায় দুলে উঠছে উজ্জ্বল বেগুনি রঙের ফুলসমেত গাছগুলো। যেন তারা এভাবেই মাথা নেড়ে যাত্রীদের স্বাগতম জানিয়ে চলেছে প্রতিবারই।

পথে-ঘাটে হয় বলে এই সুন্দর ফুলটির কদর নেই। কেউ যত্নআত্তিও করে না।

তারপরও বেশ তরতাজা! প্রকৃতির সজীবতায় ঘনসবুজ পাতা আর রিষ্টপুষ্ট ডালপালা মেলে কী অপূর্বভাবেই রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে। পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে রয়েছে বেগুনি বর্ণের ফুলের বাহার।

প্রকৃতির মাঝে স্বাভাবিকভাবেই জন্ম নিয়ে বেড়ে ওঠা এ ফুলের আঞ্চলিক নাম ‘লুটকি’। এছাড়াও ফুটকি নামেও স্থানীয় কেউ কেউ নামকরণ করে রেখেছেন এ ফুলটিকে। বাংলাদেশের ফুলের তালিকায় এ ফুলটির নাম ‘দাঁতরাঙা’। একটি গন্ধহীন ফুল। ইংরেজি নাম Indian Rhododendron এবং বৈজ্ঞানিক নাম Melastoma malabathricum। অপূর্ব শোভায় ‘দাঁতরাঙা’ ফুটে থাকার দৃশ্য চোখে পড়বে এই আষাঢ়-শ্রাবণে।
পথে-প্রান্তরে বর্ষায় ফুটে থাকে দাঁতরাঙা ফুল, ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
বুধবার (৫ জুলাই) কমলগঞ্জের পথ ধরে এগিয়ে যেতে দেখা গেল, গাছের গায়ে উজ্জ্বল বেগুনি রঙের ফুলে ভরে থাকার দৃশ্য। এ ফুলের গাছ ঝোপালো। উচ্চতায় প্রায় এক থেকে দুই মিটার। ফুলে চারটি পাপড়ি রয়েছে। পাতা ডিম্ব-আয়তকার। ডালের আগায় কয়েকটি ফুল গুচ্ছবদ্ধ থাকে। মাঝারি আকৃতির এ ফুলটি ৫ থেকে ৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া হয়। মাঝখানে হলুদ ও বেগুনি রঙের অসমান কয়েকটি পুংকেশর রয়েছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বালিগাঁও এলাকার ফুলবানু বেগম বলেন, এই ফুলগুলোকে আমরা ফুটকি বলি। বর্ষা মৌসুমে বেশি ফোটে। ফুল ফোটা শেষ হলে কারো রঙের ফল আসে। অনেকটা জামের মতো। তবে ছোট। আমরা মাঝে মধ্যে ফলটি খাই। পাকলে খেতে মিষ্টি লাগে। খাবার পর মুখ বেগুনি রঙের হয়ে যায়।

দাঁতরাঙা ফুলের বীজ, ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনউদ্ভিদ গবেষক সৌরভ মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, এগুলো বন্য পরিবেশের ফুল। দাঁতরাঙা, লুটকি ছাড়াও বন তেজপাতা নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। এটি সারাদেশেই কম-বেশি জন্মে। পঞ্চগড়, গাজীপুর, সিলেট প্রভৃতি এলাকায় বেশি দেখা যায়। টেকনাফ ও বান্দরবান এলাকায় এর আরও কয়েকটি জাতের দেখা মেলে। দাঁতরাঙা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই জন্মে। ফুটকির রয়েছে নানাবিধ ওষুধি গুণ।

দাঁতরাঙা ফুলটি গন্ধহীন। প্রায় সারা বছরই ফুল ফোটে। ডালের আগায় অল্প কয়েকটি ফুলের গুচ্ছ থাকে। পাহাড়ের ঢালু ও আশপাশের পতিত স্থানে প্রচুর পরিমাণে জন্মে বলে জানান উদ্ভিদ গবেষক সৌরভ মাহমুদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৭
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।