ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লাউয়াছড়া থেকে প্রাণ গেল সেগুনের!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭
লাউয়াছড়া থেকে প্রাণ গেল সেগুনের! লাউয়াছড়া থেকে কর্তনকৃত মূল্যবান সেগুনগাছ/ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): আরেকটি মূল্যবান সেগুন বৃক্ষ তার প্রাণ হারালো! সংঘবদ্ধ গাছচোরের করাতের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই হলো তাকে! 

শুক্রবার (২৪ মার্চ) লাউয়াছড়া থেকে একটি বিশালাকৃতি সেগুনগাছ কেটে নিয়ে গেছে গাছচোর চক্র। শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ পাকা সড়কের পাশে সকাল বেলায় পিকআপ ভ্যান দাঁড় করিয়ে কর্তনকৃত কাঠগুলো গাড়িতে লোড করা হয়।

তবে অবাক করা বিষয়, বিষয়টি টের পায়নি বন বিভাগের লোকজনসহ নিরাপত্তার দায়িত্বপালন করা কমিউনিটি পেট্রোল গার্ড (সিপিজি) সদস্যরাও!

সকালে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়া বিটে এ ঘটনা ঘটেছে। সেগুন গাছে প্রায় ৫০ ঘনফুট কাঠ রয়েছে। যার অনুমানিক মূল্য এক লক্ষাধিক টাকা।  

নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পেয়ে দ্রুততার সঙ্গে সকাল ৮টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে গেছে, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিট কর্মকর্তা অন্যান্য কর্মচারীরা কর্তৃনকরা সেগুন গাছের গুড়ি অনুসন্ধান করছেন।  

যেদিক থেকে গাছটি তুলে নেয় হয় সেদিকের নানান লতাগুল্ম ও ছোট ছোট গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। পাকা সড়ককে নিচে নেমে প্রায় ৫শ’ গজ দূরের টিলার উপর থেকে কাটা হয়েছে এ মূল্যবান গাছটি।

লাউয়াছড়া থেকে কর্তনকৃত মূল্যবান সেগুনগাছ/ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন শুকনো ছড়া ধরে বালুমাটির উপর দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে দেখা গেল কিছু সংখ্যক মানুষের পায়ের ছাপ। তারপর গাছের শক্ত মাটিবিহীন শেকড়ের সাহায্যে টিলা উপর উঠে দেখা গেল সদ্য কর্তৃনকৃত সেগুনগাছের গুড়িটি প্রাণহীন পড়ে আছে। আশেপাশের অন্যান্য গাছগুলো ক্ষতি সম্মুখিন হয়েছে এ গাছটি কাটতে গিয়ে।

জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরে কো-ম্যানেজম্যান্ট কমিটি (সিএমসি) এর কমিউনিটি পেট্রোল গার্ড (সিপিজি) সদস্য সলিম, সিরাজ এবং মান্নান এই তিন জন তখন বন পাহাড়ার দায়িত্বে ছিলেন।  

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষণ (এসিএফ) তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, লাউয়াছড়ার গাছ চুরি করতে সম্প্রতি কমলগঞ্জের রামপাশার রুমান এবং সরাইবাড়ির আহমেদ এ দু’জন বেশি তৎপর দেখা যাচ্ছে। গত বছরের ১৭ মার্চ (শুক্রবার) বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে রুমান তার দল নিয়ে লাউয়াছড়ায় একটি সেগুন গাছের অর্ধেক কেটে ফেলে। পরে আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।  

তিনি আরো বলেন, ১৯ মার্চ (রোববার) কো-ম্যানেজম্যান্ট কমিটির (সিএমসি) মাসিক সভাতেও রুমান এবং আহমেদের সাম্প্রতিক গাছচুরির তৎপরতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দো ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, লাউয়াছড়াতে দীর্ঘদিন গাছচুরি বন্ধ থাকার পর হঠাৎ করে আবার কেন এমন ঘটলো, এ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। আমরা কর্তৃনকৃত সেগুনকাঠটি উদ্ধারের জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।  

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে চুরি করা অবৈধ এই বিশালাকৃতির সেগুন গাছটি মৌলভীবাজার শহরের প্রয়াত সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর স’মিলে প্রবেশ করেছে বলে নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে। বিগত সময়েও এই স’মিল থেকে অবৈধ কাঠ উদ্ধার করেছিল বন বিভাগ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭
বিবিবি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।