ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

মহাবিপন্ন মাংসাশী উদ্ভিদ সূর্যশিশিরের সংখ্যা কমছে দিনাজপুরে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৩
মহাবিপন্ন মাংসাশী উদ্ভিদ সূর্যশিশিরের সংখ্যা কমছে দিনাজপুরে

দিনাজপুর: উদ্ভিদ সচরাচর সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে। যা প্রাণীদের তুলনায় উদ্ভিদের অন্যতম একটি মৌলিক গুণ।

তবে পৃথিবীতে কিছু কিছু উদ্ভিদ আছে, যেগুলো কীট-পতঙ্গ খেয়ে থাকে। সূর্যশিশির বা সানডিউ এমনই এক প্রজাতির পতঙ্গভুক উদ্ভিদ। দিনাজপুরে দেখা মিলেছে সেই সূর্যশিশিরের।

জানা গেছে, দিনাজপুর সরকারি কলেজের পুকুরের পাশের মাঠে ২০০৫ সালের প্রথম দিকে এ পতঙ্গ খেকো উদ্ভিদটি আবিষ্কার করেন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। প্রতি বছর একই জায়গায়  জন্মায় সূর্যশিশির। এ উদ্ভিদটির শরীরে এক ধরনের লালা রয়েছে, যা কীট-পতঙ্গকে আকৃষ্ট করে। কোনো কীট-পতঙ্গ  উদ্ভিদটির লালার ওপর বসলেই আটকে গিয়ে শিকারে পরিণত হয়।  

সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আমাদের স্যারের মাধ্যমে সূর্যশিশিরের কথা জানতে পারি। তার সঙ্গে আমরা প্রায়ই মাঠে আসি এবং এ পতঙ্গভুক উদ্ভিদ সম্পর্কে অনেক কিছু শিখি। এ উদ্ভিদটি ছোট ছোট পোকা-মাকড় খায়। সেখান থেকে পুষ্টি নিয়ে বংশ বিস্তার করে। এটি বিরল প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। আগে এ উদ্ভিদ ইউটিউবসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখতাম। এখন তো আমাদের কলেজের মাঠেই দেখতে পাচ্ছি। এ জন্য খুব ভালো লাগছে।

কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও উদ্ভিদ নিয়ে কাজ করা মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পতঙ্গভুক উদ্ভিদের দেখা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে যেসসব পতঙ্গভুক উদ্ভিদ দেখা যায়, সেগুলোর মধ্যে সূর্যশিশির অন্যতম। যারা উদ্ভিদ নিয়ে লেখাপড়া বা কাজ করছেন, তাদের জন্য এ উদ্ভিদ অনেক কার্যকরী। এটি নিয়ে  লেখাপড়া বা গবেষণার সুযোগ রয়েছে। এ উদ্ভিদটি আমাদের সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি আরও বলেন, বিলুপ্ত প্রায় এ উদ্ভিদটি গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর কমে গেছে। কারণ হিসেবে আমরা দেখেছি, যে জায়গাটিতে এ উদ্ভিদটি জন্মায়, সেই জায়গাটিতে সাধারণ মানুষ ও গরু-ছাগল অবাধে বিচরণ করে। ফলে উদ্ভিদটি জন্মাতে পারে না। তাই আমি কর্তৃপক্ষের কাছে এ স্থানটি সংরক্ষণের দাবি জানাই।

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০০৫ সাল থেকে ক্যাম্পাসে সূর্যশিশির উদ্ভিদটি জন্ম নিচ্ছে। এক সময় আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে উদ্ভিদটি বিপুল পরিমাণে জন্মাতো। তবে বর্তমানে এটি জন্মানোর হার অনেক কমে গেছে। পুকুরপাড়ের পাশের মাঠে এটি জন্মায়। তবে এখানে সাধারণ মানুষ ও পশুর অবাধ বিচরণের কারণে তাদের বংশবিস্তার কমে গেছে। আমি প্রতি বছর এ উদ্ভিদটি কীভাবে জন্মায়, কি পরিমাণ জন্মায়, তা নিয়ে কাজ করছি। এ উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম Drosera burmannii. গত বছর এ উদ্ভিদটির যে পরিমাণ এ জায়গায় দেখা গিয়েছিল, তার চেয়ে অনেক কম হয়েছে এ বছর। তাই এ জায়গাটি আমাদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ হারবেরিয়াম থেকে কয়েকজন বিজ্ঞানী দুই-তিন বছর আগে এখানে এসেছিলেন। এখানকার মাটিসহ উদ্ভিদটি নিয়ে গিয়ে কিছু তথ্যও তারা আমাদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে তারা আর কোনো আগ্রহ না দেখানোয় আমরাই উদ্ভিদটির খোঁজ খবর রাখছি। পাঠদানের অংশ হিসেবে আমরা প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের এ মাঠে নিয়ে আসি। এ ধরনের পতঙ্গভুক উদ্ভিদ দেখতে এদেশের মানুষ বিদেশে যায়। আমরা যদি এ উদ্ভিদটি সংরক্ষণ করতে পারি, তাহলে বাইরের দেশ থেকে আমাদের দেশে বহু পর্যটক আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৩
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।