ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিনোদন

মনের তৃষ্ণা বাড়িয়ে দিলেন লোকশিল্পীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
মনের তৃষ্ণা বাড়িয়ে দিলেন লোকশিল্পীরা

ঢাকা (আর্মি স্টেডিয়াম থেকে): কখনো বিরহ, আবার কখনো আধ্যাত্মিক গানের মূর্ছনায় নিজেকে হারিয়ে ফেলা। সুরের স্রোতে দিগ্বিদিক জীবনের মানে খুঁজে ফেরা। মনের তৃষ্ণা মিটতে না মিটতেই যেন তৃষ্ণা আরও বেড়ে যাওয়া। 

লোকগানের মূর্ছনায় আর্মি স্টেডিয়ামের দর্শক-শ্রোতাদের শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে এমনভাবেই শিকড়ের টানে উদাসীন হতে দেখা গেছে। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্টের দ্বিতীয়দিনের রাত ছিল অনেক প্রাণবন্তর ও আবেগি।

রাজধানীর বুকে সন্ধ্যা নামতেই মাইক্রোফোন হাতে মঞ্চে উঠেন খুদে বাউল শফিকুল ইসলাম। শাহ আব্দুল করিমের ‘মন মজাইলা ওরে বাউলা গান’ কণ্ঠে তুলে বিমোহিত করেন উপস্থিতিদের। এরপর বিরহের গান ‘ও তুমি কই গেলা বন্ধুরে’ এবং ‘কি সুন্দর এক গানের পাখি’র সুরে নিজের পরিবেশনা শেষ করেন তিনি।

শফিকুল মঞ্চ ছাড়তেই লোকসংগীতশিল্পী কামরুজ্জামান রাব্বি নিজের গানের ঝুলি খুলে বসেন। মঞ্চে ‘ভাব আছে যার গায়’, ‘একখান পান চাইলাম পান দিলে নাহ’, ‘আমি তো ভালা না’, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’সহ কয়েকটি গানে মাতিয়ে রাখেন।  

‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’র এ দুই শিল্পীর গাওয়া শেষে জাদুকরী পরিবেশনা নিয়ে হাজির হন বাউল কাজল দেওয়ান। ঘণ্টাব্যাপী মন মাতানো গানে তিনি শহরের মানুষগুলোকে নিয়ে যান মাটির কাছাকাছি। মঞ্চে দাঁড়িয়ে কণ্ঠে ধরেন ‘দিন ফুরাইলেই ভাইঙ্গা যাইবো এই রঙ্গের মেলা’, ‘পিরিতির বাজার ভালা না’, ‘আমায় এত দুঃখ দিলি বন্ধু রে’, ‘আরে ও জীবন রে’সহ বেশকিছু মন মাতানো গান।

পরপর দেশী তিন শিল্পীর মনকাড়া গানের পর সুরের যাদুতে সবাইকে বস করেন মালির লোকশিল্পী হাবিব কইটে ও বাদামা। শুরুতেই গিটারের টুংটাং শব্দে দর্শক-শ্রোতাদের মনোযোগ নিজের দিকে নিয়ে যান তিনি। ভাষার গণ্ডি ভেদ করে একে একে গান পরিবেশন করে দর্শকদের হৃদয়ে পৌঁছে যান তারা।
হিনা নাসরুল্লাহ, ছবি: রাজীন চৌধুরীফোকফেস্টের দ্বিতীয়দিনের অন্যতম আকর্ষণ ফকির শাহাবুদ্দিন মঞ্চে দাঁড়ান সুরের মায়াজাল নিয়ে। বাউল সম্রাট লালন সাঁইয়ের গান ‘আল্লাহ বল মন রে পাখি’ ছিল তার প্রথম পরিবেশনা। এরপর একে একে গাইতে থাকেন ‘একদিন মাটির ভেতরে হবে ঘর’, ‘পাল তুলে দে মাঝি হেলা করিস না, ছেড়ে নৌকা আমি যাবো মদিনা’,  ‘আমারে আসিবার কথা কইয়া’, ‘সোনার ময়না পাখি’র মতো ভক্তিমূলক, আধ্যাত্মিক ও প্রেমের গান। তার গানে ডুবে ছিলেন উপস্থিত অজস্র দর্শক-শ্রোতা।

এরপর মঞ্চে আসেন দ্বিতীয় দিনের প্রতীক্ষিত গায়িকা পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ। যার গান শুনতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষমাণ দর্শক প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে নতুন উদ্যমে। মঞ্চে উঠেই হিনা নাসরুল্লাহ সবাইকে জানান ‘আসসলামু আলাইকুম’। তার সঙ্গে যোগ দেন আনসার নাসরুল্লাহ। এরপরই শুরু করেন রাগ ভৈরবীতে ‘সুবহান আল্লাহ ইসক দা জালওয়া’। এই হামদের পর তারা গেয়ে শোনান ‘ইয়া রাসূল ইয়া রাসূল,  কাওয়ালি ‘সাসো কি মালা পে’, সুফি কালাম ‘মে নারায়ে মাস্তানা’। তাদের প্রতিটি গানেই যেন প্রাণ খুঁজে পান প্রত্যেক দর্শক-শ্রোতা।  

দ্বিতীয় দিন সবার মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে, তৃতীয় দিনের জন্য দর্শক-শ্রোতাদের তৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে বিদেশি এই শিল্পদের পরিবেশনার শেষ হয়। পাশাপাশি লোকসংগীতের মহাযজ্ঞের দ্বিতীয় দিনের আয়োজনেরও সমাপ্তি ঘটে।  

শনিবার (১৬ নভেম্বর) সমাপনী দিনে বাংলাদেশের মালেক কাওয়াল ও চন্দনা মজুমদার, পাকিস্তানের ব্যান্ডদল ‘জুনুন’ ও রাশিয়ার ‘সাত্তুমা’র পরিবেশনার মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে ফোকফেস্টের পঞ্চম আসরের।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
জেআইএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।