ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

রণাঙ্গনের কিশোর থেকে সুরের জাদুকর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
রণাঙ্গনের কিশোর থেকে সুরের জাদুকর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল

না ফেরার দেশে চলে গেলেন কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার ও মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল (৬২)। মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) ভোর ৪ টার দিকে তিনি নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই সঙ্গীতজ্ঞের বিদায়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শোবিজ অঙ্গনে।

১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বুলবুল মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

দেশ বাঁচাতে জীবন বাজি রেখে লড়েছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। দু’বার নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ভাগ্যক্রমে ফিরে আসেন এই মুক্তিযোদ্ধা।

স্বাধীনতার পর রণাঙ্গনের কিশোর বুলবুল হয়ে ওঠেন সুরের জাদুকর। তার রচিত ও সুরারোপিত অসংখ্য গান কালকে জয় করেছে।

যুদ্ধ শেষ হবার পর যুদ্ধের স্মৃতি বুলবুলের মনকে বারবার নাড়া দিয়েছে। তাই দেশকে নিয়ে তৈরি করেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:-‘এই দেশ আমার সুন্দরী রাজকন্যা’, ‘আয় রে মা আয় রে’, ‘উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম’, ‘সব ক'টা জানালা খুলে দাও না’, ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে’, ‘ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সেই রেল লাইনের ধারে’, ‘মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না’ ইত্যাদি।

১৯৭৮ সালে জাফর ইকবাল-সুচরিতা অভিনীত ‘মেঘ বিজলি বাদল’ সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের অভিষেক ঘটে। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সক্রিয়ভাবে তার বিচরণ ঘটে সঙ্গীতাঙ্গনের প্রতিটি শাখায়। অডিওর পাশাপাশি সিনেমার গান তৈরি করে আকাশচুম্বী খ্যাতি পান তিনি।

প্রায় সাড়ে তিনশ’ সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন বুলবুল। শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতপরিচালক হিসেবে ২০০১ সালে ‘প্রেমের তাজমহল’ ও ২০০৫ সালে ‘হাজার বছর ধরে’ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক ও রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।

রোমান্টিক গানের গীতিকার হিসেবে বুলবুল ছিলেন অন্যোন্য। তার লেখা বহু কালজয়ী গান যুগ যুগ ধরে শ্রোতাদের মন জয় করে যাচ্ছে। স্টুডিওতে বসেই তিনি মুহূর্তের মধ্যে গান লিখে ফেলতেন। তাই চিত্রনির্মাতাদের কাছেও তিনি ছিলেন পছন্দের গীতিকার।

বুলবুলের রোমান্টিক গানের তালিকায় রয়েছে:-‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি’, ‘ও আমার মন কান্দে, ও আমার প্রাণ কান্দে’, ‘আমি তোমার দু’টি চোখে দু’টি তারা হয়ে থাকব’, ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’, ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে যেন পেয়েছি’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’, ‘বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম’, ‘আম্মাজান আম্মাজান’, ‘ঈশ্বর আল্লাহ বিধাতা জানে’, ‘এই বুকে বইছে যমুনা’, ‘আকাশের মতোই অসীম’, ‘আমার সুখেরও কলশী ভাইঙা গেছে লাগবে না আর জোড়া’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’, ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’, ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, হৃদয়ে সুখের দোলা’, ‘তুমি আমার এমনই একজন’, ‘যারে এক জনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন’ ইত্যাদি।

সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আবদুল হাদি, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, আগুন, কনকচাঁপা, কুমার বিশ্বজিৎ, সুবির নন্দিসহ অসংখ্য দেশ বরেণ্য শিল্পী বুলবুলের গানে কণ্ঠে দিয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে এক সন্তানের জনক ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তার পুত্রের নাম সামীর আহমেদ।

 বুধবার (২৩ জানুয়ারি) মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে প্রখ্যাত এই গীতিকার ও সুরকারকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
জেআইএম

**প্রথমবার জেল ভেঙেছিলেন, পরেরবার বেঁচেছিলেন ভাগ্যক্রমে
**বুধবার মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন হবে বুলবুলের
**‘বাবাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হোক’
**‘আমাকে যেন ভুলে না যাও...’

**আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আর নেই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।