ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

গাইবান্ধার ভোটে অনিয়মকারী কর্মকর্তাদের শাস্তি দেবে ইসি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেনসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২২
গাইবান্ধার ভোটে অনিয়মকারী কর্মকর্তাদের শাস্তি দেবে ইসি নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। ফাইল ছবি

ঢাকা: গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অপরাধ প্রমাণিত হলে চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এজন্য একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।  

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথকে প্রধান করে তিন সদস্যের ওই কমিটি ভোটের দায়িত্বরত কর্মকর্তাসহ ৬৮৫ জনের শুনানি করবে।

মো. আলমগীর বলেন, যারা কথা শোনেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পুরো এখতিয়ার রয়েছে। যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় তারা স্বেচ্ছায়, স্বউদ্যোগে এগুলো করেছে, একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সুযোগ ছিল তারা নেয়নি- তাহলে তাদের চাকরিচ্যুত থেকে শুরু করে তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

‘আমরা দুই মাস পর্যন্ত সাসপেন্ড করতে পারি। আর আইন যেটা বলে, আমরা যে শাস্তির সুপারিশ করবো নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করে আমাদের জানাবে। আমরা বললে তারা করলেন বা করলেন না, তা নয়। বাস্তবায়ন না করলে সেই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারি। কার কেমন অপরাধ সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’ বলেন তিনি।  

২০, ৩০, ৪০ জন কর্মকর্তা একই অপরাধ করলে কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে সংখ্যা বিষয় নয়। বিষয়টি হলো তিনি অপরাধ করেছেন কিনা। আমাদের কাছে সব ডকুমেন্ট আছে। সব ভিডিও আছে। কিন্তু কেন করলো সেটা কিন্তু বের করতে হবে। খুন করলেই তো ফাঁসি দেন না জজ সাহেব। এটার প্রক্রিয়া আছে তো। তাই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই সিদ্ধান্ত হবে।
 
তিনি বলেন, আমাদের আইন, ডিজিটাল যুগের সুবিধা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আগের কমিশন কী করেছেন সেটা নিয়ে বলবো না। আমরা আইসিটির সুবিধাটা নিয়েছি। সিসি টিভির মাধ্যমে আমরা নিজেরাই দেখলাম। এখন তারা স্বেচ্ছায় (অনিয়ম) করেছে নাকি চাপের মুখে করেছে এটাই দেখার বিষয়।

এক তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে যেহেতু নিজেরাই আমরা অনিয়ম দেখেছি, তার অর্থ বাকিগুলোতেও যে শৃঙ্খলা ছিল তা নয়। অপরাধের মাত্রা দেখে শাস্তির সিদ্ধান্ত হবো।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, মাঠ কর্মকর্তাদের ওপর আস্থাহীনতার কারণেই সিসি ক্যামেরা বিষয় এমন নয়। টিমের সবাই তো খারাপ না। দু’একজন হতে পারে। আমাদের ওপর যেমন তাদের আস্থা আছে, আমাদেরও তাদের ওপর আছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও তো একই ডিসি, একই এসপি, একই ভোটকর্মরত দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে তো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কাজেই একটা খারাপ হলে যে আরেকটা খারাপ হবে তা নয়।
 
 গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের পুরো বিষয়টি তুলে ধরে মো. আলমগীর বলেন, আমরা যেটা দেখেছি, যে অভিযোগটা আছে- অন্য কেউ ইভিএমে ভোটটা গোপন কক্ষে দিয়ে যায়। কুমিল্লায়, ঝিনাইদহে এটা আমরা দেখিনি। মেহেরপুরেও দেখিনি। কিন্তু গাইবান্ধায় ভোট শুরুর পরপরই তিনটা কক্ষে দেখি যে এজেন্টরা গোপন কক্ষে গিয়ে চাপ দিয়ে দেন। আমরা ক্যামেরায় দেখে প্রিজাইডিং অফিসারকে ফোন করি। আমরা পেছনে দেখতে বলি উনি কেন জানি সামনের দিকে যান। যখন ডানে যেতে বলি উনি তখন উনি বামে যাচ্ছেন। এটা আমাদের কাছে আশ্চর্য লেগেছে।
 
তিনি আরও বলেন, আমরা তাকে (গোপন কক্ষের অবৈধ ব্যক্তি) আইনে সোপর্দ করতে বলি, উনি (প্রিজাইডিং কর্মকর্তা) তাও করলেন না। পরপর তিনটা কেন্দ্রে এমন হলো। তারা কোনো ব্যবস্থাও নিলেন না এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তাও নিলেন না। এরপর কেন্দ্র তিনটি বন্ধ করলাম। এবং অন্যান্য কেন্দ্রের পরিস্থিতিও সিসি ক্যামেরায় দেখা শুরু করলাম। তখন যেটাই দেখি, দেখি একই অবস্থা। একই দৃশ্য। এরপর মাননীয় সিইসি ডিসি-এসপির সঙ্গে কথা বললেন। অতিসত্তর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বললেন। আমরা সোয়া ১২টা পর্যন্ত দেখলাম। এখন চোখের সামনে যেহেতু আমরা দেখেছি সিসি ক্যামেরায় বড় পর্দায় সবার সামনে, তখন তো আমরা বলতে পারি না আর্থিক অনটন কারণে সুষ্ঠু নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা যেতে পারে। এটার কোনো সুযোগ আছে? যেহেতু সুযোগ নেই, আইন অনুযায়ী যা করা উচিত সে সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।

অনেক কর্মকর্তা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে লিখিত দিয়েছেন, তাদের বিষয়ে এই কমিশনার বলেন, প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বক্তব্য দেওয়ার একটা ফরম আছে। আমাদের কাছে কিছু পাঠায়নি। কার কাছে কী দিয়েছে সেটা আমরা জানি না। আইনগতভাবে এটা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে কে দিল, কাকে দিল। এরপর আমরা দেখবো। ন্যায় করলে তো সমস্যা নেই, অন্যায় করলে তো সমস্যা হতে পারে।
 
গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পেয়ে ৫০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। একটি কেন্দ্র বন্ধ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। মোট ৫১টি কেন্দ্র দুপুরের মধ্যেই বন্ধ হওয়ায় নির্বাচনের যৌক্তিকতা না থাকায় পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দেয় ইসি।
 
মো. আলমগীর বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে। আগামী ২০ তারিখ পর্যন্ত শুনানি করে সাতদিনের মধ্যেই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২২
ইইউডি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।