ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

যুদ্ধাপরাধীর জামাতা কাউন্সিলর প্রার্থী!

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২১
যুদ্ধাপরাধীর জামাতা কাউন্সিলর প্রার্থী! আব্দুর রহমানের নির্বাচনী পোস্টার, ইনসেটে তার শ্বশুর

সাভার (ঢাকা): ১১১ জনের হত্যাকারী নোয়াখালীর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবুল কালাম ওরফে একেএম মনসুরের জামাতা আব্দুর রহমান ঢাকার সাভার পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানী বাসিন্দারা ও মুক্তিযোদ্ধারা।

তারা বলছেন, একজন যুদ্ধাপরাধীর জামাতা, যিনি কি না ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে পালিয়ে থাকতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেন, তিনি সাভার পৌরসভা নির্বাচনে কীভাবে অংশ নেন।  

বিএনপি নেতা আব্দুর রহমানের নামে দু’টি মামলার মধ্যে জিআর মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। আর অস্ত্র আইনের মামলাটি চলমান। তবুও তিনি সাভার পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বোতল প্রতীকে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জানা গেছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নোয়াখালির সুধারামে ১১১ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আবুল কালাম ওরফে মনসুর। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা তিনটিতে মনসুরসহ আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। একই বছরের ৩১ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চে একেএম মনসুরসহ তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও এক আসামিকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেন।

সাভার পৌরসভা এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের পর একেএম মনসুর নিজ জেলা নোয়াখালী ত্যাগ করে সাভারে বসবাস শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি মার্কেটসহ একাধিক বাড়ি নির্মাণ করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হওয়ার পরপর তিনি সাভার থেকে বিদেশে আত্মগোপনে চলে যান। এর পর থেকে মনসুরের মার্কেট ও বাড়ির ভাড়া উত্তোলনসহ যাবতীয় বিষয় দেখভাল করে আসছেন তার জামাতা কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুর রহমান ও ছেলে এ এচ এম  সামসুদ্দিন পলাশ। জামাতা ও ছেলের মাধ্যমে ওই টাকা অবৈধ পথে মনসুরের কাছে পাঠানো হয়। গণমাধ্যমে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।  

আরও জানা গেছে, এ যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে সাভারে প্রথম আন্দোলনে নেমেছিলেন আজকের সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর।

এসব জানতে চাইলে মনসুরের জামাতা আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পিতা অপরাধ করলে তার দায়ভার সন্তানের না। আর যেহেতু তিনি আমার শ্বশুর সে দায়তো আমার ওপর পড়ার কথা না।

আপনার বিরুদ্ধে আপনার শ্বশুরকে অর্থ পাঠিয়ে বিদেশে আত্মগোপনে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগটি সত্য নয়। যেহেতু তিনি আমার শ্বশুর, সেহেতু তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক, মাঝে মাঝে তার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়। এখানে লুকানোর কিছুই নেই। বিষয়গুলো পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা সবাই জানে, তারা আমার মোবাইল ট্রাক করে আমাদের কথাবার্তাও শুনছে।

সাভার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, একজন যুদ্ধাপরাধীকে সহযোগিতা করা গুরুতর অপরাধ। যেহেতু মনসুর বিদেশে আত্মগোপনে রয়েছেন, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে পালিয়ে থাকতে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তার সহযোগীদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। একজন যুদ্ধাপরাধীকে সহযোগিতাকারী এবং যুদ্ধাপরাধী পরিবার থেকে কেউ জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলে অবশ্যই জনগণের উচিত তার নির্বাচন বয়কট করা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, আমরা বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছি।

এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও সাভার পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে কেউ এখনো অভিযোগ করেনি। এছাড়া বিষয়টি অমার নির্বাচনী আওতায় পড়ে না। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন দেখবে৷ তবে অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।