ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

এনআইডিতে অনিয়ম

বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকায় টাইগার আইটি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৯
বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকায় টাইগার আইটি

ঢাকা: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড সংক্রান্ত আইডিইএ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটিকে সাড়ে ৯ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানকে সাড়ে ৬ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

গত এপ্রিলে বিশ্ব ব্যাংক সেনশনস বোর্ড এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বিশ্ব ব্যাংকের এ সংক্রান্ত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ওই ঘটনায় তৎকালীন ইসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন।

 

সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ এবং ইসি সচিবে দায়িত্বে ছিলেন মো. সিরাজুল ইসলাম।

আইডিইএ প্রকল্পে অনিয়ম নিয়ে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ঘোষণার বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অনিয়মের সঙ্গে ইসির কেউ যুক্ত ছিলেন বলে আমি মনে করি না। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রধান আমি ছিলাম। এতে কোনো যোগসাজোশ করা হয়নি। সে সময় এ নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। ওই রায় ইসির পক্ষে ছিল। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটি থেকেও বিভিন্ন ধরনের কোয়ারি দেওয়া হয়েছিল। ইসি থেকে যে জবাব দেওয়া হয়েছিল, তাতে সন্তুষ্ট হয়েই কমিটি এটির অনুমোদন দেয়। ’
 
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ভোটার রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম, ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট, আঙ্গুলের ছাপ মেলানোর এএফআইএস সার্ভারসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলো টাইগার আইটির মাধ্যমেই করা হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংকের এ নিষেধাজ্ঞার ফলে এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চলমান সম্পর্কের  ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে। কেননা, দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার নৈতিক ভিত্তি থাকে না।
 
২০১১ সালে তৎকালীন সিইসি এটিএম শামসুল হুদা কমিশন ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার আইডিইএ প্রকল্পটি হাতে নেয়। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা ১০ বছর মেয়াদে ঋণ দেয়।
 
এ প্রকল্পের অধীনে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের (সে সময়ের ভোটার সংখ্যা) হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার কথা ছিল। স্মার্টকার্ডপ্রস্তুত ও বিতরণের লক্ষ্যে ফ্রান্সের অবার্থার টেকনোলজিস নামে এক কোম্পানির সঙ্গে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি করে ইসি।  

ওই কাজ এখনও শেষ হয়নি। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্প থেকে সরে গেছে। দেনা-পাওনা নিয়ে অবার্থার টেকনোলজিসের সঙ্গে ইসির বিরোধ সৃষ্টি হয়। অবার্থার টেকনোলজির বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটির মাধ্যমেই কাজ করেছিল। তবে বর্তমানে অবার্থারের সঙ্গে টাইগার আইটির সম্পর্ক ভাল নয়।  

পাওনা পরিশোধ না করার অভিযোগে অবার্থারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে টাইগার আইটি। আর এই মামলা জটিলতার কারণে নির্বাচন কমিশন এখনও অবার্থারের কাছ থেকে দেড় কোটি ব্ল্যাংক স্মার্টাকার্ড নিতে পারেনি
 
বিশ্বব্যাংক বলছে, টাইগার আইটি ও এর চেয়ারম্যান বিশ্বব্যাংকের অনুদান ও ঋণনির্ভর কেনাকাটার নীতিমালা অনুযায়ী বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন দরপত্রে অশুভ আঁতাত করে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে।  

অন্য প্রতিষ্ঠান যাতে দরপত্রে অংশ নিতে না পারে, সে জন্য প্রভাব বিস্তার করেছিল। বিশ্বব্যাংক যখন অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে, তখন তারা অবৈধ পন্থায় তদন্ত কাজকে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করেছিল।
 
বিশ্ব ব্যাংক গত বছরের নভেম্বরে টাইগার আইটির এক সময়ের আন্তর্জাতিক সহযোগী ফরাসি প্রতিষ্ঠান অবার্থার-কেও কালো তালিকাভুক্ত করে।  
 
গত ২৪ এপ্রিল বিশ্বব্যাংক বিষয়টি প্রকাশ করে। নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের বোর্ড বিভিন্ন পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে এ সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে এ নিয়ে শুনানি হয়।
 
অভিযোগ রয়েছে, স্মার্টকার্ড তৈরির জন্য আবেদনকারী একাধিক যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে খাজনা দিয়ে ইসি আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নামগ্রস্ত অবার্থার-কে কাজ দেয়। এ জন্য ইসি সচিবালয় দরপত্রের শর্ত এমনভাবে তৈরি করে, যাতে অবার্থার ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান আবেদন করতে না পারে। অবার্থারের স্থানীয় সহযোগী টাইগার আইটির পরামর্শে এই কাজ করে ইসি। যথাসময়ে স্মার্টকার্ড সববরাহ না করতে পারলেই অবার্থার যে দুনার্মগ্রস্ত কোম্পানি তার প্রমাণ পাওয়া যায়।  
 
বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৯
ইইউডি/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad