ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

উপজেলা নির্বাচন

বরিশালে সুষ্ঠু ভোটে ভাগ্য খুলবে ‘ভাগ্যবানের’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৩ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৪
বরিশালে সুষ্ঠু ভোটে ভাগ্য খুলবে ‘ভাগ্যবানের’ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রার্থীরা।

বরিশাল: প্রচারণার শেষ সময়ে এসে বিভাগীয় সদরদপ্তর খ্যাত বরিশালের সদর উপজেলায় নির্বাচনের মাঠ জমজমাট। মাঠপর্যায়ে সশরীরে প্রচারণার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে চলছে জোর প্রচারণা।

 যেখানে বরিশাল সদর উপজেলাবাসীর ভাগ্যের উন্নয়নের কথা বলছেন প্রার্থীরা। দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। সবমিলিয়ে শেষ সময়ে এসে ভোটের হিসাব-নিকেশে অনেকটাই পরিবর্তনের কথা বলছেন সাধারণ ভোটাররা।

বরিশাল সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ভোটাররাই এমন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে চাচ্ছেন যাকে সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে পাশে পাবেন সব সময়। তবে এজন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন ও সুষ্ঠুভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ চান ভোটাররা।

রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ভোটার রবিউল ইসলাম বলেন, যদি ভোটের পরিবেশ বজায় রাখা হয় আর কেউ প্রভাব বিস্তার না করে তাহলে নারী-পুরুষ এবং তরুণ থেকে বৃদ্ধ সবাই ভোট দিতে যাবেন। সেক্ষেত্রে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে খুঁজে নিতে পারবেন, যিনি উন্নয়ন না করতে পারলে ভালো ও খারাপ সবটা সময়ই আমাদের পাশে থাকবেন। বিপদে যার দুয়ারে গিয়ে ফেরত আসতে হবে না, কিংবা জরুরি প্রয়োজনে কল দিলে অন্তত সেটি ধরে শুনবেন।

একই কথা জানিয়েছেন চাঁদপুরা ইউনিয়নের ভোটার সুমি বেগম। তিনি বলেন, ভোটের দিনে ঝামেলা দেখা দিলে নারীরা তো কেন্দ্রে যেতে চাইবে না। তবে একবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে ভালো মানুষকেই ভোট দেবো। অন্তত এমন মানুষকে ভোট দেবো যিনি নারীদের উন্নয়নে কাজ করবেন।

তথ্যানুযায়ী, দলীয় প্রতীক না থাকলেও প্রার্থী হিসেবে মাঠে যারা রয়েছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। এই কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সব প্রার্থীর সঙ্গে ভাগ হয়ে গেছেন।  

স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বলছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোটরসাইকেল প্রতীকের এস এম জাকির হোসেনের সঙ্গে যুবলীগ নেতা আনারস প্রতীকের মাহমুদুল হক খান মামুনের লড়াই হবে ভোটের মাঠে। তবে অনেকের দাবি, মোটরসাইকেল প্রতীকের এস এম জাকির হোসেনের সঙ্গে অপর আওয়ামী লীগ নেতা ও সদ্য বিদায় নেওয়া চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দোয়াত-কলম প্রতীকের মনিরুল ইসলাম ছবির লড়াই হবে ভোটের মাঠে। কারণ এ দুইজনেরই আগে থেকে বিভিন্ন সুষ্ঠু নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ছোট-বড় জনপ্রতিনিধিত্বমূলক কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছেন।

আর মাঠের হিসাব বলছে, বিএনপি নির্বাচনকে নিরুৎসাহিত করায় ভোটের দিন ভোটার উপস্থিতি নিয়েও কিছুটা শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তারপরও নির্বাচনী কৌশলগত কারণে প্রার্থীরাই ভোটারদের ভোট দিতে উৎসাহিত করছেন।

এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে সদর উপজেলার অবস্থান হওয়ায় নগরের বাসিন্দারা সেখানকার ভোটার না। সেক্ষেত্রে এখানে স্থানীয় সাংসদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের একটি প্রভাব থাকবে ভোটের মাঠে। যদিও সংসদ সদস্য, সিটি মেয়রসহ সরকারি সুবিধাভোগী প্রভাবশালীদের কেউই প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার কথা বলেননি। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং নগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগ পক্ষের অনুসারীদের পাশে রাখাটাকেই উত্তম মনে করেছেন অনেক প্রার্থী।

যেখানে দেখা গেছে, মহানগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বৃহৎ অংশ রয়েছে মনিরুল ইসলাম ছবির সঙ্গে, আবার আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশ এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য অনুসারীদের বৃহৎ অংশকে ভোট চাইতে দেখা গেছে মোটরসাইকেল প্রতীকের এস এম জাকির হোসেনের জন্য। যদিও বর্তমান সিটি মেয়রের অনুসারীদের পাশাপাশি মহানগর আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশ রয়েছেন মাহমুদুল হক খান মামুনেরও পক্ষে।

তবে ভোটের পরিবেশ বজায় রাখতে গেলে নগরের ভোটার ও বাসিন্দাদের কোনো প্রভাবই থাকবে না উপজেলাতে এমনটাই বলেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর এমনটা হলে উভয় দিক থেকে সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন এস এম জাকির হোসেন, তার সঙ্গে সুবিধাজনক স্থানে থাকবেন মনিরুল ইসলাম (ছবি)ও। তবে মাহমুদুল হক খান মামুনের অবস্থান যে নড়বড়ে তা বলা না গেলেও, ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মাহাবুবুর রহমান মধু বিগত দিনের কার্যক্রমের কারণে অনেকের থেকে এগিয়ে থাকতেই পারেন। আবার কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী মো. আব্দুল মালেক তেমনভাবে প্রচার-প্রচারণা না করলেও একসময় শিক্ষকতা করায় তারও জনপ্রিয়তা রয়েছে।

অপরদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় সাংসদের অনুসারী ও সাবেক ছাত্রনেতা বই প্রতীকের মো. মাহিদুর রহমানের (মাহাদ) সঙ্গে তালা প্রতীকের মো. জসিম উদ্দিনের মধ্যে ভোট যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন ভোটাররা। এক্ষেত্রে বিগত দিনে সদর উপজেলায় সংসদ সদস্যদের পক্ষে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে জড়িত থাকায় মাহাদের এগিয়ে থাকার সম্ভবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান উড়োজাহাজ প্রতীকে শহিদ মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাঁস প্রতীকের নেহার বেহম, ফুটবল প্রতীকের মারিয়া আক্তার ও কলস প্রতীকের মোসাম্মৎ হালিমা বেগমের মধ্যে কাউকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তবে মোসাম্মৎ হালিমা বেগম পরিচিত মুখ হওয়ায় তার কিছুটা এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে প্রার্থীরা অনেকেই বিজয়ের বিষয়ে নিশ্চিত।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২৪
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।