ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

প্রার্থীকে মারধরসহ বিভিন্ন অভিযোগে উত্তপ্ত বরিশালের নির্বাচনী মাঠ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৩
প্রার্থীকে মারধরসহ বিভিন্ন অভিযোগে উত্তপ্ত বরিশালের নির্বাচনী মাঠ

বরিশাল: আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের আগে প্রচারণার শেষ দিকের এ সময়টাতে এসে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন মেয়র প্রার্থীরা।

অপরদিকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা, মারধর, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, মাইক ভাংচুরসহ নানান অভিযোগে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে নির্বাচনী মাঠ।

রোববার (০৪ জুন) দুপুরে বরিশাল নগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. শাকিল হোসেন পলাশ ও তার কর্মীদের মারধর এবং নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুরের অভিযোগে ওঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রিয়াদ হোসেন খানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে কাউন্সিলর প্রার্থী মো. শাকিল হোসেন পলাশের অনুসারীরা ওই এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের সামনে গিয়ে জড়ো হন। তারা সেখানে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

কাউন্সিলর প্রার্থী শাকিল হোসেন পলাশ জানান, নগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের খালেদাবাদ কলোনির পুকুর পাড়ে আমার নির্বাচনী কার্যালয়। ঘটনার সময় রোববার দুপুরে আমি অফিসে বসা ছিলাম, তখন ৫-৭টি মোটরসাইকেল আকস্মিক অফিসের সামনে আসে। পরবর্তীতে মোটরসাইকেলে থাকা লোকজন অফিসে ঢুকে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকায়। এ সময় তারা পিস্তলের বাট ও অফিসে থাকা টিফিন ক্যারিয়ার দিয়ে আমাকে মারধর করে।  

স্থানীয় রুবেল, রাজন, হীরাসহ ৭-৮ জন লোক এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো ঘটনা ছাড়াই তারা আমার নির্বাচনকে বানচাল করতে এ হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় আমি আইনের আশ্রয় নিব, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছি।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পরপরই পলাশের সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করে পুলিশ কার্যালয় অভিমুখে রওয়ানা দেয়। তারা সেখানে গিয়ে বিচার দাবি করে।

এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম-বিপিএম বলেন, প্রার্থীর ওপর হামলার একটি ঘটনা ঘটেছে বলে আমি শুনেছি। ওই এলাকার মানুষ আমার কাছে এসে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

অভিযোগ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন এক প্রার্থী

এরআগে শনিবার দিবাগত রাতে প্রচারণার গাড়ি (অটোরিকশা) ও মাইক ভাংচুরের অভিযোগ করেছেন সংরক্ষিত-৫ (১২, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড) আসনের বই প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মোসা. কামরুন্নাহার রোজী।  সে ঘটনায় রোববার (০৪ জুন) সকালে তিনি বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

মোসা. কামরুন্নাহার রোজী জানান, শনিবার রাতে নগরের ফরেস্টার বাড়ি এলাকায় প্রচারণা চলাকালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইসরাত জাহান লাভলীর সমর্থক শাহরুখ, সাগর, শাওনসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জন আমার প্রচার গাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় গাড়ি চালক সজলকে মারধর, অটোরিকশা ভাংচুর, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। পরে খবর পেয়ে আমার কয়েকজন কর্মী সেখানে গেলে তাদেরও মারধর করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয় হামলাকারীরা। এ ঘটনায় আহতের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা লিখিত অভিযোগটি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে রোববার (০৪ জুন) দুপুরে নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণায় বাধা, কর্মী-সমর্থকদের মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাধারণ কাউন্সিলর পদের ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী মো. সাফিন মাহামুদ (তারিক) ও ঠেলাগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী শরীফ মো. আনিছুর রহমান (আনিছ শরীফ)।

বিকেল ৩টায় নগরের চান্দুমার্কেট এলাকার নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাফিন মাহামুদ (তারিক) বলেন, প্রতিদিনের মত সকালে আমার পাঁচজন নারীকর্মী ঘুড়ি প্রতীকের হ্যান্ডবিল আর পাঁচজন নৌকা প্রতীকের হ্যান্ডবিল নিয়ে প্রচারণায় নামে। তখন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আনিছ শরীফের লোকজন তাদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখায়। এরপর দুপুরে আমি কয়েকজন লোক নিয়ে আনিছ শরীফের পুরান বাড়ি এলাকায় প্রচারণায় যাই। হঠাৎ আনিছ শরীফের ভাই মোহন শরীফসহ কয়েকজন লোক আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলে তারা এসে আমার লোকজনকে উদ্ধার করে। তবে আমার দুজন লোককে পুলিশ আবার গ্রেপ্তারও করেছে।

তিনি বলেন, আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বর্তমান কাউন্সিলর ও সিটি নির্বাচনে ঠেলাগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী আনিছ শরীফ এবং তার লোকজন আমাকে উৎখাত করতে চায়। আমার লোকজনকে প্রাণনাশসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এরআগে শনিবার আমি তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমি চাই সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ যেন বজায় থাকে।

অপরদিকে ধান গবেষণা রোডের নির্বাচনী কার্যালয়ে বিকেল সাড়ে ৩টায় এক সংবাদ সম্মেলনে ঠেলাগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী শরীফ মো. আনিছুর রহমান (আনিছ শরীফ) জানান, আমার পুরাতন বাড়িতে গিয়ে মো. সাফিন মাহামুদ (তারিক) ও তার লোকজন দিনের বেলা নৌকার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে এবং আমাদের উদ্দেশ্যে গালাগালি করে। আমার ছোট ভাই আমাকে খবরটি জানালে আমি কয়েকজনকে নিয়ে সেখানে গিয়ে একজনকে ধরে ফেলি। তাকে জিজ্ঞাসা করলে তারিকের নির্দেশে নৌকার পোস্টার ছেঁড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। এরপর চান নামে তারেকের বডিগার্ড ঘটনাস্থলে এসে হুমকি-ধামকি দিলে তাকেও স্থানীয়রা দেশিয় অস্ত্রসহ ধরে ফেলে। পরে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলে তারা ঘটনাস্থলে আসলে স্থানীয়রা জড়ো হয়ে তারেককে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

তিনি বলেন, আমি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ কামনা করছি। ভোট চাইতে গিয়ে সকালে মিথ্যা, বিকেলে মিথ্যা বলার লোক আমিনা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফিরোজ আহমেদের বাড়িতে আমি ভোট চাইতে গেছি, সেখানে তো তারা আমাকে সরবতও খাইয়েছে, আর আমার বাড়িতে অন্যরা আসতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২৩
এমএস/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নির্বাচন ও ইসি এর সর্বশেষ