ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী করার তাগিদ

সিনিয়ল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৮ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী করার তাগিদ সুশাসনের জন্য নাগরিক আয়োজিত অনলাইন বৈঠক

ঢাকা: গত এক দশকের নির্বাচনী ব্যবস্থায় ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না। তাদের ভোটকেন্দ্রমুখী করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

রোববার (২১ মে) সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত এক অনলাইন বৈঠকে বক্তারা এমন কথা বলেন।

সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক সঞ্চালনা করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। অন্যদের মধ্যে সুজন সহ-সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল অধ্যাপক, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার দিনদিন অবনতি হচ্ছে। গত দশ বছরে দেখা গেছে, নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ নেই। পার্টির লোকেরাও ভোটকেন্দ্রে যায় না। কারণ তারা ভাবে আমাদের লোকেরাই তো জিতবে। এই অবস্থার কীভাবে সৃষ্টি হলো? নিউট্রাল নির্বাচন হলে কী করে ভোটারকে নিয়ে আসবেন কেন্দ্রে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আবার নির্বিঘ্নে বাড়িতে ফিরতে পারেন। এটিই নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ। এই কাজ না করতে পারলে নির্বাচন কমিশন ফেইল করেছে বলতে হবে।

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটাররা ভোট দিতে না পারলে কী করবেন তা জানেন না। আজ পর্যন্ত ভোট দিতে না পারার কারণে একটা মামলাও হলো না, যে আমি ভোট দিতে পারিনি। কাজেই ভোট দিতে না পারলে তারা কী করবেন, সেটি ভোটারদের জানাতে হবে। কারণ নির্বাচন কমিশনের কাজই হচ্ছে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা।

এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি ফিরিয়ে আনার জন্য যে মনোভাব দরকার, তা কারো মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। কেউ চায় না সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেখানে কিছু সংস্কারে হতে পারে, তবে সেই ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।

আবু আলম শহীদ খান বলেন, যারা নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত তাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। তারা এখনো জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। আস্থা অর্জন করতে হবে।

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, একের পর এক বিতর্কিত নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় নায়ক ভোটারদের অপমান করা হচ্ছে। ভোটাররা ভোটের দিন ক্ষমতায়িত বোধ করেন, সেটি আবার কবে ফিরে পাব, সেটিই আমাদের এখন মূল প্রশ্ন।

তিনি বলেন, ভোটারদের গুরুত্বহীন করে তোলা হয়েছে। কবে আমর এটা ফেরত পাবো?

তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে এখন নির্বাচন যে অবস্থায় আছে, তাতে এই নির্বাচনগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যবেক্ষণের দিক থেকে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। এখন নির্বাচনে যত কম দল অংশ নিচ্ছে, যত কম মানুষ ভোট দিচ্ছে তত বেশি ক্ষমতাসীনদের জন্য সুবিধা হচ্ছে। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা থাকলে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এখন নিজেদের মধ্যে ঝুঁকিমুক্ত নির্বাচনের একটি ধারা দাঁড়িয়ে গেছে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে কিছুটা অন্তত স্পষ্ট হবে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়নি। এরপর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। গত নির্বাচনে বিরোধীদল অংশ নিয়েছিল। এবার ভোটারদের সামনে কোনো বিকল্প থাকবে না। বিরোধী দল অংশ না নেওয়ায় এবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে না। অতীতে দেখা গিয়েছে, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি হস্তক্ষেপ না করে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।

‘আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন: প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে-বুঝে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য প্রার্থীদের তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি। কমিশন এই কাজটিকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে কি-না সেটি নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।