ঢাকা, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ জুন ২০২৪, ০৯ জিলহজ ১৪৪৫

শিক্ষা

রুয়েট শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে ইউজিসি

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৮ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২২
রুয়েট শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে ইউজিসি

রাবি: প্রকল্পের সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যাংকে রেখেই প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদন দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি (রুয়েট) বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে।  

তিনি রুয়েটের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক পদে থাকাকালীন এ অনিয়ম করেন।

 অভিযোগ উঠেছে, ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে রুয়েটের গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক বিভাগ চালুকরণ সাব প্রকল্পের প্রায় ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন।  

এমন অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তিন সদস্যের একটি দল রোববার (৫ জুন) দুপুরে রুয়েটে আসেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ ও প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

তদন্ত কমিটিতে আছেন ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. ফেরদৌস জামান, উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) রোকসানা লায়লা ও উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আব্দুল আলিম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ চালুকরণের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত ও ল্যাবরেটরি সুবিধাদি সৃষ্টিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় রুয়েটের গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালুকরণ শীর্ষক সাব-প্রকল্পের জন্য ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পটি শেষ হয় ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট। তখন ব্যাংকের হিসাবে ১৩ কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪১৪ টাকা ছিল। সেখান থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এরপর ব্যাংকের হিসাবে ৭ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ টাকা স্থিতি ছিল। ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ওই স্থিতি থেকে ৪৯টি চেকের মাধ্যমে ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭২৮ টাকা সরিয়ে নেন অধ্যাপক আব্দুল আলীম।

রূপালী ব্যাংকের রুয়েট শাখার হিসাব নম্বর-৩৭২৩০২০০০০৪৩৮ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রকল্প সমাপ্তি ও পরিদর্শন শেষ হয় ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। তখন ওই হিসাব নম্বরে ৭ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ টাকা স্থিতি ছিল। নিয়ম অনুযায়ী এই টাকার তথ্য ইউজিসিকে জানাতে হবে। কিন্তু সেটি না জানিয়ে ২২ মার্চ ২০১৭ থেকে ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত কয়েক দফায় ৭ কোটি টাকার বেশি সরিয়ে নেওয়া হয়। এখন হিসাব নম্বরটিতে অবশিষ্ট রয়েছে ৫০ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৯ টাকা।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য ও ইউজিসির উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) রোকসানা লায়লা বলেন, প্রকল্পটি শেষ হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল আলীম। কিন্তু প্রকল্পটির বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় ইউজিসি। ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ সরিয়ে নেওয়া, তথ্য গোপন করে প্রকল্পের কাজ শেষ করার রিপোর্ট দাখিল করা, প্রকল্প শেষে প্রকল্পের অ্যাকাউন্টে চেক ও অব্যবহৃত টাকা জমা না দেওয়া, প্রকল্প শেষে প্রকল্পের ব্যাংক হিসাব বন্ধ না করা, ২০১৬ সালের পর প্রকল্প থেকে প্রায় ১৩ কোটি টাকা বিল দেওয়া হলেও ভ্যাট ও আইটি বাবদ কেটে রাখা টাকা (১০%) সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা না দেওয়া, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অব্যবহৃত টাকা ফেরত প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ না করার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি৷ 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপক আব্দুল আলীম বাংলানিউজকে বলেন, আমি কোনো অনিয়ম করিনি। আমাকে চিঠিও দেয়া হয়নি। চিঠি দেয়া হয়েছে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালককে। আমি তো এখন আর ওই পদে নাই। তবে ওই সময় ছিলাম। কিন্তু এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতেও চাই না।

রুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। এতে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেটি তদন্তে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।