ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

কুয়েটের দুই প্রভোষ্টের পদত্যাগের আবেদন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২১
কুয়েটের দুই প্রভোষ্টের পদত্যাগের আবেদন

খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যের কাছে হল প্রভোষ্টের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের আবেদন জমা দিয়েছেন দুই শিক্ষক।

তারা হলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর কল্যাণ কুমার হালদার ও ফজলুল হক হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর মো. হাবিবুর রহমান।

বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ ও তথ্য শাখার মুখপাত্র মো. রবিউল ইসলাম মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে বাংলানিউজকে বলেন, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রেজিষ্ট্রারের দপ্তরে উপাচার্য বরাবর দুই প্রভোষ্ট পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেএখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

এদিকে প্রভোষ্টরা পদত্যাগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ওই পদে সংকটের শঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ প্রফেসর সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর শিক্ষকরা কেউই প্রভোষ্টের দায়িত্ব নিতে চাইছেন না।

প্রফেসর কল্যাণ কুমার হালদার ও প্রফেসর মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ড. সেলিমের মৃত্যুর পর থেকে তারা মানসিক বিপর্যস্তের পাশাপাশি জীবন শঙ্কাও করছেন। হলের পরিবেশও সুষ্ঠু নয়। তাছাড়া পরিবারের সদস্যরাও ঘটনার পর থেকে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। অপর চার হলের প্রভোষ্ট ও সাত হলের সহকারী প্রভোষ্টরা ৫ দফা দাবি পূরণ না হলে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।

প্রফেসর কল্যাণ কুমার হালদার বলেন, ড. সেলিম আমার বন্ধু ছিল। তার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার মৃত্যুর পরের দিনই আমি প্রভোষ্ট পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। এরপর আরও একজন প্রভোষ্ট পদত্যাগ করেছেন।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, কুয়েটের সাতটি হল পরিচালনা নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। হলের ডাইনিং ম্যানেজার নিয়োগ, খেলাধুলা, ফ্লোর মনিটরিং ও ইন্টারনেটসহ আরও কিছু বিষয় থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি হলের সিট বরাদ্দ নিয়ে সংগঠনটির মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। এনিয়ে প্রভোষ্টদের মানসিক চাপে রাখা হয়, যার শিকার ড. সেলিম হোসেন।

প্রভোষ্টরা জানান, তাদের পদত্যাগ-সহকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুরই প্রতিবাদ। তারা শিক্ষক সমিতির দাবির প্রতি সমর্থনে ৫ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ, প্রভোষ্টদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগসহ বিভিন্ন দাবি তোলেন তারা।

রোকেয়া হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর এবিএম মামুন জামাল বলেন, শিক্ষক সেলিম হোসেন সুস্থ ছিলেন। তার চলে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তার মৃত্যুতে আমরা সবালেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার মৃত্যুর পর প্রভোষ্ট এবং সহকারী প্রভোষ্টদের নিয়ে সভা হয়েছে। সেখানে সবাই শিক্ষক সমিতির ৫ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এরই মধ্যে দুইজন প্রভোষ্ট পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যরা সাত দিনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। যদিও এ পর্যন্ত ৯ জন ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। এছাড়া ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি কাজ করছেন। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) তদন্ত কমিটি আমাকে ডেকেছিল। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে কথা শুনেছেন।

তদন্ত কমিটি ভালো কাজ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রভোষ্টদের দেওয়া সাতদিন মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে। এখন আবারও সভা করার কথা রয়েছে। সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

কুয়েটের সাত হলের মধ্যে প্রফেসর সেলিম হোসেন লালন শাহ হলের প্রভোষ্টের দায়িত্বে ছিলেন।

কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালক অধ্যাপক ইসমাঈল সাইফুল্লাহ বলেন, গত বুধবার (১ ডিসেম্বর) প্রভোষ্টদের নিয়ে সভা হয়েছিল। সেখানে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয়। যা রেজুলেশন আকারে তৈরির প্রস্তুতি চলছে। সভায় দুয়েক জন প্রভোষ্ট পদত্যাগের বিষয় তুললে তাদের জানানো হয় কেউ পদত্যাগ করতে চাইলে ব্যক্তিগতভাবে জমা দিতে। শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চলছে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর (মঙ্গলবার) বেলা ৩টায় মারা যান কুয়েট শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন (৩৮)। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) পদে নিজের লোককে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ড. সেলিমকে চাপ দেন কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান। ঘটনার দিন দাপ্তরিক কক্ষে সাদমান নাহিয়ান ও তার অনুগতদের অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতনেরও শিকার হন ড. সেলিম।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সাদমান নাহিয়ান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রায় আধঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের জন্য বাসায় যান। দুপুর ২টার দিকে স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ ছাত্রের নামে জেরা, অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনে ড. সেলিমের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় দুই দফা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কুয়েট প্রশাসন। আর

দোষীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারসহ ৫ দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। পাশপাশি প্রতিবাদ সমাবেশ করে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষকরা।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে  বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধসহ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর ৭টি আবাসিক হলে থাকা প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী হল ছাড়েন।

আর ড. সেলিম হোসেনের 'অস্বাভাবিক' মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার (৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২১
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।